বিদেশে পলাতক জিসান-মেহেদী, ঢাকায় চলছে চাঁদাবাজি
পদ্মাটাইমস ডেস্ক : বিদেশে পালিয়ে থাকা দুই শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান ও মেহেদী ওরফে কলিংসের নামে রাজধানীর বাড্ডা-ভাটারা এলাকায় চাঁদাবাজি করছে তাদের অন্তত অর্ধশত অনুসারী। চাঁদা আদায় করতে তারা গুলি করছে যখন তখন। ভয়ে অনেকেই গোপনে চাঁদাও দিচ্ছে নিয়মিত। এসব সন্ত্রাসীদের ভয়ে ভুক্তভোগীরা মামলা না করায় করছে পুলিশ নিজেই। পুলিশ বলছে, বাড্ডা-ভাটারা এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নামে কোনো চাঁদাবাজি তারা আর হতে দেবেন না। চলছে সাড়াশি অভিযান।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, গত ৩ ফেব্রুয়ারি রাত ৯টা ৫০ মিনিটে বাড্ডা লিংক রোডের একটি প্রতিষ্ঠানে মাথায় হেলমেট পরা এক যুবক প্রবেশ করে রিসিপশনে থাকা ব্যক্তির সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলেন। বের হয়ে যাওয়ার সময় দরজায় সামনে দাঁড়ান কয়েক সেকেন্ডের জন্য। কোমড় থেকে পিস্তল বের করে দরজায় ফাঁক দিয়ে গুলি করেন ভেতরে। পরে বের হয়ে যান। রাস্তায় অপেক্ষায় থাকা মোটরসাইকেল যোগে পালিয়ে যেতেও দেখা যায় তাকে।
এরপর গত ১১ ফেব্রুয়ারি রাত ১০টায় পশ্চিম মেরুলের একটি ফাস্ট ফুডের দোকানের সামনে মহড়া দিতে দেখা যায় ২০ থেকে ২৫ জনকে। ১০ থেকে ১২ জন ফাস্ট ফুডের দোকানে প্রবেশ করেন। দাবি করেন ১০ লাখ টাকা চাঁদা। না দিলে গুলির ভয়।
তারা সবাই যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসী মেহেদী ওরফে কলিংসের অনুসারী। পরবর্তীকালে ভুক্তভোগী মামলা না করায় পুলিশ নিজেই বাদী হয়ে মামলা করে বাড্ডা থানায়।
বাড্ডা-ভাটারা এলাকায় এ ধরণের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নতুন নয়। বিশেষ করে বিদেশে পালিয়ে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসী মেহেদী এবং জিসানের নামে দীর্ঘদিন ধরেই চাঁদাবাজি হচ্ছে। সম্প্রতি কয়েকটি ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে। আসামি ধরতে মাঠেও নেমেছে। শুরু হয়েছে সাঁড়াশি অভিযান। অস্ত্র ও গুলিসহ গ্রেফতার করা হয়েছে মেহেদি ও জিসান গ্রুপের কয়েকজনকে, যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে তাদের অধিকাংশই অভিযানের পর পরই গা ঢাকা দিয়েছেন।
পুলিশের করা এজাহারেই উঠে এসেছে চাঁদাবাজির বিষয়টি। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, নির্মাণাধীন ভবনসহ স্থাপনা তৈরির সময় মোটা অংকের চাঁদা দাবি করেন তারা। এমনকি ভবন নির্মাণের সময় জোর করে তারা মালিককে নিম্ন মানের নির্মাণ সামগ্রী সরবরাহ করে মোটা অংকের টাকা দাবি করেন।
বাড্ডা-ভাটারা এলাকায় গিয়ে সত্যতাও পাওয়া যায় এসব ঘটনার। মুখ খুলতে রাজি নন কেউ। তবে পরিচয় গোপন রাখার শর্তে কথা হয় কয়েকজনের সঙ্গে। তারা জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চেষ্টায় সম্প্রতি উৎপাত অনেকটাই কমেছে। তবে এ ধরনের সমস্যা চিরতরে বন্ধ হওয়া দরকার।
পুলিশ বলছে, ভুক্তভোগীরা ভয় পেলে মামলা করবেন তারাই। এ ধরণের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চলতে দেয়া হবে না।
আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলমান আছে জানিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার রিফাত রহমান শামীম বলেন, কেউ মামলা না করায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করছে। ইতোমধ্যেই আমরা অস্ত্র, গুলিসহ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছি।
তিনি আরও বলেন, ‘নাগরিকরা কেউ এ ধরনের হুমকি বা এ জাতীয় সমস্যা পড়লে আমাদেরকে জানানোর অনুরোধ রইল। আমরা তাদের পরিচয় গোপন রাখব। যারা এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সে ব্যবস্থা নিচ্ছি এবং সেটি অব্যাহত থাকবে।’