শুল্ক ছাড়েও সুখবর নেই নিত্যপণ্যের দামে!

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২৪; সময়: ১১:২৭ পূর্বাহ্ণ |
শুল্ক ছাড়েও সুখবর নেই নিত্যপণ্যের দামে!

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : সপ্তাহ ব্যবধানে আবারও চড়া রাজধানীর নিত্যপণ্যের বাজার। দাম বেড়েছে শাক-সবজি ও মাছ-মাংসসহ প্রায় সব ধরনের পণ্যেরই। ক্রেতা-বিক্রেতারা বলছেন, অস্থির বাজার নিয়ন্ত্রণে শুধু আমদানি শুল্ক কমালেই চলবে না, এর পাশাপাশি জোরদার করতে হবে তদারকি!

শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) কেরানীগঞ্জের আগানগর, জিনজিরা এবং রাজধানীর নয়াবাজার ও কারওয়ানবাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়।

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে চাল, চিনি, ভোজ্যতেল ও খেজুরের ওপর থেকে আমদানি শুল্ক কমিয়েছে সরকার। বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

তবে শুক্রবার বাজারে এর কোনো প্রভাব দেখা যায়নি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আরও আগেই শুল্ক কমানো উচিত ছিল। এখন কমিয়ে তেমন একটা কাজ হবে না।

আগেই অস্থির রোজার পণ্যের বাজার

রোজার এখনও বাকি প্রায় মাস খানেকের বেশি সময়। এর মধ্যেই বাড়তে শুরু করেছে আটা-ময়দা, ডাল-ছোলা, চিনি, ভোজ্যতেল ও খেজুরের দাম। দাম নিয়ন্ত্রণে চিনি, ভোজ্যতেল ও খেজুরের আমদানি শুল্ক কমিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তবে ব্যবসায়ীদের দাবি, শুল্ক আরও আগে কমানো উচিত ছিল।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়ে ছোলা বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১০৫ টাকায়। ছোলার পাশাপাশি বাড়ছে অন্যান্য ডালের দামও। গত এক মাসের মধ্যে এসব পণ্যের দাম ১০-৩০ টাকা বেড়েছে। প্রতি কেজি ছোলার ডাল ১০০ থেকে ১১০ টাকা, অ্যাংকর ডাল ৭৫ থেকে ৮০ টাকা, ডাবলির ডাল ৭৫ টাকা, মোটা দানার মসুর ডাল ১০৫ থেকে ১১০ টাকা, চিকন মসুর ডাল ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা, মোটা দানার মুগ ডাল ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা, চিকন মুগ ডাল ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা ও খেসারি ডাল ১০৫ থেকে ১১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

অন্যান্য পণ্যের মধ্যে খোলা আটা ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, প্যাকেট আটা ৬৫ থেকে ৬৮ টাকা, খোলা ময়দা ৬৫ থেকে ৭০ টাকা এবং প্যাকেট ময়দা ৭৫ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৭০ টাকা ও প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ টাকায়। আর প্রতি কেজি খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকায়। আর প্যাকেটজাত চিনি তো বাজার থেকেই উধাও!

রাজধানীর কারওয়ান বাজারের রাকিব জেনারেল স্টোরের বিক্রেতা রাকিব জানান, দাম যা বাড়ার তা আগেই বেড়ে গেছে। মূলত রোজাকে কেন্দ্র করে পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে মিল মালিকরা। এর প্রভাব পড়ছে পাইকারি ও খুচরা বাজারে।

খেজুরের দাম আকাশচুম্বী !
এদিকে, রাজধানীর ফলের বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে প্রতি কেজি দাবাস খেজুর ৪৫০ থেকে ৪৮০ টাকা, জিহাদি খেজুর ২৪০ টাকা, আজওয়া খেজুর ৯০০ টাকা, বরই খেজুর ৪০০ টাকা, মরিয়ম খেজুর ৯০০ টাকা ও মেডজুল খেজুর বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৩০০ টাকায়।

বিক্রেতারা বলছেন, আসন্ন রমজানকে কেন্দ্র করে বাড়ছে খেজুরের চাহিদা; এতে বাড়ছে দামও।

এছাড়া প্রতি কেজি মাল্টা ২৮০ টাকা, সবুজ আপেল ২৮০ টাকা, নাশপতি ২৫০ টাকা, আনার ৫০০ টাকা, লাল আঙুর ৪৮০ থেকে ৫০০ টাকা ও কমলা বিক্রি হচ্ছে ২৬০ টাকায়।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারের এক ব্যবসায়ী বলেন, শেষ সময়ে এসে খেজুরসহ চার পণ্যের দাম কমিয়েছে সরকার। এতে খুব একটা প্রভাব পড়বে না বাজারে। কারণ ব্যবসায়ীরা এরই মধ্যে অনেকেই বাড়তি দামে পণ্য কিনে ফেলেছেন; আবার অনেকেই আগাম অর্ডার দিয়ে রেখেছেন। আমদানি শুল্ক আরও আগেই কমানো উচিত ছিল।

