স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিবাদ লাগানো নিয়ে যা বলেছেন মহানবী (সা.)
পদ্মাটাইমস ডেস্ক : স্বামী-স্ত্রীর ব্যক্তিগত মান-অভিমান, মনোমালিন্যতা স্বাভাবিক ব্যাপার। বর্তমানে অনেক পরিবারে পরিবারের কেউ কেউ ব্যক্তিগত স্বার্থ, নিজের পছন্দ-অপছন্দ ও ব্যক্তি আক্রোশের জেরে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিবাদ লাগিয়ে থাকেন। আবার কেউ কেউ বিচ্ছেদ ঘটানোর জন্য স্বামী-স্ত্রীকে প্ররোচিত করেন।
তবে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিবাদ-বিচ্ছেদ ঘটানো বা ঘটানোর চেষ্ট করা একটি গর্হিত কাজ ও জঘন্য অপরাধ। এ বিষয়ে হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোনো নারী যেন নিজ স্বার্থের জন্য এবং বিয়ে বসার জন্য তার বোনের তালাক না চায়। কেননা সে তাই পাবে যা তার জন্য নির্ধারিত আছে। (বুখারি, মুসলিম, আবু দাউদ, ২১৭৬)
দাম্পত্য সম্পর্ক নষ্ট হয় এমন কিছু করতে ইসলাম কঠোরভাবে নিষেধ করেছে। ওলামায়ে কেরাম স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিবাদ লাগানো এবং বিচ্ছেদ ঘটানোর কাজকে কবিরা গুনাহ বলেছেন।
পবিত্র কোরআনে জাদুর ক্ষতি বর্ণনা করতে গিয়ে আল্লাহপাক বলেন-
فَيَتَعَلَّمُوْنَ مِنْهُمَا مَا يُفَرِّقُوْنَ بِه بَيْنَ الْمَرْءِ وَ زَوْجِه
তারা তাদের কাছে এমন জাদু শিখতো যা দিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছেদ ঘটানো যায়।’ (সূরা বাকারা, আয়াত, ১০২)
একই আয়াতে জাদুর পরিণাম বর্ণনা করতে গিয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেন-
وَلَقَدْ عَلِمُوْا لِمَنِ اشْتَرهُ مَا لَه فِيْ الْاخِرَةِ مِنْ خَلاَقٍ
‘তারা নিশ্চিত জানে যে, জাদু টোনা খরিদ করে আখেরাতে তার জন্য কোনো অংশ নেই।’ (সুরা বাকারাহ, আয়াত-১০২)
মোটকথা স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিবাদ-বিচ্ছেদ ঘটানো বড় জঘন্য অপরাধ। যারা এমনটা করে আখেরাতের নেয়ামত থেকে তারা বঞ্চিত হবে।
রাসূল সা. একবার শয়তান ও তার বংশধরের দৌরাত্ম বোঝাতে গিয়ে বলেন, শয়তান শাহি সিংহাসনে বসে তার সৈন্যবাহিনীকে পাঠায় মানুষের মাঝে ফেতনা ফাসাদ ও বিভ্রান্তি ছড়ানোর জন্য। শয়তানের বাহিনী নিজ নিজ কর্তব্য পালনে ছুটে যায়।
তাদের মাঝে যে সবচে’ বেশি দুষ্কর্ম করতে পারে শয়তান তাকে বিশেষ স্নেহ ও শুভাশীষ জানায়। শয়তানের বাহিনী যখন ফিরে আসে প্রত্যেকে সরদারের কাছে নিজ নিজ রির্পোট পেশ করে।
আমি এই করেছি, সেই করেছি, এমন মহৎ কর্ম আঞ্জাম দিয়েছি। এরই মাঝে এক সৈন্য সরদারের সামনে গিয়ে তার রির্পোট পেশ করে এভাবে আমি সুকৌশলে সূক্ষ্মভাবে আমার দায়িত্ব পালন করেছি। স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছেদ না হওয়া পর্যন্ত আমি ক্ষান্ত হইনি
রাসূল সা. বলেন, শয়তান এ রির্পোট শুনে খুশিতে লাফিয়ে উঠল। তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে উদ্বেলিত কণ্ঠে বলল, তুমি করেছো আসল কাজ! (মুসলিম, হাদিস, ৬৯৯৯)
মোল্লা আলী ক্বারী রহ. বলেন, স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছেদ সৃষ্টি করাতে শয়তান এতো খুশি হওয়ার কারণ হলো—এতে জিনা ব্যভিচারের পথ খুলে যায়। জারজ সন্তান উৎপাদন বেশি হয়। ফেতনা ফাসাদের বাজার গরম হয়। শয়তানের নিকট যা পরম কাম্য। (মিরকাত)
স্বামী-স্ত্রীর বিবাদ-বিসংবাদ ও বিচ্ছেদে কী বিশৃঙ্খলা ও গোলযোগ দেখা দেয় বিচক্ষণ ব্যক্তিমাত্রই তা অগোচরে নেই। যারা এমনটা করে তাদের যত নিন্দামন্দই করা হোক অল্প বলে বিবেচিত হবে।
ইচ্ছাকৃত যারা স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছেদ ঘটানোর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, পরস্পর বিরোধ বিদ্বেষ ঘটাতে সচেষ্ট ওরা মানুষ নয়, বরং মানবতার দুশমন।
এ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো স্ত্রীকে তার স্বামীর বিরুদ্ধে অথবা দাসকে তার মনিবের বিরুদ্ধে প্ররোচিত করে সে আমাদের দলভুক্ত নয়। (আহমাদ, হাকিম, আবু দাউদ, হাদিস, ২১৭৫)
পরস্পর বিবাদ বিসংবাদ ও বিশৃঙ্খলা রোধ করে সাম্য সমতা ও সংহতি স্থাপনের উদ্দেশ্যে যে দ্বীনের আগমন তার অনুসারীরা যদি বিবাদ বিদ্বেষ ছড়ায় বোঝাই যায় তার মনে দীনের কোনো অংশ নেই।
বিশেষত দাম্পত্য সম্পর্ক নষ্ট করা; যাতে পরিবার ভেঙ্গে যায়, সংসার তছনছ হয়, ইজ্জত আব্রু হয় হুমকির সম্মুখী, আমল আখলাক হয় কলুষিত কোনো মুসলমানের কর্ম হতে পারে না।