রোজায় বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াতে সময় দেবেন যে কারণে
পদ্মাটাইমস ডেস্ক : আরবি মাস সমূহের নবম মাস হলো মাহে রমজান। দীর্ঘ এক বছর পর এই মহিমান্বিত মাসের পুনরাবৃত্তিতে মুসলিম উম্মাহ আবেগ আপ্লূত ও উচ্ছ্বাসিত হয়ে পড়েন।
রমজানের আগমনে আনন্দের হিল্লোল বয়ে যায় মুমিনের অন্তরে। এ মাসে জাহান্নামের সাতটি দরজা একে একে বন্ধ হয়ে যায় এবং অভিশপ্ত শয়তানকে শিকলবন্দী করে রাখা হয়।
পাপের বোঝা হালকা করার সুযোগ-
মুসলমানদের আমলের পাল্লা ভারী করার পাশাপাশি পাপের বোঝা হালকা করার সুবর্ণ সুযোগ থাকে। রমজানের রহমত, মাগফেরাত এবং নাজাতের দিনগুলোতে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে পুরস্কারের ঘোষিত হতে থাকে।
এই ফজিলতপূর্ণ মাসের শান, মান-মর্যদা অন্য মাসের তুলনায় বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ হলো- এই মাসে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে তার প্রিয় রাসূল, আমাদের প্রাণের নবী হজরত মুহাম্মাদ সা.-এর উপরে হেদায়াতের সর্বোচ্চ গ্রন্থ পবিত্র কোরআন মাজিদ অবর্তীর্ণ হয়েছে।
এই মাসের শেষ দশকে এমন একটি বরকতপূর্ণ রাত রয়েছে, যা হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ রজনী। যা লাইলাতুল-কদর তথা ভাগ্য রজনী বলে কোরআনের ভাষায় পরিচিত ।
উম্মতে মুহাম্মদীর গড় আয়ু কম হওয়ায়, অন্য উম্মতদের চেয়ে আমলের তুলনায় এগিয়ে থাকার এক পরম অনুগ্রহ মহান আল্লাহ তায়ালার। একরাতে ইবাদত করে হাজার রাতের সওয়াব পাওয়ার এমন সৌভাগ্য অর্জনে সকলেরই মরিয়া হয়ে উঠা উচিত। রমজান বাকি ১১ মাসের গুনাহ মুছে দেয়
এ মাসে রয়েছে গুনাহ মাফের অফুরন্ত সুযোগ। ইমাম ইবনুল জাওযি রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন,
বছরের বারোটি মাস (নবী) ইয়াকুব (আ.)-এর বারো জন পুত্রের ন্যায়৷ তাদের মধ্যে ইউসুফ (আ.) যেমন তার পিতার নিকট সর্বাধিক প্রিয় ছিলেন, তেমনি রমাদান মাসও আল্লাহর নিকট সবচেয়ে বেশি প্রিয়।
আল্লাহ তায়ালা যেভাবে এক ভাই (ইউসুফ আ.)-এর দো’য়ায় এগারো জন (ভাই)-কে ক্ষমা করেছিলেন, ঠিক সেভাবে রমজান মাসে দোয়া এবং ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা আমাদের বাকি এগারো মাসের পাপগুলো ক্ষমা করে দিতে পারেন৷
রমজানে কোরআন তিলাওয়াতে প্রাধান্য দেবেন যে কারণে-
রমজান মাসে সিয়াম সাধনার চাইতে ফজিলতপূর্ণ কোনো আমল না থাকলেও কোরআন অবতরণের মাস হওয়ায়, কোরআন তিলাওয়াত ও অধ্যয়নের সওয়াব কোন অংশে কম ও নয়।
কোরআনের আগমনের এই মাসে মুসলিমদেরকে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিতে হবে কোরআন তিলাওয়াত, অধ্যয়ন এবং পাঠ-পঠনের দিকে। কেননা মহান মালিকের নির্দেশ, তিনি বলেন–
‘রমজান মাস, যে মাসে বিশ্বমানবের জন্য পথপ্রদর্শন এবং সুপথের উজ্জ্বল নিদর্শন এবং হক ও বাতিলের প্রভেদকারী কোআন অবতীর্ণ হয়েছে। (সূরা বাকারা, আয়াত, ১৮৫)
রমজানে নবী-সাহাবী ও পূর্বসূরীদের আমল যেমন ছিল-
দিনের বেলায় দেখে দেখে তেলাওয়াত এবং রাতের বেলায় সালাতুত তারাবি ও কিয়ামুল লাইল উপলক্ষে তিলাওয়াত করা। রাসূল সা. ও তার সাহাবি -তাবেয়ীগণ অন্য মাসের তুলনায় রমজানে অধিক পরিমাণ কোরআন তিলাওয়াত ও তাফসির নিয়ে গবেষণা করতেন। সাহাবিদের মধ্যে কেউ কেউ ৭ দিনে কিংবা কেউ ১০ দিনে কোরআন মাজিদ খতম করতেন।
ইমাম বুখারি রহ.-এর জীবনী থেকে জানা যায় যে, তিনি রমজান মাসে দিনের বেলায় ১ খতম তিলাওয়াত করতেন এবং রাতের বেলায় ৩ রাত অন্তর অন্তর তারাবির নামাজে ১ বার কোরআন খতম করতেন। কোরআনের প্রতি তাদের ভালোবাসা এমনই ছিল।
