টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই স্বীকৃতি পেতে আবেদন করেছে প্রশাসন
পদ্মাটাইমস ডেস্ক : দেশের প্রাচীন ঐতিহ্য টাঙ্গাইল তাঁত শাড়িকে জিআই (জিওগ্রাফিক্যাল আডেন্টিফিকেশন) স্বত্ব পেতে আবেদন করেছে জেলা প্রশাসন। মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেড মার্কস অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর এ আবেদন করেন জেলা প্রশাসক কায়ছারুল ইসলাম।
এর আগে এদিন বিকেলে জেলা প্রশাসকের নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে টাঙ্গাইল শাড়ির স্বত্ব পাওয়া নিয়ে মত বিনিময় করেন তিনি।
টাঙ্গাইল সদর, দেলদুয়ার, কালিহাতীসহ বেশ কয়েকটি উপজেলায় বংশপরম্পরায় স্বকীয়তা ধরে রেখেছেন টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী তাঁতের শাড়ির লক্ষাধিক শৈল্পিক শিল্পীরা।
সম্প্রতি কয়েকশ বছরের পুরোনো এই টাঙ্গাইল শাড়ি নিজেদের দাবি করে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয় প্রতিবেশী দেশ ভারত। এরপর থেকেই আলোচনা- সমালোচনা শুরু হয় টাঙ্গাইল জেলাসহ দেশব্যাপী। এই নিয়ে জেলায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়।
দেশের প্রাচীন ঐতিহ্য টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়িকে ভারত তাদের নিজস্ব পণ্য দাবি করে ভৌগলিক নিদর্শক পণ্যের স্বত্ব নেওয়ায় ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানানো হয়। দ্রুত ভারতের জিআই স্বীকৃতি বাতিল করে বাংলাদেশের ভৌগলিক পণ্যের তালিকায় টাঙ্গাইল শাড়িকে স্বীকৃতির দাবি ওঠে।
জানা যায়, টাঙ্গাইলের চমচম নিয়ে জিআই পণ্য হিসেবে সম্প্রতি স্বত্ব পেলেও টাঙ্গাইল শাড়ি নিয়ে কোনো আবেদনই করা হয়নি জেলা প্রশাসন থেকে।
ফলে বহু বছরের পুরাতন এই শিল্পটি নিজ দেশের জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায়নি। এতে প্রতিবেশি দেশ ভারত টাঙ্গাইল শাড়ি নিজেদের দাবি করার সুযোগ পায়।
টাঙ্গাইল জেলা তাঁত মালিক সমিতির সভাপতি রঘুনাথ নাথ বসাক জানান, নানা চক্রান্তে মসলিন তার ঐতিহ্য হারালে সনাতন ধর্মের তন্তুবাই বা বসাক আর মুসলিম ধর্মের জোলারা খুঁজতে থাকেন কাপড় তৈরি উৎকৃষ্ট নাতিশীতোষ্ণ বিকল্প অঞ্চল।
তারপর বেছে নেন টাঙ্গাইলের বেশকিছু অঞ্চল। পরবর্তীকালে বসাক ও জোলাদের গর্ত তাঁতে বা পিট লুমে তৈরি সুতি শাড়ি জগৎখ্যাত হয় টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি নামে। যার ইতিহাসও প্রায় আড়াইশ বছর আগের।
জেলা প্রশাসক কায়ছারুল ইসলাম বলেন, টাঙ্গাইল শাড়ি প্রকৃতপক্ষে যে কোনো বিচারে বাংলাদেশের জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য দাবিদার। আমরা বিগত ৩ মাস ধরে টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি লাভের জন্য ডকুমেন্টেশন কার্যক্রম করেছিলাম।
মূলত শাড়িটির ইতিহাস এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মানুষের জীবন জীবিকার তথ্য, আড়াইশ বছরের ইতিহাসের তথ্যাদি সংগ্রহ করে ডকুমেন্টেশন তৈরি করে আবেদন করা হয়েছে। আবেদনটি ইতিমধ্যে গ্রহণ করা হয়েছে। আশা করছি দ্রুতই টাঙ্গাইল শাড়ি নামে জিআই স্বীকৃতি পাব আমরা।
পেটেন্ট শিল্প, নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তরের পরিচালক (পেটেন্ট ও ডিজাইন) মোহাম্মদ রশিদুল মান্নাফ কবীর বলেন, একাধিকবার জেলা প্রশাসনকে টাঙ্গাইল শাড়ি স্বত্ব পাওয়ার জন্য আবেদন করতে বলা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। টাঙ্গাইলের চমচম জিআই স্বীকৃতি পেলেও টাঙ্গাইল শাড়ির জন্য আবেদন পাইনি।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি ভারতের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে করা একটি পোস্টে বলা হয়- ‘টাঙ্গাইল শাড়ি, পশ্চিমবঙ্গ থেকে উদ্ভূত, একটি ঐতিহ্যবাহী হাতে বোনা মাস্টারপিস।
এর মিহি গঠন, বৈচিত্র্যময় রং এবং সূক্ষ্ম জামদানি মোটিফের জন্য বিখ্যাত এটি এই অঞ্চলের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতীক। টাঙ্গাইলের প্রতিটি শাড়ি ঐতিহ্য ও সমৃদ্ধ সৌন্দর্য্যরে মেলবন্ধনে দক্ষ কারুকার্যের নিদর্শন।’
এরপর থেকে দেশে টাঙ্গাইলসহ সারাদেশে ক্ষোভ ও প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সোচ্চার হয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে।