বাঘায় লিখন হত্যার ঘটনায় ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা
নিজস্ব প্রতিবেদক, বাঘা : শান্তনা দেবার ভাষা হারিয়ে শোকে কাতর পুরো গ্রামের মানুষ। উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে শোকে স্তব্ধ পরিবারটি। বুধবার (১৫-১১-২০২৩) ময়না তদন্ত শেষে বিকেল সাড়ে ৪টায় নিহত তরুণের মরদেহ তার নানার বাড়িতে আনা হয়। সেখানে একনজর দেখার জন্য ভিড় জমান গ্রামের মানুষ। জানাযার নামাজ শেষে এলাকার কবরস্থানে মরদেহ দাফন করা হয়।
আগেরদিন মঙ্গলবার পদ্মা নদীর জলাশয়ে মাছ চাষকে কেন্দ্র করে মেহেদী হাসান লিখনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ সময় তাঁর সঙ্গে থাকা শামীম হোসেনকেও আহত করে প্রতিপক্ষ। এ ঘটনায় নিহতের পিতা পিতা সাদেক আলী বাদি হয়ে ৫ জনকে আসামি করে বাঘা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় আসামি করা হয়েছে- পাকুড়িয়া ইউনিয়নের কিশোরপুর গ্রামের হুমায়ুন কবির ওরফে নাফিজ, (পিতা এফার উদ্দনি ওরফে বাচ্চু) স্ত্রী রুলি বেগম (স্বামী- হুমায়ুন কবির ওরফে নাফিজ), এফার উদ্দীন ওরফে বাচ্চু (পিতা-আতব আলী), বোরহান সুলতান জজ মিঞা (পিতা-দুলাল মিঞা) ও সেকেন্দার আলীর ছেলে রফিকুল ইসলাম।
জানা গেছে, শামীম হোসেন, মেহেদী হাসান লিখনসহ কয়েক বন্ধু পদ্মা নদীর জলাশয়ে মাছ চাষ করে আসছেন। মঙ্গলবার শামীম ও মেহেদী জলাশয় থেকে ফিরে বন্ধু শামীমের বাড়ির সামনে অবস্থান করছিলেন। এ সময় স্থানীয় নাফিজ হোসেন তাদের দেখে মাছ ছাড়ার জায়গাটি নিজের বলে দাবি করে। শামীম হোসেন তাকে বলেন, যেহেতু আমরা শিক্ষিত বেকার যুবকরা টাকা খরচ করে মাছ ছেড়েছি। জলাশয়ের জায়গাটি যদি আপনার হয়,তাহলে পানি শুকিয়ে গেলে দখলে নিবেন।
এ নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে নাফিজ তার বাবা এফার উদ্দীন ওরফে বাচ্চু ধারালো বাটাল দিয়ে লিখনের শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত করে। তাঁকে রক্ষা করতে গেলে শামীম হোসেনকেও মারধর করা হয়। গুরুতর অবস্থায় তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসক লিখনকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত মেহেদী হাসান পাঁচ বছর পাবনা স্কয়ার কোম্পানিতে নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি কিশোরপুর গ্রামের সাদেক আলী ছেলে। আহত শামীম হোসেন একই গ্রামের আফছার আলীর ছেলে।
এর আগে বোরহান সুলতান জজ মিঞা ও রফিকুল ইসলামের সাথে একই বিষয় নিয়ে বাককিতন্ডা হয়েছিল বলে জানান নিহত লিখনের মা হাসিনা বেগম। যার জের ধরে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকারিদের ফাঁসির দাবি করে বলেন, তার উপার্জক্ষম ছেলেই ছিল পরিবারে এক মাত্র সম্বল। তাদের নিজের কোন জায়গা জমি নাই। ছেলে জমি কিনে বাড়ি করতে চেয়েছিলেন। পরিবার মিলে ছেলের কাছে পাবনাতেই থাকেন।
তিনি জানান,৩দিন আগে ছুটি নিয়ে জলাশয়ে চাষ করা মাছ দেখতে নিজ গ্রামের বাড়িতে এসেছিল। মঙ্গলবার বিকেলে তার চাকুরিতে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। পাকুড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান মেরাজুল ইসলাম মেরাজ বলেন, উপার্জক্ষম, ছেলেকে হারিয়ে নিঃস্ব হলো পরিবারটি।
পরিবারকে শান্তনা দেওয়ার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। বাঘা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সবুজ রানা জানান, হত্যা মামলা হয়েছে। পলাতক আসামীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।