রোজাদারের জন্য কোরআন ও রোজার সুপারিশ-
রমজানে কোরআন শিক্ষা ও শিখানো, তিলাওয়াত ও অধ্যয়নের গুরুত্ব ও তাৎপর্য বর্ণিত হয়েছে অসংখ্য হাদিসে।
হজরত ওসমান রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সা. ইরশাদ করেন, তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ওই ব্যক্তি যে কোরআন মাজীদ শিক্ষা করে এবং অপরকে শিক্ষা দেয়।
অন্য আরেকটি হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ তায়ালার নিকট সর্বশ্রেষ্ঠ যিকির ও ইবাদত হলো তিলাওয়াতুল কোরআন। এছাড়াও কিয়ামতের বিভীষিকাময় কঠিন দিনে সিয়াম সাধনাকারী এবং কোরআন পাঠকারীর জন্য রোজা ও কোরআন বিশেষ সুপারিশ করবে। বর্ণিত হয়েছে-
`সেদিন সিয়াম ও কোরআন বান্দার জন্য শাফায়াত করবে। রোজা বলবে; হে আমার রব্ব,আমি এই বান্দাকে দিনের বেলায় খাদ্য ও পানীয় থেকে বিরত রেখেছি, কাজেই তার পক্ষে আমার শাফায়াত কবুল করুন।
কোরআন বলবে; হে আমার রব! আমি রাতের বেলায় তাকে ঘুম থেকে বিরত রেখেছি, কাজেই তার পক্ষে আমার সুপারিশ কবুল করুন। তখন তাদের উভয়ের শাফায়াত কবুল করা হবে। (মুসনাদে আহমদ, ২/১৭৪)
কোরআন থেকে দূরে থাকা ব্যক্তির বিরুদ্ধে নবীর অভিযোগ-
কোরআনের সুপারিশ পাওয়ার এমন সুসংবাদে প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর উচিত রমজানে সহীহভাবে কোরআন শিখা ও অপরকে শিখানো এবং বেশি বেশি তিলাওয়াত করা।
কিন্তু দুনিয়ার সফলতা, সুখ্যাতি, কৃতিত্বের তুলনায় আখেরাতের সফলতা তুচ্ছ হওয়া সত্বেও বিবেকবান মুসলমানরা হেদায়েতের সর্বোচ্চ গ্রন্থ থেকে যোজন যোজন মাইল দূরে অবস্থান করছেন।
যারা দুনিয়ায়াতে কোরআনুল কারীম শিখেনি, শিখতে চেষ্টা করেনি এবং তদনুযায়ী আমল করেনি তাদের জন্য বিশ্বনবী কেয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে অভিয়োগ করবেন। পবিত্র কোরআনে এ বিষয়ে বর্ণিত হয়েছে-
রাসূল বলবেন, হে আমার রাব্ব! আমার সম্প্রদায়তো এই কোরআনকে পরিত্যাজ্য মনে করেছিল। (সূরা ফোরকান, আয়াত, ৩০) নবীজির এমন অভিযোগে অনেকেই সেদিন আল্লাহর বিচারের কাঠগড়ায় পাকড়াও হবেন।
এছাড়াও কোরআন থেকে দূরে থাকার অপরাধে মহান রব তার সর্বোৎকৃষ্ট মানুষদেরকে অন্ধত্ব বরণের ও কঠোর হুশিয়ারির বাণী শুনিয়েছেন। বর্ণিত হয়েছে, আর যে ব্যাক্তি আমার জিকির (তথা কোরআন) থেকে দুরে সরে গিয়েছে, তার জন্য আমি দুনিয়াকে করবো সংকুচিত এবং তাকে আমি অন্ধ করে উঠাব। (সূরা ত্বোহা, আয়াত, ১২৪)
সেদিন মানুষ অভিযোগ তুলে বলবে যে, দুনিয়াতে আমি চক্ষুষ্মান ছিলাম, আজ কেন আমি অন্ধ, গায়েব থেকে আওয়াজ এসে জানিয়ে দেওয়া হবে, তুমি দুনিয়াতে যেমনি আল্লাহর কোরআনকে ভুলে গিয়েছো, ঠিক তেমনি আল্লাহও তোমাকে আজ ভুলে গিয়েছে।
সর্বোপরি,আদি পিতা আদম আ.-এর হারিয়ে যাওয়া ঠিকানা, আমাদের আদি বাড়ি জান্নাতুল ফেরদাউসের কাঙ্ক্ষিত মঞ্জিলে পৌঁছাতে কোরআন শিক্ষা করা এবং তদনুযায়ী জীবন অতিবাহিত করার বিকল্প কোনো সুযোগ সৃষ্টি জগতে নেই। কেননা এটাই মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে সর্বশেষ ও চূড়ান্ত পথনির্দেশিকা।
কোরআন নাজিলের এই মহিমান্বিত মাসে মহান মনিবের দরবারে হাত তুলে ফরিয়াদ জানাই, হে মালিক! আপনি আমাদেরকে কোরআনের আলোয় আলোকিত হয়ে জান্নাত উপযোগী মানুষ হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন এবং এই রমজানকে বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর কল্যাণের কারণ হিসেব কবুল করুন।