মসলার বাজার অস্থির
দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে মসলার বাজারেও। গত এক মাসের ব্যবধানে এলাচ-লবঙ্গের দাম কেজিতে বেড়েছে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা। গোলমরিচ ও দারুচিনির দামও বাড়তি। এর কারণ জানেন না খোদ বিক্রেতারাও। তাদের দাবি, আমদানিকারকদের কারসাজিতেই বাড়ছে দাম।

কারওয়ান বাজারের রাকিব জেনারেল স্টোরের বিক্রেতা রাকিব বলেন, গত এক মাসে দাম কমেছে শুধু জিরার। প্রতি কেজি জিরা বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকায়। এছাড়া প্রতি কেজি লবঙ্গ ১ হাজার ৮০০ টাকা, গোল মরিচ ৮০০ টাকা, এলাচ ২ হাজার ৬০০ থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকা ও দারুচিনি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৫২০ টাকায়।

এদিকে সপ্তাহ ব্যবধানে আবারও দাম বেড়েছে পেঁয়াজের। প্রতি কেজিতে ২০ থেকে ২৫ টাকা বেড়ে মুড়িকাটা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকায়। তবে বাজারে দেখা নেই পুরাতন দেশি ও ভারতীয় পেঁয়াজের। দু-একটি দোকানে পাওয়া গেলেও সেটি বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে।

বিক্রেতারা জানান, বাজারে মুড়িকাটা পেঁয়াজের সরবরাহ কমে গেছে, তাই ফের দাম বাড়ছে। কেরানীগঞ্জের আগানগর বাজারের পেঁয়াজ বিক্রেতা আসলাম বলেন, বাজারে মুড়িকাটা পেঁয়াজ কম আসছে। এছাড়া বাজারে অন্য জাতের পেঁয়াজ ও ভারতীয় পেঁয়াজও নেই। তাই দাম বাড়ছে।

খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি দেশি রসুন ২৪০ থেকে ২৬০ টাকায় এবং আমদানি করা রসুন ২২০ থেকে ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর আড়ত পর্যায়ে প্রতি কেজি দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৯০ থেকে ২০০ টাকায়। আর আমদানি করা রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৯০ টাকায়।

এছাড়া মানভেদে প্রতি কেজি আদা বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৪০ টাকায়। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরবরাহ ঠিক থাকায় নতুন করে দাম বাড়েনি আদা ও রসুনের। তবে মানভেদে দামে কিছুটা তারতম্য আছে।

শীতের সবজির উত্তাপ বাড়ছেই

সপ্তাহ ব্যবধানে আলু ও মরিচ বাদে বেড়েছে প্রায় সব ধরনের শাক-সবজির দাম। কেজিতে দাম বেড়েছে ৫-১৫ টাকা পর্যন্ত। বিক্রেতারা জানান, পাইকারি দাম বাড়ায় খুচরা বাজারেও এর প্রভাব পড়ছে।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি মুলা ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, শালগম ৪০ টাকা, করলা ৬০ থেকে ৮০ টাকা, শসা ৬০ টাকা, লতি ৮০ টাকা, শিম ৫০ থেকে ৬০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, পেঁপে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা ও গাজর বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়।

এছাড়া প্রতি কেজি বেগুন জাতভেদে ৬০ থেকে ১০০ টাকা, ক্ষীরাই ৫০ টাকা, টমেটো ৬০ থেকে ৭০ টাকা, কহি ৮০ টাকা, কাঁচা টমেটো ৩০ থেকে ৪০ টাকা ও পেঁয়াজের কলি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়। আর প্রতি পিস লাউ ৮০ থেকে ১০০ টাকা, আকারভেদে প্রতিপিস ফুলকপি ৩০ থেকে ৫০ টাকা, বাঁধাকপি ৩৫ থেকে ৪০ টাকা ও ব্রকলি ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

তবে বাজারে কমেছে নতুন আলু ও কাঁচামরিচের দাম। খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি নতুন আলু বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকায়। আর পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়। এদিকে, উভয় পর্যায়ে দাম কমে পাইকারিতে কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায় ও খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকায়।

এছাড়া বাজারে লালশাকের আঁটি ১৫ টাকা, পুঁইশাক ২৫ টাকা, পালংশাক ১০ টাকা ও লাউ শাক ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

কেরানীগঞ্জের সবজি বিক্রেতা উজ্জ্বল বলেন, বাজারে শীতকালীন শাক-সবিজ কম আসছে। এতে চড়া পাইকারি বাজার। এছাড়া পাইকারি বাজার থেকে খুচরা বাজারে পণ্য নিয়ে আসতে খরচ রয়েছে। সবমিলিয়ে কিছুটা বাড়তি শীতকালীন সবজির দাম।

