হেমন্ত কুমারীর রাজ প্রাসাদ
আফসানা সেতু : পুঠিয়া রাজবাড়ী বা পাঁচআনি জমিদারবাড়ী হচ্ছে মহারানী হেমন্তকুমারী দেবীর বাসভবন।পুঠিয়া রাজবংশ মুঘল সম্রাট আকবর এর সময় (১৫৫৬-১৬০৫) প্রতিষ্ঠিত হয়। হেমন্ত কুমারীর পায়ের ছাপ যেন লেগে আছে রাজবাড়ীতে।
মহারাণী হেমন্তকুমারী দেবীর বাসভবন। যা বর্তমানে পুঠিয়া রাজবাড়ী নামে পরিচিত। রাজশাহী শহর থেকে ৩২ কি.মি. উত্তর-পূর্বে নাটোর মহাসড়ক অভিমুখে বাঘা-পুঠিয়া জেলা সড়কের পাশে অবস্থিত এই রাজবাড়ী।
১৮৯৫ সালে মহারাণী হেমন্তকুমারী দেবী আকর্ষনীয় ইন্দো ইউরোপীয় স্থাপত্যরীতিতে আয়তাকার দ্বিতল এই রাজবাড়ীটি নির্মাণ করেন।
ঐতিহ্যের এই রাজবাড়ীতে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের উদ্যোগে চালু হয়েছে জাদুঘর। ২০২১ সালে চালু হওয়া জাদুঘরটি ইতিমধ্যেই দর্শনার্থীদের পদচারণায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে প্রাচীন ইতিহাস ও সভ্যতার এ জায়গাটি।
রাজবাড়ীতে জাদুঘর চালুর দীর্ঘ দিনের দাবি ছিলো স্থানীয়দের। আর সেই দাবি পূরণ হওয়ায় খুশি এলাকাবাসী।
জানা গেছে, রাজশাহী অঞ্চলের প্রত্নতত্ত্ব নির্দশনের ঐতিহ্যাবাহী স্থান পুঠিয়া রাজবাড়ি। ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মুঘল আমলের প্রাচীন এ স্থাপত্য। দীর্ঘ প্রস্তুতির পর এটি জাদুঘরে পরিণত হয়।
রাজবাড়ির পরিবেষ্টিত পরিখাগুলোর রয়েছে আলাদা আলাদা নাম। শিব সরবর বা শিবসাগর, মরা চৌকি, বেকি চৌকি, গোপাল চৌকি ও গোবিন্দ সরোবর পরীক্ষা ছাড়াও রাজবাড়িতে শ্যামসাগর নামে একটি বিশাল পুকুর আছে। দুটি প্রসাদ ও জমিরদারের নির্মিত বেশ কয়েকটি মন্দির এখনো এখানে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে ।এদের মধ্যে অন্যতম পদ্ধতিতে নির্মিত আহ্নিক মন্দির ১৮২৩ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত বড় শিব মন্দির বা ভুবনেশ্বর মন্দির। চার তলা বিশিষ্ট পুঠিয়া দোলমন্দির। পুঠিয়া পাঁচআনি জমিদার বাড়ির প্রাঙ্গনে অবস্থিত গোবিন্দ মন্দির।
রাজবাড়ী শিব মন্দির
চারিদিকে মনোরম দৃশ্য যেন পর্যটকদের ক্লান্তি দূর করে। সকাল থেকেই দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে প্রাচীন ইতিহাস ও সভ্যতার এ জায়গাটি। পুঠিয়া রাজবাড়ি জাদুঘর গ্রীষ্মকালে সকাল ১০ থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খোলা থাকছে।
শীতকালীন সময়ে সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পরিদর্শন করতে পারবেন দর্শনার্থীরা। তবে সাপ্তাহিক ছুটি রোববার সারাদিন এবং সোমবার অর্ধ দিবস এটি বন্ধ থাকে। আর এখানে প্রবেশ মূল্য রাখা হয়েছে দর্শনার্থীদের জন্য ২০ টাকা, শিক্ষার্থীদের জন্য ৫ টাকা, বিদেশি সার্কভুক্ত দেশের নাগরিকদের জন্য একশত টাকা এবং অন্যান্য বিদেশিদের জন্য দুইশত টাকা।
জাদুঘরটি ঘুরতে এসেছিলেন দর্শনার্থী আদিবা রহমান। তিনি বলেন, আমি এখানে প্রায়ই আসি বন্ধুদের সাথে ঘুরতে। এখানকার প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো আমার কাছে খুব ভালো লাগে। এমন আরো অনেক নিদর্শন ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এই রাজবাড়ির আশেপাশে। এগুলোকে ঠিকভাবে সংরক্ষণ করা হলে দর্শনার্থীদের আনাগোনা আরও বাড়বে বলে আমি মনে করি।
রাজবাড়ি ইতিহাস ও ঐতিহ্যগতভাবে অনেক আগে থেকে সমৃদ্ধশালী ছিল। ২০১৭ সাল থেকে পরিকল্পনা এটিকে যাদুঘরে রূপান্তর করা। করোনা পরিস্থিতির কারণে তা স্থগিত ছিল। অবশেষে ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে এটি চালু হয়েছে। এছাড়াও দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত করা এই যাদুঘর। উন্মুক্ত করার পর থেকেই দর্শনার্থীর সমাগম দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে। শুধু এলাকাবাসী ও স্থানীয়রাই নয়, বাইরে থেকে প্রচুর পর্যটক এই জাদুঘর দেখতে আসছে প্রতিনিয়িত।