প্রতিবন্ধীর প্রতি নবিজির ভালোবাসা

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৯, ২০২৩; সময়: ১০:২২ পূর্বাহ্ণ |
খবর > ধর্ম
প্রতিবন্ধীর প্রতি নবিজির ভালোবাসা

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : ইসলাম, প্রতিবন্ধী ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন জনগোষ্ঠীর মর্যাদা ও অধিকার সংরক্ষণ করেছে। ইসলামি শরিয়ার মাধ্যমে তারা পেয়েছেন যাবতীয় বিষয়ে তাদের ন্যায্য অধিকার, মর্যাদা ও সম্মান। রাসূল (সা.) তাদের ভালোবেসে কাছে টেনেছেন, তাদের প্রতিভার মূল্যায়ন করেছেন, তাদের যাবতীয় প্রয়োজন পূরণের কার্যকর নীতি ও কৌশল বর্ণনা করেছেন।

মুসআব ইবনে সা’দ (রা.)-থেকে বর্ণিত, সা’দ বিন আবী ওয়াক্কাস (রা.)-এর ধারণা ছিল, দুর্বল লোকদের ওপর বুঝি তার মতো সবল লোকদের শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে। এ কথা জানতে পেরে নবি (সা.) বললেন, তোমাদের যে সাহায্য করা হয় এবং যে জীবিকা প্রদান করা হয়, তা তো তোমাদের দুর্বল লোকদের অছিলায়। ইমাম নাসায়ী (র.)-এর ভাষায় মুসআব ইবনে সা’দ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, নিশ্চয় আল্লাহ এ উম্মতকে তাদের দুর্বল লোকদের দোয়া, সালাত ও ইখলাসের অছিলায় সাহায্য করেন।

মুহাল্লাব (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) ওই কথার মাধ্যমে সা’দ (রা.)কে বিনয়ী হতে এবং অন্তরকে অহমিকা থেকে পবিত্র করতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। আর তাকে এ কথা বুঝিয়ে দিয়েছেন, দুর্বল লোকদের দোয়া, বরকতেই তাদের সাহায্য করা হয় এবং তাদের রিজিকের ব্যবস্থা করা হয়। সাধারণত তাদের অন্তর দুনিয়ার চাকচিক্য, সৌন্দর্য ও আল্লাহর স্মরণ থেকে উদাসীনকারী উপকরণ থেকে মুক্ত হয়, তাদের দোয়া ও ইবাদতে একনিষ্ঠতা, সবলদের তুলনায় বেশি থাকে এবং তারা ইবাদাতে বেশি বিনয়ী ও মনোযোগী হয়, তাই তাদের ইবাদত আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয় এবং তাদের দোয়া বেশি কবুল হয়।

সাইয়িদুনা আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেন, অনেক এলোকেশী ব্যক্তি রয়েছে, যাদের দরজা থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়, অথচ তারা যদি আল্লাহর নামে কসম করে কোনো কথা বলে, তাহলে আল্লাহ তা পূর্ণ করে দেন। অর্থাৎ আল্লাহর বহু প্রিয় বান্দা এমন রয়েছেন যাদের আর্থিক বা শারীরিক দুর্বলতার দরুন তাদের চুল এলোমেলো। অপর এক বর্ণনা মতে, যাদের গায়ে ধুলোবালি লেগে থাকে।

মানুষের দরজার সামনে এসে অনুমতি চাইলে তাদের অনুমতি না দিয়ে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। আল্লাহর কাছে তাদের মর্যাদা এত বেশি, যদি তারা আল্লাহর নামে কসম করে বলে, এমনটি হবে; তাহলে আল্লাহ তার কসম পূর্ণ করেন এবং তার সে কথাকে সত্যি করে দেখান। কারণ, আল্লাহর কাছে প্রিয় হওয়ার একান্ত মাধ্যম হচ্ছে, তাকওয়া বা আল্লাহভীতি। সুঠাম দেহ বা সুস্বাস্থ্য আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যম নয়। নবি (সা.) প্রতিবন্ধী ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষের সামর্থ্য বিবেচনা করে, এর যথাযথ মূল্যায়ন করেছেন। তাই তো অন্ধ সাহাবি আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতূম (রা.)কে মসজিদে নব্বির মুয়াজ্জিন নিযুক্ত করেছেন।

আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইবনে মাকতূম (রা.) যিনি অন্ধ ছিলেন, রাসূল (সা.)-এর সময়ে আজান দিতেন। অপর এক বর্ণনায় এসেছে নবি (সা.) বলেন, যখন বেলাল রাতে আজান দেয় তখন তোমরা পানাহার কর (সেহরি খাও), যতক্ষণ পর্যন্ত না ইবনে উম্মে মাকতূম (ফজরের নামাজের) আজান দেয়। আজান ইসলামের একটি প্রতীক। একজন অন্ধ সাহাবিকে আজানের দায়িত্বশীল বানানো প্রমাণ করে, রাসূল (সা.) প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সামর্থ্যকে কত বেশি মূল্যায়ন করেছেন। রাসূল (সা.) প্রতিবন্ধীদের আহ্বানে সাড়া দিতে সামান্য কুণ্ঠাবোধ করেননি।

সাধ্যের সবটুকু দিয়ে তিনি তাদের প্রয়োজন পূরণ করেছেন। ইতবান বিন মালেক (রা.) বর্ণনা করেন, তিনি একদিন রাসূল (সা.)-এর কাছে এসে বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! আমার দৃষ্টিশক্তি দুর্বল হয়ে পড়েছে। আমি স্বীয় গোত্রের নামাজের ইমাম। যখন প্রবল বৃষ্টিপাত হয়, আমার বাড়ি ও মসজিদের মধ্যকার উপত্যকা প্লাবিত হয়ে যায়। তখন আমি মসজিদে উপস্থিত হয়ে মুসল্লিদের নিয়ে জামাতে নামাজ পড়াতে পারি না।

তাই মনস্থ করেছি, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি যদি আমার বাড়িতে উপস্থিত হয়ে আমার ঘরে নামাজ পড়তেন, তাহলে সে ঘরকে আমি নামাজের জায়গা হিসাবে গ্রহণ করতাম। রাসূল (সা.) বললেন : ইনশাআল্লাহ, শিগ্গির আমি এমনটি করব। ইতবান (রা.) বর্ণনা করেন, একদিন দুপুরে রাসূল (সা.) ও আবু বকর আমার বাড়িতে আগমন করলেন। রাসূল (সা.) ভেতরে প্রবেশের অনুমতি চাইলেন। আমি অনুমতি দিলাম। তিনি না বসে সরাসরি নামাজের ঘরে যেতে চাইলেন। তিনি (সা.) বললেন, তোমার ঘরের কোন জায়গার আমি নামাজ পড়ব বলে মনস্থ করেছ? আমি তখন ঘরের একটি কোণের দিকে ইশারা করলাম। রাসূল (সা.) সেখানে দাঁড়িয়ে তাকবির বললেন। আমরা তার পেছনে দাঁড়িয়ে কাতার করলাম। তিনি (সা.) দুই রাকাত নামাজ পড়ে সালাম ফিরালেন।

হাদিসের আলোকে প্রতীয়মান হয়, একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীর ডাকে সাড়া দিতে নিজে তার বাড়িতে গিয়েছেন, শুধু তাই নয়, আবু বকর (রা.)কেও সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছেন। এ ছাড়া মুসলিম শরিফের এক বর্ণনায় এসেছে, আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, মদিনায় এক মহিলা ছিল, যে ছিল বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী। একদিন সে রাসূল (সা.)-এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার সঙ্গে আমার একটি জরুরি কথা আছে। রাসূল (সা.) তাকে বললেন, হে অমুকের মা! তুমি যে রাস্তায় ইচ্ছা, আমাকে বল, আমি তোমার প্রয়োজন পূর্ণ করব। তখন সে নবি (সা.)কে একটি রাস্তায় নিয়ে গেল এবং তার প্রয়োজনীয় কথা সেরে নিল।

হাদিসের আলোকে প্রতীয়মান হয়, নবি (সা.) একজন বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীর প্রয়োজনে সাড়া দিতে নিজ আসন ছেড়ে রাস্তায় চলে গিয়েছেন, প্রয়োজন পূরণ করেই কেবল ফিরেছেন। রাসূল (সা.) বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন লোকদের তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী গুরুদায়িত্ব প্রদান করেছেন। কাওকে গোত্রের প্রধান নিযুক্ত করেছেন, আবার কাওকে নামাজের ইমামতির মতো গুরু দায়িত্ব প্রদান করেছেন। এসব কিছু নবি (সা.)-এর মহৎ হৃদয় ও উদার মানসিকতার পরিচয় বহন করে।

পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে