রমজানের প্রস্তুতি কেমন হওয়া উচিত?

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২৪; সময়: ৩:৩৬ অপরাহ্ণ |
খবর > ধর্ম
রমজানের প্রস্তুতি কেমন হওয়া উচিত?

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : রমজানের প্রস্তুতি বলতে সাধারণত আমরা কী বুঝি? আমরা বুঝি ধুমধাম বাজার ঘাট করা, বাড়তি খাবার সঞ্চয় করা। জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় আগে আগে কিনে রাখা ইত্যাদি।

টিভি চ্যানেলগুলো ব্যস্ত হয়ে পড়ে বিভিন্ন রকমের প্রোগ্রাম রিলিজের প্রস্তুতিতে। কোন দিন কী ধরণের প্রোগ্রাম রিলিজ করা যায়, কোন অতিথিকে ইনভাইট করা যায়? তাদের নাম সাজানো, প্রোগ্রামগুলোকে সুন্দর থেকে সুন্দরতর করার নানা রকমের প্রচেষ্টা।

অন্যদিকে মাদরাসাগুলোতে আয়োজন করা হয় অবসরকালীন বিভিন্ন কোর্স। কেউ ইংরেজি কোর্স, কেউ আরবি কোর্স, কেউবা নাহু-সরফের কোর্স নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।

রমাজানুল মোবারক মাসটি একটি আধ্যাত্মিক জার্নি। তাই এই মাসের প্রস্তুতি যতটা বাহ্যিক হবে তার চেয়ে বেশি আধ্যাত্মিক হতে হবে। নিজের সঙ্গে আল্লাহ তায়ালার সম্পর্ক উন্নয়নের একটি সুবর্ণ সুযোগ এই মাস।

একনিষ্ঠ মনে তওবা-

তাই রমজানের প্রস্তুতি গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রথমেই আমাদের করণীয় হলো একনিষ্ঠভাবে আল্লাহ তায়ালার কাছে তওবা করা। তওবা সবসময়ের জন্যই একটি ওয়াজিব আমল।

তবে রমজানুল মোবারকে এর গুরুত্ব অনেক বেড়ে যায়। কারণ রমজানে নিজেকে যতটা গুনাহ মুক্ত রাখা যায় ততই নিজের আমলগুলোর শক্তিশালী হয় ও আধ্যাত্মিক জার্নি তত বেশি মজবুত হয়।

আগের কাজা রোজা আদায় করা-

নিজের দায়িত্বে কোন ওয়াজিব রোজা থেকে থাকলে তা থেকে মুক্ত হওয়া। কাজা রোজাগুলো সম্ভব হলে রমজানের আগেই শেষ করে ফেলা। আবু সালামাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেন-

`আমার উপর বিগত রমজানের রোজা বাকি থাকলে শাবান মাস ছাড়া আমি তা আদায় করতে পারতাম না। (বুখারি, হাদিস, ১৮৪৯, মুসলিম, হাদিস, ১১৪৬)

হাফেয ইবনে হাজার রাহিমাহুল্লাহ বলেন, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহার শাবান মাসে কাজা রোজা আদায়ে সচেষ্ট হওয়া থেকে বিধান গ্রহণ করা যায় যে, রমজানের কাজা রোজা পরবর্তী রমজান আসার আগেই আদায় করে নিতে হবে। (ফাতহুল বারী; ৪/১৯১)

রমজানের মাসআলা সম্পর্কিত বই সংগ্রহ-

রমজানুল মোবারকের মাসয়ালা মাসায়েল ও তার ফজিলত জানার জন্য বইপত্র পড়তে শুরু করা। কোন কোন কাজ করলে রমজানের রোজা নষ্ট হয়ে যায়, কী করলে কাফফারা আদায় করতে হয়, কী করলে কাফফারা আদায় করা লাগে না, কোন ধরনের কাজে রমজানুল মোবারকের আধ্যাত্মিকতা নষ্ট হয়ে যায় ইত্যাদি বিষয়গুলো এখন থেকেই খুঁটে খুঁটে জানার চেষ্টা করা।

রমজান কেন্দ্রীক রুটিন-

রমজানুল মোবারকের জন্য আলাদা একটি রুটিন তৈরি করা। চেষ্টা করা সর্বোচ্চ সময় যেন ইবাদতের মধ্যে কাটানো যায় রুটিন এমনভাবে প্রস্তুত করা। যাতে সর্বোচ্চ সময় রমজানের আধ্যাত্মিকতার মধ্যে কাটানো যায়।

একান্ত যে কাজগুলো করতেই হয়, যেমন প্রতিদিন অফিস, দোকান খোলা অথবা জীবিকার জন্য প্রাত্যহিক জীবনের যে কাজগুলো রয়েছে সেগুলো ছাড়া বাকি সময়গুলো ইবাদতের জন্য বরাদ্দ রাখার চেষ্টা করা।

পরিবারের সবাইকে নিয়ে রমজান সম্পর্কিত আলোচনা-

প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘরের সবাইকে নিয়ে রমজানের মাসআলা-মাসায়েল আলোচনা করা। এই বিষয়ক বই বিজ্ঞ ওলামায়ে কেরামের পরামর্শে নির্বাচন করা। এ বিষয়ে বাজারে অনেক রকমের বই পাওয়া যায়। গ্রহণযোগ্য অগ্রহণযোগ্য নানান রকমের বইই পাওয়া যায়।

চেষ্টা করা সর্বোচ্চ বিজ্ঞ ওলামায়ে কেরামের পরামর্শে সবচেয়ে বিশুদ্ধ যে বইগুলো রয়েছে সেই বইগুলো ঘরে তালিম করা। মাসাআলার কোন অংশ বুঝে না এলে নিজে নিজে সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করে বরং এ বিষয়ক বিজ্ঞ ওলামায়ে কেরামের দ্বারস্থ হওয়া।

বন্ধুদের রমজান বিষয়ক বই উপহার দেওয়া-

রমজানের ফজিলত ও মাসআলা-মাসায়েল সংক্রান্ত কিছু বই কিনে বন্ধু-বান্ধবদের হাদিয়া দেওয়াটাও একটি উত্তম কাজ হতে পারে। তারাও সঠিকভাবে মাসআলা জেনে আমল করতে পারবেন।

শাবান মাসে বেশি বেশি রোজা রাখা-

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানের প্রস্তুতি হিসেবে শাবান মাসে কিছু রোজা রাখতেন।

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমনভাবে সিয়াম পালন করতেন যে, আমরা বলতাম- তিনি আর সিয়াম ভঙ্গ করবেন না এবং এমনভাবে সিয়াম ভঙ্গ করতেন যে আমরা বলতাম- তিনি আর সিয়াম পালন করবেন না।

তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রমজান ছাড়া অন্য কোন মাসের গোটা অংশ রোজা পালন করতে দেখিনি এবং শাবান ছাড়া অন্য কোন মাসে অধিক সিয়াম পালন করতে দেখিনি। (বুখারি, হাদিস, ১৮৬৮, মুসলিম, হাদিস, ১১৫৬)

উসামাহ ইবনে যায়েদ রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমি আপনাকে শাবান মাসের মতো অন্য কোন মাসে এতো রোজা পালন করতে দেখিনি। তখন তিনি বললেন,

‘এটি রজব ও রমজানের মধ্যবর্তী মাস। এ মাসের ব্যাপারে মানুষ গাফেল। অথচ এ মাসে বান্দাদের আমল রাব্বুল আলামীনের কাছে উত্তোলন করা হয়। তাই আমি পছন্দ করি যে, রোজা পালনরত অবস্থায় আমার আমল উত্তোলন করা হোক। (নাসাঈ, ৩৫৭)

এ হাদিসে শাবান মাসে রোজা পালনের হেকমত (গুঢ় রহস্য) বর্ণনা করা হয়েছে। সে হেকমত হচ্ছে- এ মাসে বান্দার আমলগুলো উত্তোলন করা হয়।

জনৈক আলেম আরও একটি হেকমত উল্লেখ করেছেন তাহলো- শাবান মাসের রোজা যেন ফরজ নামাজের আগে সুন্নত নামাজের মতো। এই সুন্নতের মাধ্যমে ফরজ পালনের জন্য আত্মাকে প্রস্তুত করা হয় এবং ফরজ পালনের জন্য প্রেরণা তৈরী করা হয়। একই হেকমত রমজানের পূর্বে শাবানের রোজার ক্ষেত্রেও বলা যেতে পারে।

বিশুদ্ধ কোরআন তিলাওয়াতের চেষ্টা করা-

রমজানুল মোবারক কোরআন নাজিলের মাস এবং কোরআনের সঙ্গে এই মাসের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। অনুতাপের বিষয় হচ্ছে আমাদের অধিকাংশই বিশুদ্ধ তিলাওয়াত জানি না। তাদের জন্য এই মাসটি একটি সুবর্ণ সুযোগ। কোরআন তেলাওয়াত শিখার জন্য।

রমজানের রুটিনে একটি সময় এমন রাখা যেখানে কোরআনুল কারিমের তিলাওয়াত শেখা যায়। এজন্য স্থানীয় মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিন সাহেবদের সঙ্গে কথা বলে তাদের কাছ থেকে সময় নেয়া যেতে পারে। মসজিদ কেন্দ্রিক এই জাতীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে বিষয়টা আরও বেশি সুন্দর হবে।

পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে