সাহাবিদের প্রতি মুমিনের ভালোবাসা যেমন হবে
পদ্মাটাইমস ডেস্ক : একজন মুসলিম ও মুমিন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবিগণকে আল্লাহর জন্য এবং আল্লাহর ভালোবাসা পাওয়ার জন্য ভালোবাসেন।
তারা বিশ্বাস করেন যে, যারা সাহাবিদেরকে ভালোবাসবেন, তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করবেন, তাদের অধিকার সংরক্ষণ করবেন ও তাদের মর্যাদা সম্পর্কে অবগত হবেন তারাই সফলকামী দলের অন্তর্ভুক্ত হবেন।
বিপরীতে যারা সাহাবিদেরকে অপছন্দ করবেন, তাদেরকে গাল-মন্দ করবেন, শত্রুদের দলে তাদেরকে সম্পৃক্ত করবেন ও তাদের মর্যাদার বিপরীত কিছু বলবেন তারা ধ্বংসপ্রাপ্তদের দলে অন্তর্ভুক্ত হবেন।
এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,
﴿وَٱلَّذِينَ جَآءُو مِنۢ بَعۡدِهِمۡ يَقُولُونَ رَبَّنَا ٱغۡفِرۡ لَنَا وَلِإِخۡوَٰنِنَا ٱلَّذِينَ سَبَقُونَا بِٱلۡإِيمَٰنِ وَلَا تَجۡعَلۡ فِي قُلُوبِنَا غِلّٗا لِّلَّذِينَ ءَامَنُواْ رَبَّنَآ إِنَّكَ رَءُوفٞ رَّحِيمٌ ١٠ ﴾ [الحشر: ١٠]
‘যারা তাদের পরে এসেছে তারা বলে, ‘হে আমাদের রব, আমাদেরকে ও আমাদের ভাই যারা ঈমান নিয়ে আমাদের পূর্বে অতিক্রান্ত হয়েছে তাদেরকে ক্ষমা করুন এবং যারা ঈমান এনেছিল তাদের জন্য আমাদের অন্তরে কোনো বিদ্বেষ রাখবেন না; হে আমাদের রব, নিশ্চয় আপনি দয়াবান, পরম দয়ালু। (সূরা আল-হাশর, আয়াত, ১০)
সহিহ বুখারি ও মুসলিমে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেছেন,
آيَةُ الإِيمَانِ حُبُّ الأَنْصَارِ، وَآيَةُ النِّفَاقِ بُغْضُ الأَنْصَارِ
ঈমানের নিদর্শন হলো আনসারগণকে ভালোবাসা এবং মুনাফিকীর আলামত হলো আনসারদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা। (বুখারি, ৩/৩৯, ৩৭৮৪; মুসলিম, ১/৮৫, ৭৪)
এখানে আনসারদের ভালোবাসার কথা প্রমাণিত হয়েছে, এর মাধ্যমে বুঝা যায়, মুহাজিরদের প্রতি ভালোবাসা আরও অধিক অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত। যেহেতু তারা সর্বদিক বিবেচনায় তাদের (আনসারদের) চেয়ে উত্তম। এছাড়া তারাও আল্লাহকে সাহায্য করেছেন যেমন আনসারগণ করেছেন; সেহেতু তারাও আনসার হিসেবে গণ্য।
কোরআন ও হাদিসে আল্লাহর ওয়াস্তে কাউকে ভালোবাসার যেসব মর্যাদার কথা উল্লেখ আছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণকে ভালোবাসার দ্বারা যে কেউ সেসব মর্যাদার অন্তর্ভুক্ত হবে; যেহেতু তারা সর্বোত্তম মানুষ।
ইমাম ত্বহাবী রহ. বলেছেন, ‘আমরা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণকে ভালোবাসি, তাদের কাউকে ভালোবাসায় আমরা বাড়াবাড়ি করি না, আবার কারও থেকে ভালোবাসা ছিন্নও করি না (সবাইকে ভালোবাসি)।
আমরা তাদের প্রতি শত্রুতা পোষণ করি ও তাদেরকে ঘৃণা করি যারা সাহাবীগণের সাথে শত্রুতা-বিদ্বেষপোষণ করবে এবং তাদেরকে খারাপভাবে উল্লেখ করবে। সাহাবীগণকে ভালোবাসা দীন, ঈমান ও ইহসান। আর তাদেরকে অপছন্দ করা কুফুরী, নিফাকী, পাপ ও অবাধ্যতা।’
ইমাম মালেক রহ. বলেছেন, ‘সালাফ তথা সৎপূর্বসূরীরা তাদের সন্তানদেরকে আবু বকর ও উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমার ভালোবাসা শিক্ষা দিতেন, যেমনিভাবে তারা তাদের সন্তানদেরকে কুরআন শিক্ষা দিতেন।’
আবু নুআইম বিশর ইবন হারিস রহ. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, ‘আমার অন্তরে যে আমলটি সবচেয়ে বেশি মজবুত ও কার্যকর মনে হচ্ছে তা হলো মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণের ভালোবাসা’।
সাহাবিদের মর্যাদা এবং ফজিলত বর্ণিত হয়েছে অসংখ্য হাদিসে। এক হাদিসে আবু সাইদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন ‘তোমরা আমার সাহাবিদের গাল-মন্দ করো না।
কেননা তারা এমন শক্তিশালী ঈমান ও সুউচ্চ মর্যাদার অধিকারী যে, তোমাদের কেউ যদি ওহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণও আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে, তবুও তাদের এক মুদ (৩ ছটাক প্রায়) কিংবা অর্ধমুদ যব খরচের সমান সাওয়াবে পৌঁছুতে পারে না।’ (বুখারি, হাদিস, ৩৩৯৭)
আরেক হাদিসে আব্দুল্লাহ ইবনে মুগাফফাল রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ‘যে আমার সাহাবিদের কষ্ট দিল সে যেন আমাকে কষ্ট দিল, যে আমাকে কষ্ট দিল সে যেন আল্লাহকে কষ্ট দিল; যে আল্লাহকে কষ্ট দিল অচিরেই আল্লাহ তাকে পাকড়াও করবেন’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস, ১৯৬৪১)।