রাজশাহীতে যুবলীগের দুপক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় ৪ জিডি, আসামী ৭১

প্রকাশিত: নভেম্বর ১২, ২০২৩; সময়: ৭:২০ অপরাহ্ণ |
রাজশাহীতে যুবলীগের দুপক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় ৪ জিডি, আসামী ৭১

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহী মহানগর যুবলীগের দুপক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনায় ৭১ জনের বিরুদ্ধে চারটি সাধারণ ডায়রি (জিডি) করা হয়েছে। শনিবার বোয়ালিয়া মডেল থানায় দুপক্ষের চারটি জিডি দায়ের করা হয়।

মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশী মাজেদুল আলম শিবলী, সভাপতি পদ প্রত্যাশী তৈারিদ আল মাসুদ রনির সমর্থক মিঠুন শেখ, নাঈম করিব ও মো. শুভ এই জিডি দায়ের করেছেন। এতে মারপিট ও প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ এনেছেন তারা।

বোয়ালিয়া মডেল থানার ওসি সোহরাওয়ার্দী হোসেন বলেন, মাজেদুল আলম শিবলী তার দায়ের করা জিডিতে তৈারিদ আল মাসুদ রনিসহ পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে ৫৫ জনকে আসামী করেছেন। বাকি ৫০ জন আসামী অজ্ঞাত। আর অপর তিন জিডিতে মাজেদুল আলম শিবলীসহ চারজনের নাম উল্লেখ করে ১৬ জনকে আসামী করা হয়েছে।

ওসি বলেন, যুবলীগের নেতাকর্মীরা পৃথকভাবে চারটি জিডি করেছেন। সেগুলো তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্ত শেষে পরবর্তি আইনী পদক্ষের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

যুবলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্‌যাপনে বিশৃঙ্খলা এড়াতে আগের দিন শুক্রবার রাতে তিন পক্ষের নেতাদের একসঙ্গে বসিয়ে সময় ভাগ করে দেন মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা। এরপর ওই শান্তি বৈঠক থেকে বের হওয়ার সময় রাত সাড়ে ১০টার দিকে দুই পক্ষের মধ্যে হট্টগোল, হাতাহাতি ও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। শনিবার যার কয়েকটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

ভাইরাল হওয়া সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, নগরের রানীবাজারের দলীয় কার্যালয়ে শান্তি বৈঠক শেষে একে একে বের হয়ে আসে তিন পক্ষ। বের হওয়ার সময় এক পক্ষকে ভবনের সিঁড়ির সামনে জলটলা করতে দেখা যায়। আরেক পক্ষ বের হলে তাদের মধ্যে কথাকাটাকাটি ও হট্টগোল শুরু হয়। এক পর্যায়ে তারা হাতাহাতি ও সংর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে দুজন সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী কিল-ঘুষির শিকার হন। পরে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

তিন পক্ষের মধ্যে এক পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছেন মহানগর যুবলীগের আগের কমিটির প্রচার সম্পাদক মাজেদুল আলম শিবলী। তিনি এবার সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী। তার সঙ্গে সভাপতি পদপ্রার্থী হিসেবে আছেন আমিনুর রহমান। তিনি আগের কমিটির সহসভাপতি ছিলেন। একই পক্ষে আছেন সাবেক সভাপতি রমজান আলীর ছেলে রায়হানুর রহমান। তিনিও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী।

আরেক পক্ষে আছেন সভাপতি পদপ্রার্থী তৌরিদ আল মাসুদ। তিনি আগের কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তার সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হিসেবে আছেন সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মুকুল শেখ।

আরেক পক্ষে আছেন সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী নাহিদ আক্তার। তিনি ২০১৬ সালের আগে মহানগর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। এবার তিনি সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী।

ভাগ করে দেওয়া সময় অনুযায়ী মাজেদুল আলম পক্ষের লোকজন শনিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত কুমারপাড়ার দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে আনন্দ শোভাযাত্রা করেন।

বেলা ১১টা থেকে আরেক পক্ষের কর্মসূচি থাকায় তারা রানীবাজারে মেয়রের কার্যালয়ের নিচে কেক কাটেন। এরপর তৌরিদ আল মাসুদ পক্ষের সমর্থকেরা আনন্দ শোভাযাত্রা করেন। আর বিকেলে নাহিদ আক্তারের সমর্থকেরা নগরের ডিঙ্গাডোবা এলাকা থেকে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা বের করেন।

সাত বছর পর দেড় মাস আগে মহানগর যুবলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু এখনো কমিটি ঘোষণা করা হয়নি। এ অবস্থায় দলটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনে বিশৃঙ্খলা এড়াতে নগরের রানীবাজারে তিন পক্ষকে নিয়ে শান্তি বৈঠক করেন মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা।

নেতারা রাতে রানীবাজারে একসঙ্গে কর্মসূচি পালন করতে বললেও কোনো পক্ষই রাজি হয়নি। পরে তাদের সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। সেখান থেকে বের হওয়ার সময়ই তাদের মধ্যে হট্টগোল ও হাতাহাতি শুরু হয়। দুজন সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী কিল-ঘুষির শিকার হন। পরে সেটি ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়।

মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহসানুল হক বলেন, সামনে নির্বাচন। এ সময়ে যুবলীগের কর্মসূচি তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে হয়েছে। এটা ভালো নয়। দ্রুত কমিটি ঘোষণা হওয়া দরকার।

হাতাহাতির বিষয়ে বলেন, তেমন কিছু হয়নি। আমরা বসে সেটি মিমাংসা করে দিব।

দীর্ঘ সাত বছর পর গত ২৬ সেপ্টেম্বর রাজশাহী জেলা ও মহানগর যুবলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। নগরের পাঠানপাড়া এলাকায় পদ্মা নদীর ধারে সড়কে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ। এবার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে ২৮টি জীবনবৃত্তান্ত জমা পড়েছে। এর মধ্যে সভাপতি পদে ১০টি, সাধারণ সম্পাদক পদে ১৮টি আবেদন জমা পড়ে।

পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে