অস্ট্রেলিয়ার জন্য গর্ত খুঁড়ে সেই গর্তেই পড়লো ভারত
পদ্মাটাইমস ডেস্ক : ১৯৯৬ বিশ্বকাপের ফাইনালের আগে রাতে শিশির পড়ে দেখে সেবার টস জিতেও পরে ব্যাটিং নিয়েছিলেন শ্রীলংকার অধিনায়ক অর্জুনা রানাতুঙ্গা।
অথচ তখন উপমহাদেশে বলতে গেলে অলিখিত নিয়মই ছিল- টস জিতলে ব্যাটিংই নেওয়া হবে! কিন্তু রানাতুঙ্গা সেবার উল্টোটা করলেন, শ্রীলংকা অবিশ্বাস্যভাবে জিতে গেল বিশ্বকাপ।
আহমেদাবাদে আজ কামিন্সও একই কাজ করলেন। রাতে শিশির পড়ে, তাতে ব্যাটিংয়ে সুবিধা। দিনের বেলায় যে পিচ শুকনো দেখাচ্ছিল, সেখানে টস জিতেও অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক ভারতকে ব্যাটিংয়ে পাঠানোর কারণ তো এটিই।
সেমিফাইনালের জন্য ভারত শেষ মুহূর্তে পিচ বদলেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। দলটার নাম ভারত আর টুর্নামেন্টটা ভারতেই বলে ফাইনালের আগেও তেমন আলোচনা উঠেছিল।
পিচ ভারতের পছন্দমতো বানানো হচ্ছে কিনা- এ নিয়ে গুঞ্জনের শেষ ছিল না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভারতের উইকেটে বাজিমাত অস্ট্রেলিয়ার। ভারতের উইকেট আর কন্ডিশন যেন ভারতের চেয়েও ভালো পড়ল অস্ট্রেলিয়াই।
অস্ট্রেলিয়া আগে বোলিং করল, ভারত রোহিত শর্মার সৌজন্যে শুরুটা ভালো পেলেও এরপর শুকনো উইকেটে ভাঙন ধরল। ভারতের জন্য রান তোলা কঠিন হয়ে গেল।
প্রথম দশ ওভারে ১২টি বাউন্ডারি পেয়েছে ভারত, সেখানে শেষ ৪০ ওভারে বাউন্ডারি পেল মাত্র ৪টি – চারটি! অবিশ্বাস্য। শুধু পিচের কথা বললে অস্ট্রেলিয়ানদের অবদানকে খাটো করে দেখানো হয়।
শুরু থেকে বোলাররা দারুণ নিয়ন্ত্রণ রেখেছেন। ফিল্ডাররা যেন জানপ্রাণ দিয়ে ঝাঁপিয়েছেন মাঠে। পিচ ধীরগতির বলে কামিন্সও দুর্বোধ্য স্লোয়ারে বিষিয়ে তুললেন ভারতের ব্যাটসম্যানদের সময়টাকে। স্টার্কের রিভার্স সুইং উইকেট তুলে নিয়েছে।
শেষ পর্যন্ত ভারত ২৪০ রান তুলেছে, তখনো অস্ট্রেলিয়ার জন্য কাজটা সহজ হবে না বলে মনে হচ্ছিল। প্রথম সাত ওভারে বুমরা-শামিদের বিষাক্ত সুইংয়ে অস্ট্রেলিয়ার রান ৫০ পেরোনোর আগেই ৩ উইকেট চলে গেল। তখনো মনে হয়নি, অস্ট্রেলিয়া আগে বোলিং নিয়ে ঠিক করেছে।
কিন্তু এরপর যত সময় গড়াল, মাঠে কুয়াশার প্রভাব বাড়ল, ভারতের বোলারদের বিষ ধুয়ে গেল! বোঝা গেল, অস্ট্রেলিয়াই কন্ডিশনটা ভালো পড়েছে। ট্রাভিস হেড আর মারনাস লাবুশেনের ব্যাটিং শেষ পর্যন্ত জিতিয়েই দিল অস্ট্রেলিয়াকে।
ম্যাচ শেষে উদ্বেলিত অস্ট্রেলিয়ানদের কণ্ঠেও থাকল উইকেট পড়তে পারার তৃপ্তি। অসাধারণ সেঞ্চুরিতে ম্যাচসেরা ট্রাভিস হেডই বললেন, ‘প্রথমে বোলিং করার সিদ্ধান্তটা দারুণ ছিল।
ম্যাচ যত এগিয়েছে, পিচ ব্যাটিংয়ের জন্য আরও সহজ হয়েছে।’ এমনকি অস্ট্রেলিয়ার চতুর্থ উইকেটে হেডের সঙ্গে ১৯২ রানের জুটির সঙ্গী মারনাস লাবুশেন যখন ব্যক্তিগত তৃপ্তির কথা বলছিলেন, তখনো বোঝা গেল অস্ট্রেলিয়ার পরিকল্পনার খুঁটিনাটির কথা, ‘ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না।
অনেকবার মনে হয়েছে আমি হয়তো দলে থাকব না। এমনকি গত রাতেও ১০টা ১০ মিনিটের সময়ও দল ঘোষণা হয়নি। কোচরা তখনো মাঠে গিয়েছিলেন। আমি ভাবছিলাম, হয়তো মাঠে কুয়াশা থাকবে, নয়তো আমি বাদ পড়ব। ‘
তবে ভারতের উইকেটে ভারতই যে ধরা পড়েছে, সে ব্যাখ্যা অস্ট্রেলিয়ানদের মধ্যে একেবারে পরিষ্কারভাবে উঠে এল অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি অধিনায়ক রিকি পন্টিংয়ের বিশ্লেষণে, সত্যি বলতে ভারত যেভাবে উইকেট বানিয়েছে, সেটা তাদের জন্যই ক্ষতির কারণ হয়ে এসেছে।