কুরআনের যে তথ্য না জানলে নয়
মো: লোকমান হেকিম : পবিত্র মহাগ্রন্থ আল কুরআনে সর্ব মোট ১১৪টি সূরা রয়েছে। প্রথম খেলাফত যুগে, হজরত যায়েদ ইবনে সাবিত (রা.) কর্তৃক এ সংখ্যা নির্ণীত হয়। কোনো কোনো সূরার আয়াত সংখ্যা স্বয়ং হুজুর (সা.) থেকে বর্ণিত পাওয়া যায়। যেমন-সূরা ফাতেহা সম্পর্কে নবি (সা.) ৭ আয়াতের কথা উল্লেখ করেছেন।
এমনিভাবে সূরা মুলক সম্পর্কে ৩০ আয়াতের কথা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। আল কুরআনের তারতিব প্রসঙ্গে এ বর্ণনা পাওয়া যায়, জিবরাইল (আ.) নবি (সা.)-কে বলেছেন, অমুক আয়াতটি সূরা বাকারার ২৮০ নম্বর আয়াতের পর লিপিবদ্ধ করুন। অন্য এক রেওয়াতে নবি (সা.)কে সূরা কাহাফের প্রথম ১০টি আয়াত তেলাওয়াত করার ফজিলত বর্ণনা করেছেন।
এ ধরনের আরও কিছু বর্ণনা পাওয়া যায় কিন্তু সামগ্রিকভাবে হুজুর (সা.)-এর যুগে কুরআনের সূরা ও আয়াতের গণনা বা সংখ্যা নির্ধারণ সম্পর্কিত কোনো রেওয়াত পাওয়া যায় না। এমনিভাবে হজরত আবুবকর (রা.)-এর যুগে কুরআনের আয়াতের পরিসংখ্যান করা হয়েছে এমন কোনো বর্ণনাও পাওয়া যায় না।
সম্ভবত আয়াতের পরিসংখ্যার কার্যক্রম প্রথম হজরত ওমর (রা.)-এর যুগেই হয়েছে। কেননা এ কথা বিভিন্ন রেওয়াতে পাওয়া যায়, হজরত ওমর (রা.) তারাবিহর নামাজের প্রতি রাকাতে ৩০ আয়াত করে তেলায়াত করার হুকুম জারি করেছিলেন। অন্যান্য সাহাবায়ে কেরাম (রা.)-এর মধ্যে হজরত ওসমান, হজরত আলী, হজরত আব্দুলাহ ইবনে মাসউদ, হজরত আনাস, হজরত আবু দারদা, হজরত আব্দুলাহ ইবনে আব্বাস, হজরত আব্দুলাহ ইবনে ওমর ও হজরত আয়শা (রা.) কুরআনের আয়াত নির্ণয় করেছেন।
নির্ণীত আয়াতের সংখ্যার মধ্যে বেশ কিছু প্রভেদ দেখতে পাওয়া যায়। এর কারণ হচ্ছে অনেক আয়াতে হুজুর (সা.) কখনো ওয়াকফ করেছেন, আবার তেলাওয়াত করেছেন। এমতাবস্থায় কেউ কেউ প্রথম অবস্থার দিকে দৃষ্টি রেখে এর সংখ্যা নির্ণয় করেছেন। ফলে মোট সংখ্যায় গিয়ে পার্থক্য দেখা দিয়েছে।
আয়াতের সংখ্যা
হজরত আয়েশা (রা.)-এর গণনায় ৬৬৬৬টি, হজরত ওসমান (রা.)-এর গণনায় ৬২৫০টি, হজরত আলী (রা.)-এর গণনায়-৬২৩৬টি, হজরত মাসউদ (রা.)-এর গণনায়-৬২১৮টি, মাক্কি গণনায়-৬১১২টি, ইরাকি গণনায়-৬২১৪টি, বসরা গণনায়-৬২২৬টি, ইসমাইল ইবনে হাফর মদনীর গণনায়-৬২১৪টি। তবে সাধারণভাবে কুরআনে সর্বমোট আয়াত সংখ্যা-৬৬৬৬টি, ইসমাইল ইবনে হাফর মদনীর গণনায়-৬২১৪টি। সাধারণভাবে কুরআনে সর্বমোট আয়াত সংখ্যা-৬৬৬৬টি প্রসিদ্ধ লাভ করেছে তবে এটি যে নির্ভুল নয় এ ব্যাপারে অধিকাংশ কুরআন গবেষকই মতামত প্রকাশ করেছেন।
