আপিলে ঝুলছে ১৩৯ জনের ফাঁসি
পদ্মাটাইমস ডেস্ক : বিডিআর বিদ্রোহ ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনার ১৫ বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ রোববার। ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি রক্তাক্ত ওই বিদ্রোহের সূত্রপাত হয় তখনকার বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) সদর দপ্তর রাজধানীর পিলখানায়। বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশের বেশ কয়েকটি স্থানে।
আলোচিত ওই ঘটনায় একসঙ্গে দুটি মামলা হয়েছিল। এর মধ্যে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা মামলায় বিচারিক আদালত ও হাইকোর্টের রায় হয়েছে। এখন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারের অপেক্ষায়। হাইকোর্টের রায়ে বহাল থাকা ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ১৩৯ জনের বিচার প্রায় তিন বছর ধরে ঝুলে আছে আপিল বিভাগে।
অন্যদিকে বিস্ফোরক আইনে করা মামলায় বিচার কবে শেষ হবে তা অনিশ্চিত। বিচারিক আদালতে এখনো এ মামলাটিতে সাক্ষ্য গ্রহণই শেষ হয়নি। এ মামলায় ১ হাজার ৩৪৪ সাক্ষীর মধ্যে ১৫ বছরে মাত্র ২৭৬ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। আগামী ২৮ ও ২৯ ফেব্রুয়ারি মামলাটির শুনানির দিন ধার্য রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যে গতিতে মামলাটির বিচার চলছে, তাতে এর বিচার শেষ হতে আরও এক যুগ লেগে যেতে পারে। আর মামলাটির বিচার শেষ না হওয়ায় পাঁচ শতাধিক আসামিকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
আসামিপক্ষের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, অধস্তন আদালতে হত্যা মামলায় ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তাদের বেশিরভাগেরই সাজা ভোগ শেষ হয়েছে। এ ছাড়া বিচার শেষে হাইকোর্টে ২৮৩ জন খালাস পান। সব মিলিয়ে এরই মধ্যে হত্যা মামলার পাঁচ শতাধিক আসামির কারামুক্তি পাওয়ার পথ সুগম হয়েছে। তবে তারা বিস্ফোরক মামলারও আসামি হওয়ায় কারামুক্তি পাচ্ছেন না। এমনকি তারা বিস্ফোরক মামলায় জামিনও পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন তারা।
আসামিপক্ষের অন্যতম প্রধান আইনজীবী আমিনুল ইসলাম বলেন, বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় করা দুটি মামলায় ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হলে বিচার দ্রুত শেষ করতে হবে। হত্যা মামলাটির বিচার দুই ধাপে শেষ হয়েছে। আর বিস্ফোরক আইনের মামলার বিচারের গতি একবারেই শ্লথ। বিস্ফোরক আইনে করা মামলার কারণে পাঁচ শতাধিক আসামির দুর্ভোগের বিষয়টি তুলে ধরে এই আইনজীবী বলেন, এই বিপুলসংখ্যক আসামির ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হলে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে, অন্যথায় তাদের জামিন দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, হত্যা মামলায় হাইকোর্ট, বিচারিক আদালতের রায়সহ যাবতীয় নথিপত্র আপিল বিভাগে জমা দেওয়া হয়েছে। আপিলের সারসংক্ষেপও জমা দেওয়া হয়েছে। কোনো কিছুই বাকি নেই। যেভাবেই হোক ন্যায়বিচারের স্বার্থে বিচারকের সংখ্যা বাড়িয়ে এবং আলাদা বেঞ্চ গঠন করে এ মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি করা প্রয়োজন।
রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, সর্বোচ্চ আদালতে চূড়ান্ত শুনানি করতে আলাদা বেঞ্চ গঠন করতে হবে। আপিল বিভাগে এই মুহূর্তে পর্যাপ্ত বিচারক নেই। বিচারক সংকটের কারণে মামলা শুরু করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। কয়েক হাজার পৃষ্ঠার আপিল উভয়পক্ষ শুনানি করতে টানা ৩০-৪০ দিন সময় লাগবে। আশা করি, শিগগির আপিল বিভাগে নতুন বিচারক নিয়োগ হবে। এরপর পৃথক বেঞ্চ গঠন হলে শুনানি শুরু হবে।
১৫ বছর আগের আজকের দিনে পিলখানায় নারকীয় হত্যাকাণ্ড চালায় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিডিআরের কিছু বিপথগামী সদস্য। নিষ্ঠুর আচরণ ও পাশবিক নির্যাতনের শিকার হন পিলখানায় বিডিআরের বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালনরত সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তারা। তাদের অনেকের পরিবারের সদস্যরাও নৃশংসতার শিকার হন। দুই দিনব্যাপী ওই বিদ্রোহে বিডিআরের তৎকালীন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদসহ ৫৭ সেনা কর্মকর্তা নিহত হন। আরও নিহত হন ১৭ বেসামরিক নাগরিক।
ওই হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় ২০০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে পৃথক মামলা হয়। ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর হত্যা মামলার রায় দেন বিচারিক আদালত। দেশের ইতিহাসে আসামির সংখ্যার দিক থেকে এটি সবচেয়ে বড় মামলা। এ ছাড়া মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির সংখ্যার দিক থেকেও বিচার বিভাগের ইতিহাসে এটি একটি অনন্য মামলা। বিচারিক আদালতের রায়ের পর আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) হাইকোর্টে অনুমোদনের জন্য আসে। ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের ওপর শুনানি শেষে হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ ২০১৭ সালের ২৬ ও ২৭ নভেম্বর রায় ঘোষণা করেন।
এ রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয় ২০২০ সালের জানুয়ারিতে। রায়ে ১৩৯ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয় ১৮৫ জনকে এবং বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয় ২২৮ জনকে। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা তোরাব আলীসহ বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ডিত ২৮৩ জন খালাস পান। হাইকোর্টের রায়ের আগে ১৫ জনসহ সব মিলিয়ে ৪৩ আসামি মারা গেছেন।
রায় প্রকাশিত হওয়ার পর ২০২০ সালেই হাইকোর্টের রায়ে খালাস পাওয়া এবং সাজা কমে যাওয়া ৮৩ আসামির বিষয়ে ২০টি লিভ টু আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। এ ছাড়া হাইকোর্টের রায়ে সাজাপ্রাপ্ত ২১১ আসামি ২০২০ ও ২০২১ সালে আপিল বিভাগে পৃথক আপিল এবং লিভ টু আপিল করে। রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের এসব আপিল ও লিভ টু আপিল আপিল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।
আজকের কর্মসূচি
এদিকে এ হত্যাকাণ্ডে শহীদদের স্মরণে বিজিবি ও সেনা সদর নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) থেকে জানানো হয়েছে, প্রতি বছরের মতো এবারও শহীদদের স্মরণে ২৫ ফেব্রুয়ারি শাহাদাতবার্ষিকী পালিত হবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় আজ সকাল ৯টায় বনানী সামরিক কবরস্থানে রাষ্ট্রপতির প্রতিনিধি, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তিন বাহিনীর প্রধানরা (সম্মিলিতভাবে), স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও বিজিবি মহাপরিচালক (একত্রে) এবং শহীদদের নিকটাত্মীয়রা স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।
দিনের কর্মসূচি অনুযায়ী শহীদদের রুহের মাগফিরাতের উদ্দেশ্যে পিলখানার বিজিবি সদর দপ্তরসহ সব রিজিয়ন, প্রতিষ্ঠান, সেক্টর ও ইউনিটের ব্যবস্থাপনায় খতমে কোরআন, বিজিবির সব মসজিদ এবং বিওপি পর্যায়ে শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। দিবসটি পালন উপলক্ষে বিজিবির সব স্থাপনায় বিজিবি রেজিমেন্টাল পতাকা অর্ধনমিত থাকবে এবং বিজিবির সব সদস্য কালোব্যাজ পরিধান করবেন।