কেশরহাটে ২ পাম্পে তেল কম দেয়ার অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীর মোহনপুরের কেশরহাটে তেলের পাম্প দুইটি একই মালিকের হওয়ায় জিম্মি হয়ে পড়েছে ভোক্তারা। ফলে মাঝে মধ্যেই ভোক্তা ও মালিক পক্ষের লোকজনের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ লেগেই থাকে।
প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতার ছত্রছায়ায় থাকায় ভেজাল তেল বিক্রি ও মাপে কম দিলেও শাস্তি হচ্ছে না বলে দাবি করেছে এলাকাবাসী।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মোহনপুরের কেশরহাটে রহমান ফিলিং স্টেশনের দ্বারা পরিচালিত পদ্মা ও যমুনা নামক তেলের পাম্প। এ তেল পাম্প দুইটিতে অধিকাংশ সময় থাকে না জ্বালানি তেল অকটেন। যার ডিপো মেশিন থাকে কালো কাপড়ে জড়ানো।
পেট্রোল তেলে ভেজাল কেমিক্যাল মেশানোসহ পরিমাপে কম দেওয়া হয়। অপরদিকে বহু ব্যবহৃত জ্বালানি তেল ডিজেলে পরিমাপে কম দেওয়া হয়। প্রতিবাদ করে সুরেহা না হওয়ায় নিরব হয়ে গেছেন গ্রাহকরা।
স্থানীয়রা জানান, কেশরহাটের রহমান ফিলিং স্টেশনের উপর মহল দেখভাল করেন তার ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান মুস্তাক আর মুস্তাকের সৎ ভাই মিজানুর রহমান মিজান। তারা এলাকায় প্রভাবশালী হওয়ায় মৌখিক প্রতিবাদ করলেও কেউ তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান থেকে প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না। পাম্পের মালিকের অনেক লাভ হলেও ক্ষতিগ্রস্থ কয়েক হাজার গাড়ির মালিক।
গত ১ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ৮ টার দিকে কেশরহাট ফ্লিলিং ষ্টোশনে মাপে কারচুপি প্রমাণ করে দেন পৌর এলাকার বাকশৈল গ্রামের শামসুদ্দিন নামের ব্যক্তি। এছাড়াও পবার নওহাটার আনোয়ার নামের এক ব্যক্তিও সেদিন ওই পাম্পে তেল নিয়ে ঠকেছেন বলে জানিয়েছেন।
বোতলে তেল নিয়েও মেপে দেখে অনেক কম। যে কারণে সেদিন ঘন্টাখানেক পেট্রোল পাম্প ঘিরে রাখেন স্থানীয় লোকজন ও ভোক্তারা। তবুও পাম্পের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাইক চালক বলেন, আমদের কেশরহাটে দুইটা তেলের পাম্প থাকার পরেও আমরা অকটেন পাইনা। আর পেট্রোল নিয়ে অন্য এলাকার তেলের পাম্পের তুলনায় লিটারে প্রায় ৮-১০ কি.মি. আবার কখন প্রায় ১৫ কি.মি. মাইলনেস পাই।
এছাড়া এখানে তেল উঠালে আমাদের বাইক থেকে তেল ওভারফু করে, তেল ইয়ারকুলের ভিতরে প্রবেশ করে, ইঞ্জিলে সমস্যা সৃষ্টি হয়ে বিকট শব্দসহ ঘনঘন বন্ধ হয়ে যায়। এ কথা গুলো তাদের বল্লে তারা কোন সমাধান করে না। তাই বাধ্য হয়ে আমরা কষ্ট করে মাঝে-মধ্যে দূরে গিয়ে বেশি টাকার তেল নিয়ে বাইক চালাই।
মাহিন্দ্রা চালকরা বলেন, ‘আমরা সাধারণ তেল পবার বিমানবন্দর থেকে নেওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু আমাদের প্রয়োজনে কেশরহাট থেকে জরুরিভিত্তিতে তেল নিতে হয়।
এসময় আমরা লক্ষ্য করি কেশরহাট থেকে রাজশাহী রেলগেটে যাওয়া আসার ব্যবধানে কেশরহাটের ডিজেল তেল লাগে ৩০০ টাকার আর বিমানবন্দর থেকে তেল নিলে খরচ হয় মাত্র ২০০ টাকা। এই তেল ব্যবসায়ীদের আমরা বিচারের দাবি জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে কেশরহাট পৌরসভার এক কর্মকর্তা বলেন, কেশরহাট বাজারে দুইটি তেলের পাম্পের বিরুদ্ধে অনেকের মুখে নানা কথা শোনা যায়, তারপরেও কর্তপক্ষ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনা। আমি নিজেও বিপদে না পড়লে এ পাম্পে তেল না নিয়ে নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার সাবাইহাট থেকে তেল নিতে যাই।
এ ব্যাপারে মুস্তাক আহমেদ বলেন, ‘পাম্প আমার না এবং দেখভাল করিনা। পাম্প দুটি আমার বাবার। কিছু জানতে চাইলে সেখানে ফোন করেন’। তবে সেদিন ভোক্তাদের কি হয়েছিল জানতে চাইলে ফোন কেটে দেন তিনি।
দুই তেল পাম্পের মালিক আব্দুর রহমান জানান, তেলে ভেজালের কোন সুযোগ নাই। কারণ তেল সরাসরি বাঘাবাড়ি থেকে আনা হয়। আর পরিমাপ ও ওজনে কম দেয়ার বিষয়টিও মিথ্যা। কে বা কারা আপনাদের মিথ্যা তথ্য দিয়েছে।
এ বিষয়ে মোহনপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, ‘পাম্প বন্ধের ঘটনা আমি শুনেছি। আমাকে বলা হয়েছিল বাঘাবাড়িতে তেল না পাওয়ায় পাম্প বন্ধ হয়।
তবে এসব ব্যাপারে কেহ আমাকে অভিযোগ দেয়নি। এখন বিষয়টি জানলাম। খুব শীঘ্রই অভিযুক্ত পাম্প দুটিতে অভিযান চালানো হবে’।