বিষয়বস্তুর ভিত্তিতে আয়াত সংখ্যা
ওয়াদার আয়াত-১০০০, ভীতি প্রদর্শন আয়াত-১০০০, নিষেধাজ্ঞাসংবলিত আয়াত-১০০০, আদেশ সূচক আয়াত-১০০০, উদাহরণসংবলিত আয়াত-১০০০; ঘটনাসংবলিত আয়াত-১০০০, হালালসংবলিত আয়াত-২৫০, হারামসংবলিত আয়াত-২৫০, তাসবিহসংবলিত আয়াত-১০০ এবং বিবিধ আয়াত-৬৬টি।
হরফ সংখ্যা
সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) কুরআনের অক্ষর গণনা করেছেন। তার নির্গত অক্ষর সংখ্যা-৩,২২,৬৭১। তাবেয়িদের মধ্যে হজরত মুজাহেদ (রা.)-এর গণনা অনুযায়ী কুরআনের অক্ষর সংখ্যা ৩,২১,১২১। তবে সাধারণভাবে ৩,২১,২৬৭ সংখ্যাটি প্রসিদ্ধ লাভ করেছে।
পৃথকভাবে প্রত্যেক হরফ বা অক্ষরের সংখ্যা
আলিফ ৪৮৮৭৬, বা ১১৪২৮, তা ১১০৯৫, ছা ১২৭৬, জিম ৩২৭৩, হা (হুত্বি) ৩৭৯৩, খা ২৪১৬, দাল ৫৬০২, যাল ৪৬৭৭, রা-১১৭৯৩, ঝা-১৫৯০, সিন-৪৮৯১, শিন-২২৫৩, ছোয়াদ-২০১২, জ্বোয়াদ-১২০৭, তোয়া-১২৭৭, যোয়া-৮৪২, আইন-৯২২০, গাইন-২২০৮, ফা-৮৪৯৯, ক্বাফ-৬৮১৩, কাফ-৯৫০০, লাম-৩০৪৩২, মিম-৩৬৫৬০, নুন-৪৫১৯০, ওয়াও-২৫৫৩৬, হা-(হাওয়াজ)-৯০৭০, ইয়া-৪৫৯১৯।
কুরআনের শব্দ সংখ্যা
সাহাবায়ে কিরাম সম্ভবত কুরআনের শব্দ সংখ্যাও নির্ণয় করে থাকবেন। কেননা, যে ক্ষেত্রে তারা অক্ষর সংখ্যা নির্ণয় করেছেন সেক্ষেত্রে শব্দ সংখ্যা নির্ণয় করা স্বাভাবিক। কিন্তু এ সম্পর্কে সরাসরি সাহাবায়ে কিরামের সঙ্গে সম্পৃক্ত বর্ণনা পাওয়া যায় না। যা কিছু পাওয়া যায়, সবই তাবেইনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। নিম্নে তাবেইনের নামসহ কুরআনের শব্দ সংখ্যা উল্লেখ করা হলো : হুয়াযিদ আরাজের গণনা অনুযায়ী ৭৬৪৩০ আব্দুল আজীজ ইবনে আব্দুল্লার গণনা অনুযায়ী ৭০৪৩৯, মুজাহিদের গণনা অনুযায়ী ৭৬২৫০, সাধারণভাবে প্রসিদ্ধ লাভ করেছে ৮৬৪৩০।
কুরআনের যের, যবর ও পেশ ইত্যাদি সংখ্যা-
যবর-৫৩২২৩, যের-৩৯৫৮২, পেশ-৮৮০৪, মদ-১৭৭১, তাশদীদ-১২৭৪ ও নুকতা-১০৫৬৮৪।
কুরআনের নামের সংখ্যা
পবিত্র কুরআনেই এর বিভিন্ন নাম উল্লেখ করা হয়েছে, আল্লামা সুয়ুতি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি তার রচিত ‘আল-ইতকান ফি উলুমুল কুরআন’- গ্রন্থে কুরআনের ৫৫টি নামের বর্ণনা করেছেন।