আর ক্রেতারা জানান, বাজারে পর্যাপ্ত শাক-সবজি থাকা সত্ত্বেও দাম বাড়াচ্ছেন বিক্রেতারা। মোখলেসুর রহমান নামে এক ক্রেতা বলেন, বাজারে শাক-সবজির পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। তবু দাম ছাড়ছেন না ব্যবসায়ীরা। সিন্ডিকেট করে ক্রেতার পকেট থেকে লুটে নিচ্ছেন বাড়তি টাকা।

দাম বেড়েছে ডিম, মুরগি ও গরুর মাংসের

সপ্তাহ ব্যবধানে আবারও বেড়েছে মুরগির দাম। প্রতি কেজিতে দাম বেড়েছে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত। বিক্রেতাদের দাবি, পাইকারি বাজারে মুরগির সরবরাহ কমে গেছে। তাই দাম বাড়ায় এর প্রভাব খুচরা বাজারেও পড়েছে।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ২১০ থেকে ২২০ টাকা, সোনালি মুরগি ৩২০ টাকা, দেশি মুরগি ৫৮০ থেকে ৬০০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৫০ টাকা ও লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ৩১০ টাকায়। আর জাতভেদে প্রতি পিস হাঁস বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ থেকে ৭০০ টাকায়।

কেরানীগঞ্জের আগানগর বাজারের রিপন বলেন, কেন দাম বাড়ছে জানি না। পাইকারি দাম বাড়ায় খুচরাতেও দাম বাড়ছে। তবে পাইকাররা জানিয়ে সরবরাহ কম।

এদিকে, বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭২০ থেকে ৭৫০ টাকায়। তবে গত মাসে গরুর মাংসের দাম ৬৫০ টাকা বেঁধে দিয়েছিল মাংস ব্যবসায়ীরা। এখন থেকে গরুর মাংসের দাম নির্ধারিত থাকবে না বলে সিদ্ধান্ত জানিয়েছে মাংস ব্যবসায়ী সমিতি। প্রতিকেজি গরুর মাস ৬৫০ টাকায় বিক্রি করায় ব্যবসায়ীরা লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছেন দাবি করে আপাতত ৭০০ টাকা দরে বিক্রির চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সমিতির সভাপতি গোলাম মুর্তজা।

তবে মাংস ব্যবসায়ী সমিতি ৭০০ টাকায় গরুর মাংস বিক্রির কথা বললেও কেন ৭২০ থেকে ৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে জানতে চাইলে কেরানীগঞ্জের আগানগর বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, কম দামে মাংস বিক্রি করে লোকসান গুনতে হচ্ছে। আর ৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে ভালো মানের মাংস। তাই দাম একটু বেশি রাখা হচ্ছে।

তবে বাজারে বাড়েনি খাসির মাংসের দাম। বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৫০ টাকা থেকে এক হাজার ১০০ টাকায়।

এদিকে, সপ্তাহ ব্যবধানে ডজন প্রতি ৫ টাকা বেড়েছে ডিমের দাম। প্রতি ডজন লাল ডিম ১৪০ টাকা ও সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকায়। আর প্রতি ডজন হাঁসের ডিম ২৪০ টাকা ও দেশি মুরগির ডিম ২৪৫ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

স্বস্থি নেই মাছের বাজারেও
মাছের বাজারের অস্থিরতাও থামছে না। সপ্তাহ ব্যবধানে বেড়েছে দেশি মাছের দাম। তবে হাতে গোনা কয়েকটি চাষের মাছের দাম কমলেও তা নাগালের বাইরে বলে দাবি ক্রেতাদের।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, আকারভেদে প্রতি কেজি রুই ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকা, কাতলা ৪০০ থেকে ৪৮০ টাকা, চাষের শিং ৬৫০ টাকা, চাষের মাগুর ৫৫০ টাকা, চাষের কৈ ২৫০ টাকা, কোরাল ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা, টেংরা ৫৫০ থেকে ৭০০ টাকা, চাষের পাঙাশ ২০০ থেকে ২২০ টাকা ও তেলাপিয়া ২৩০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া প্রতি কেজি বোয়াল ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, আইড় ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা, বাইম ১ হাজার টাকা, দেশি কৈ ১ হাজার ৩০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা, শিং ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা, শোল ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকা ও নদীর পাঙাশ বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকায়। আর প্রতি কেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার টাকার ওপরে।

কেরানীগঞ্জের কালীগঞ্জ বাজারের মাছ ব্যবসায়ী হরিপদ বলেন, দেশি মাছের দাম কিছুটা চড়া। মাছের সরবরাহ না বাড়ায় দামও কমছে না।

সুখবর নেই চালের বাজারে
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে থেকেই অস্থির হতে শুরু করে দেশের চালের বাজার। নির্বাচনের পর দাম আরও বেড়ে যায়। এরপরই চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে মাঠে নামে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর, খাদ্য অধিদফতরসহ সরকারে নানা সংস্থা। এতে সামান্য কমে দাম।

তবে দাম যতটা বেড়েছে, তার তুলনায় কমেছে সামান্য। খুচরা পর্যায়ে চালভেদে কেজিতে কেউ কেউ এক-দুই টাকা কম রাখলেও বেশির ভাগ বিক্রেতা আগের বাড়তি দামেই চাল বিক্রি করছেন।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি বিআর-২৮ ও পাইজাম ৫৬ খেকে ৬০ টাকা, স্বর্ণা ৫৩ থেকে ৫৫ টাকা, নাজিরশাইল ৭৮ থেকে ৮৪ টাকা, চিনিগুঁড়া চাল ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা ও মিনিকেট ৭০ থেকে ৭২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

কারওয়ান বাজারের বরিশাল রাইস এজেন্সির আল হাসিব বলেন, নতুন করে বাড়েনি চালের দাম। তবে মিল-মালিকদের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে আবারও বাড়তে পারে চালের দাম।

নিত্যপণ্যের এ অস্থির বাজার নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের দাবি ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েরই। ক্রেতারা বলছেন, নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হয় না। এতে বিক্রেতারা ইচ্ছেমতো দাম বাড়ানোর সুযোগ পায়।

আর বিক্রেতারা বলেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ইচ্ছেমতো দাম বাড়াচ্ছে। বাজারে নিয়মিত অভিযান চালালে অসাধুদের দৌরাত্ম্য কমবে।

চার পণ্যে কমলো আমদানি শুল্ক
এক প্রজ্ঞাপনে এনবিআর জানায়, খেজুর, পরিশোধিত ও অপরিশোধিত চিনি, চাল ও ভোজ্যতেলের আমাদনি শুল্ক কমানো হয়েছে। খেজুরের আমদানি শুল্ক নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫ শতাংশ, যা আগে ছিল ২৫ শতাংশ।

অপরিশোধিত প্রতি টন চিনির ওপর এতদিন আমদানি শুল্ক ছিল ৩ হাজার টাকা। সেটি কমিয়ে এক হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এছাড়া চালের ওপর আমদানি শুল্ক নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ শতাংশ, যা এতদিন ছিল ২৫ শতাংশ। আর পাম অয়েলের আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট ছিল ১৫ শতাংশ, সেটি কমিয়ে পাঁচ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।

বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, এবার দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে স্বাভাবিক আইন প্রয়োগ করেই বাজার মনিটরিং জোরদার করা হবে। প্রয়োজন হলে জরুরি আইন প্রয়োগ করা হবে।

আট পণ্যে আমদানি শর্ত শিথিল
এদিকে, আসন্ন রোজায় আট ধরনের খাদ্যপণ্য আমদানিতে ঋণপত্র (এলসি) খোলার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে ন্যূনতম পর্যায়ে নগদ মার্জিন রাখতে বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

গত ১৭ জানুয়ারি এক নির্দেশনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মতো ব্যাংক গ্রাহকের সম্পর্কের ভিত্তিতে নগদ এ মার্জিনের হার নির্ধারণ করতে হবে। ভোজ্যতেল, ছোলা, ডাল, মটর, পেঁয়াজ, মসলা, চিনি এবং খেজুর আমদানির ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ নির্দেশনা প্রযোজ্য হবে। দেশের বাজারে এসব পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করতে আমদানি ঋণপত্র স্থাপনে অগ্রাধিকার দেয়ার জন্যও পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

গত ১১ জানুয়ারি রোজায় ভোগ্যপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ ও সরবরাহ নিশ্চিতে ভোজ্যতেল, ছোলা, ডাল, মটর, পেঁয়াজ, মসলা, চিনি এবং খেজুর বাকিতে আমদানির সুযোগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এক বিজ্ঞপ্তিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, এসব পণ্য ৯০ দিনের সাপ্লায়ার্স বা বায়ার্স ক্রেডিটের আওতায় আমদানি করা যাবে। এ সুযোগ থাকবে আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নেয়া এ ব্যবস্থা আসন্ন রমজান উপলক্ষে প্রয়োজনীয় পণ্যের যোগান নিশ্চিত করবে।

রমজানে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে মিলবে মাংস ও ডিম
রমজানে কম লাভে পণ্য বিক্রি করতে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী মো. আব্দুর রহমান। তিনি বলেন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ও স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য ভ্রাম্যমাণ পদ্ধতিতে ট্রাকে করে সুলভ মূল্যে মাছ, মাংস, দুধ, ডিম বিক্রির ব্যবস্থা করা হবে।

পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে