জলদস্যুদের হাতে জিম্মি ২৩ নাবিককে উদ্ধারে দীর্ঘ সময় লাগতে পারে

প্রকাশিত: মার্চ ১৪, ২০২৪; সময়: ১০:৫২ পূর্বাহ্ণ |
খবর > জাতীয়
জলদস্যুদের হাতে জিম্মি ২৩ নাবিককে উদ্ধারে দীর্ঘ সময় লাগতে পারে

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়েছে বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ। যা সোমালিয়া উপকূল থেকে প্রায় ৬০০ নটিক্যাল মাইল দূরে আন্তর্জাতিক জলসীমায়।

নিজের এক অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে সাবেক মেরিনার ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ জিয়াউল হক গণমাধ্যমকে জানান, সাধারণত নিজেদের সমুদ্র সীমায় ছোট ছোট স্পিডবোটে ব্যবহার করে জাহাজের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় জলদস্যুরা। তবে এমভি আব্দুল্লাহর ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ঘটেছে। দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে আন্তর্জাতিক জলসীমায় এসে এই জাহাজটিকে ছিনতাই করা হয়েছে।

এখন বড় প্রশ্ন হলো জাহাজ ও নাবিকদের মুক্ত করতে কতদিন লাগবে? সাবেক এই মেরিনার বলছেন, সব প্রক্রিয়া শেষ করে নাবিকদের ছাড়া পেতে লাগতে পারে এক থেকে চার মাস পর্যন্ত।

কেননা, মুক্তিপণ দাবির পর তা নিয়ে দরকষাকষিসহ নানা প্রক্রিয়া রয়েছে। এর আগে ২০১০ সালে এই কবির গ্রুপেরই জাহাজ জাহান মণি মুক্তি পেতে লেগেছিল ১০০ দিন।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী বলেন, নানা প্রক্রিয়া শেষ করে সব নাবিকসহ জাহাজটিকে মুক্ত করতে বেশ সময় লাগতে পারে। এক্ষেত্রে কূটনৈতিক তৎপরতার পাশাপাশি সমঝোতাই মুক্তির মূল উপায়।

সাবেক মেরিনারদের মতে, সাধারণত মুক্তিপণ পাওয়ার সম্ভাবনা দেখলে কোনো নাবিকেরই ক্ষতি করে না জলদস্যুরা। তাই, এমভি আবদুল্লাহর ক্ষেত্রেও যেহেতু মালিক প্রতিষ্ঠান সব কিছু করতে আগ্রহী, তাই ২৩ নাবিকসহ জাহাজটি ছাড়িয়ে আনার ব্যাপারে আশাবাদী তারা।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার (১২ মার্চ) দুপুরে শিল্পগ্রুপ কেএসআরএমের মালিকানাধীন এসআর শিপিংয়ের জাহাজটি জিম্মি করে সোমালিয়ান জলদস্যুরা।

এরপর এদিন বিকেলে জাহাজটি সোমালিয়ার দিকে নিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সেখানে পৌঁছার পর জলদস্যু দলের নেতাদের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে জাহাজ ও তার নাবিকদের ভাগ্য।

গতকাল (বুধবার) সন্ধ্যা ৭টার দিকে নাবিকদের সঙ্গে সর্বশেষ যোগাযোগ হয়েছে কেএসআরএম কর্তৃপক্ষের। ২৩ নাবিককে একটি কেবিনে আটকে রাখা হয়েছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে জাহাজের ইন্টারনেট সংযোগও। ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে নাবিকদের কাছে থাকা মোবাইল, সঙ্গে থাকা ডলারও।

জাহাজটি ৫৮ হাজার মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে ৪ মার্চ আফ্রিকার মোজাম্বিকের মাপুটো বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করে। ১৯ মার্চ সেটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের হামরিয়াহ বন্দরে পৌঁছানোর কথা ছিল।

নাবিক ও ক্রুসহ জাহাজটিতে ২৩ জন বাংলাদেশি রয়েছেন। মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে জাহাজটিকে ভারত মহাসাগর থেকে সোমালিয়ার উপকূলে নিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু করে জলদস্যুরা। জাহাজটি ওই সময় সোমালিয়া উপকূল থেকে ৪৫০ নটিক্যাল মাইল দূরে অবস্থান করছিল।

কবির গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান এসআর শিপিংয়ের মালিকানাধীন ‘এমভি আবদুল্লাহ’ আগে ‘গোল্ডেন হক’ নামে পরিচিত ছিল। ২০১৬ সালে তৈরি বাল্ক ক্যারিয়ারটির দৈর্ঘ্য ১৮৯ দশমিক ৯৩ মিটার এবং প্রস্থ ৩২ দশমিক ২৬ মিটার। গত বছর জাহাজটি এসআর শিপিং কিনে নেয়। বিভিন্ন ধরনের পণ্য নিয়ে আন্তর্জাতিক রুটে চলাচলকারী এরকম মোট ২৩টি জাহাজ আছে কবির গ্রুপের বহরে।

এর আগে ২০১০ সালের ডিসেম্বরে আরব সাগরে সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল বাংলাদেশি জাহাজ জাহান মণি। ওই সময় জাহাজের ২৫ নাবিক এবং প্রধান প্রকৌশলীর স্ত্রীকে জিম্মি করা হয়। নানাভাবে চেষ্টার পর ১০০ দিনের চেষ্টায় জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্তি পান তারা।

পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে