মানুষের মনে শয়তান প্রভাব বিস্তার করে যেভাবে
পদ্মাটাইমস ডেস্ক : মানুষের মনে যেসব চিন্তা-ভাবনা উচিত হয় তা দুই প্রকার। ১. শুভ চিন্তা। ২. অশুভ চিন্তা। অশুভ চিন্তার পরিণতি ক্ষতিকর হয় এবং শুভ চিন্তার মাধ্যমে আখেরাতে উপকার পাওয়া যায়।
শুভ চিন্তাকে এলহাম ও অশুভ চিন্তাকে ওয়াসওয়াসা তথা সন্দেহ, শঙ্কা ও কুমন্ত্রণা বলা হয়।শুভ চিন্তার মূল কারণ ফেরেশতা এবং অশুভ চিন্তার মূলে থাকে শয়তান।
ফেরেশতাকে আল্লাহ তায়ালা কল্যাণ ও জ্ঞান পৌঁছানো এবং সত্য ও সৎ কাজের আদেশের জন্য সৃষ্টি করেছেন। শয়তান এর বিপরীত অর্থাৎ, সে মানুষকে অনিষ্টের পথে আহ্বান করে, অশ্লীল কাজে আদেশ িএবং দান খয়রাতের সময় দারিদ্যের ভয় দেখায়।
মানুষের অন্তর সবসময় শয়তান ও ফেরেশতার টানাহেচড়ার ম্যধ্যে অবস্থান করে। হাদিসে বলা হয়েছে, অন্তরে দু ধরণের উঠানামা হয়। একটি ফেরেশতার পক্ষ থেকে। তার কাজ হলো মঙ্গলের ওয়াদা প্রদান করা এবং সত্য বিষয়কে সত্য জানা।
যে এটা অনুভব করে তার জানা উচিত এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে এবং তার কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত। অপর উঠানামা শত্রু অর্থাৎ শয়তানের পক্ষ থেকে। তার কাজ হলো অনিষ্টের ওয়াদা দেওয়া এবং সত্যকে মিথ্যা মনে করা। এটা যে অনুভব করে সে যেন বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করে।
এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোরআনের এই আয়াতটি তিলাওয়াত করেন- শয়তান তোমাদের দারিদ্রের ওয়াদা দেয় এবং অশ্লীল কাজের আদেশ করে।
হজরত হাসান বসরি রহ. বলেন, ইচ্ছা অন্তরের চারপাশে ঘুরাফেরা করে। এক প্রকার ইচ্ছা আল্লাহর পক্ষ থেকে এবং এক প্রকার শত্রুর পক্ষ থেকে। আল্লাহ সেই বান্দার ওপর রহম করুন যে ইচ্ছা করার সময় বিরাম দেয়।
যদি ইচ্ছাটি আল্লাহর পক্ষ থেকে জানে, তবে তা কার্যকর করে। আর যদি শত্রুর পক্ষ থেকে জানে, তবে তার সঙ্গে যুদ্ধ করে। অন্তরের এই টানা হেচড়ার কথা বলে বুঝানো হয়েছে, মুমিনের অন্তর আল্লাহ তায়ালার দু আঙ্গুলের ফাঁকে অবস্থান করে।
জন্মগতভাবে মানুষের অন্তরে ফেরেশতার প্রভাব ও শয়তানের প্রভাব কবুল করার যোগ্যতা সমান সমান থাকে। একটির অগ্রাধিকার অপরটির ওপর নেই।
তবে কামপ্রবৃত্তির অনুসরণ ও বিরোধিতার মাধ্যমে একটি অপরটির ওপর প্রবল হয়ে থাকে। অর্থাৎ, মানুষ যদি কাম ও ক্রোধের দাবি অনুযায়ী কাজ করে তবে শয়তানতার ওপর প্রবল হয়ে যায়। তখন তার অন্তর শয়তানের আশ্রয়স্থল ও ঠিকানা হয়ে যায়। কেননা কামপ্রবৃত্তিই শয়তানের বিচরণ ক্ষেত্র।
পক্ষান্তরে যদি কেউ কামপ্রবৃত্তিকে পরাভূত করে ফেরেশতাসুলভ চরিত্র অবলম্বন করে তবে তার অন্তর ফেরেশতাদের মনজিল ও বাসস্থান হয়ে যায়।
যেহেতু মানুষের অন্তরে কাম, ক্রোধ, লোভ. মোহ ইত্যাদি সকল প্রবৃত্তি বিদ্যমান আছে, তাই প্রত্যেক অন্তরে শয়তানের কুমন্ত্রণা দেওয়ার অবকাশ আছে। এজন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
তোমাদের প্রত্যেকেরই একটি শয়তান আছে। সাহাবায়ে কেরাম বললেন, আপনারও হে আল্লাহর রাসূল! উত্তর হলো, আমারও তবে আমার শয়তান মুসলমান হয়ে গেছে। ফলে ভালো ছাড়া মন্দ আদেশ করে না।
বলাবাহুল্য, কামপ্রবৃত্তির মাধ্যমেই শয়তান অন্তরে প্রভাব বিস্তার করে। তাই আল্লাহ তায়ালা যার প্রতি অনুগ্রহ করেন, তার কামপ্রবৃত্তিকে তার এমন অনুগত করে দেন যে, উপযুক্ত সীমা ছাড়া তা প্রকাশ পায় না।
তার কামপ্রবৃত্তি তাকে অনিষ্টের দিকে আহ্বান করে না। তাকে মঙ্গলের কথা বলে। অন্তর যখন আল্লাহর জিকিরে মশগুল থাকে তখন শয়তান সুযোগ পায় না।