শিশুর খৎনা করানো হয় কেন?

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২৪; সময়: ১:১৬ অপরাহ্ণ |
খবর > ধর্ম
শিশুর খৎনা করানো হয় কেন?

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : খৎনা একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত ও মুসলমানদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। মুসলিম সমাজে এটি মুসলমানি বলে পরিচিত। মুসলিম জাতির পিতা বলে পরিচিত হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের সময়কাল থেকে এই সুন্নতের প্রচলন হয়। নবীদের মধ্যে তিনিই প্রথম সুন্নতে খৎনা করেন। এজন্য খৎনাকে সুন্নতে ইবরাহিমও বলা হয়।

ইবরাহিম আলাইহিস সালাম ৮০ বছর বয়সে খৎনা করেন বলে হাদিসের মাধ্যমে প্রমাণ পাওয়া যায়। এ বিষয়ে হজরত আবু আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ইবরাহিম আলাইহিস সালাম আশি বছরোর্দ্ধ বয়সে খৎনা করেন।

তিনি কাদূম নামক স্থানে খৎনা করেন। ইমাম বুখারি রহিমাহুল্লাহ বলেন, ’কাদুম’ একটি জায়গার নাম। (বুখারি, মুসলিম, আল আদাবুল মুফরাদাত, ১২৫৬)

অপর এক বর্ণনায় রয়েছে তিনি ১২০ বছর বয়সে খৎনা করেছেন। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, ইবরাহিম আলাইহিস সালাম এক শত বিশ বছর বয়সে খৎনা করেন। এরপর তিনি আশি বছর জীবিত ছিলেন।

হজরত সাঈদ রহিমাহুল্লাহ বলেন, ইবরাহিম আলাইহিস সালাম হলেন খৎনাকারী প্রথম ব্যক্তি, তিনিই প্রথম গোঁফ কাটেন, তিনিই প্রথম নখ কাটেন এবং তিনিই প্রথম সাদা চুল (বার্ধক্যের চিহ্ন) দেখেন। তিনি বলেন, হে প্ৰভু! এটা কি? তিনি বলেন, গাম্ভীর্য ও মর্যাদা। তিনি বলেন, হে প্ৰভু! আমার গাম্ভীর্য ও মর্যাদা বর্ধিত করুন। (বুখারি, মুসলিম, হাকিম, ইবনে হিব্বান)

ইবরাহিম আলাইহিস সালাম প্রথম বেশি বয়সে খৎনা করলেও বর্তমান সময়ে শৈশবেই শিশুদের খৎনা করানো হয়। ড়দের ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার-পরবর্তী ইরেকশনের কারণে রক্তপাত হওয়ার শঙ্কা বেড়ে যায়।

চিকিৎসা বিজ্ঞানে এর কোনো নির্দিষ্ট বয়স না থাকলেও, বাংলাদেশের সামাজিক বাস্তবতায় তিন বা চার বছর বয়স খৎনার উপযুক্ত সময় বলে মনে করেন চিকিৎসকরা।

অপরদিকে খৎনার উত্তম ও সঠিক সময়ের ব্যাপারে ইসলামি আইন ও ফেকাহশাস্ত্রবিদদের মতামত হলো- শিশুর শারীরিক উপযুক্ততা ও তার বালেগ হওয়ার কাছাকাছি বয়সে পৌঁছার আগেই বা এর মাঝামাঝি সময়ে যেমন, ৭-১০ বছর বা অনুর্ধ্ব ১২ বছরের মধ্যে করে নেওয়া উত্তম।

খৎনা বলা হয় মূলত পুরুষাঙ্গের সামনের বা মাথার দিকে যে অতিরিক্ত চামড়া পুরুষাঙ্গের সংবেদনশীল মাথাকে ঢেকে রাখে, তা কেটে বাদ দেওয়াকে। মেডিক্যাল টার্মে একে বলে সারকামসিশন।

খৎনা বা মুসলমানি করার কিছু উপকারী দিক রয়েছে। যেমন- মুসলমানি করালে মূত্রনালির সংক্রমণের ঝুঁকি কম হয়। কিছু যৌনবাহিত রোগের ঝুঁকিও হ্রাস করে; ব্যালানাইটিস (গ্লান্সের প্রদাহ), ব্যালানোপোস্টাইটিস (গ্লান্স ও ফরস্কিনের প্রদাহ) প্রভৃতি প্রতিরোধ করে; অনেক সময় পুরুষাঙ্গের মাথার দিকের চামড়া মূত্রনালিতে এমনভাবে লেগে থাকে যে প্রস্রাব ভালো মতো বের হতে পারে না। তখন প্রস্রাবের নালিতে ইনফেকশন বা কিডনিতে জটিলতা হতে পারে।

মুসলমানি করালে ফাইমোসিস হয় না; পুরুষাঙ্গের মাথার দিকের চামড়া উল্টে শক্ত হয়ে গেলে ওই চামড়াকে আর সামনে ও পেছনের দিকে নড়াচড়া করা যায় না। তখন লিঙ্গের মাথা ফুলে যায়, রক্ত সঞ্চালন বাধাপ্রাপ্ত হয়।

কিন্তু মুসলমানি করালে এই জটিলতা থেকে রক্ষা মেলে; পেনাইল ক্যান্সারের বিরুদ্ধে সুরক্ষা তৈরি করে খৎনা। এ ছাড়া পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা রক্ষার জন্যও যেকোনো ধর্মের পুরুষরা খৎনা করিয়ে থাকেন।

পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে