গাজায় হামাসের শীর্ষ কমান্ডার নিহত
পদ্মাটাইমস ডেস্ক : ইসরায়েলি বাহিনীর বিমান অভিযানে গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের জ্যেষ্ঠ কমান্ডার এবং সামরিক শাখা উপ প্রধান মারওয়ান ইসা নিহত হয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জাতীয় নিরাপত্তা বিয়ষক উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান সোমবার হোয়াইট হাউসে এক ব্রিফিংয়ে নিশ্চিত করেছে এ তথ্য।
এদিকে ইসরায়েলি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, এক সপ্তাহ আগে গাজার নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি বাহিনী অভিযান চালানোর সময় সেই শিবিরের কাছাকাছি একটি ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গে নিহত হয়েছেন মারওয়ান ইসা।
গত ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার জেরে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত সেখানে হামাসের যত সেনা ও কমান্ডার নিহত হয়েছেন, তাদের মধ্যে পদ-পদবির হিসেবে মারওয়ান ইসা সর্বজ্যেষ্ঠ কমান্ডার ছিলেন মারওয়ান।
গোষ্ঠীটির সামরিক শাখা ইজেদাইন আল কাসেম ব্রিগেডের উপ প্রধান ছিলেন তিনি, সেই সঙ্গে ইসরায়েলের ‘মোস্ট-ওয়ান্টেড’ ব্যক্তি।
হামাসের এই নেতা ইউরোপের দেশগুলোর জোট ইউরোপীয় ইউনিয়নেরও (ইইউ) কালো তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ছিলেন। গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভূখণ্ডে যে আকস্মিক হামলা চালিয়েছিল হামাস যোদ্ধারা, তাতে সরাসরি সংশ্লিষ্টতা ছিল তার।
১৯৮৭ সালে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের দাবিতে ধারাবাহিক আন্দোলন ‘ইন্তিফাদা’র সময় ইসরায়েলে গ্রেপ্তার হয়ে ৫ বছর কারাগারে ছিলেন মারওয়ান।
পরে সন্ত্রাসী তৎপরতার অভিযোগে ১৯৯৭ সালে গাজায় তৎকালী ক্ষমতাসীন ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (পিএ) সরকারের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে ২০০০ সাল পর্যন্ত কারাগারে ছিলেন তিনি।
প্রসঙ্গত, গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ইরেজ সীমান্তে অতর্কিত হামলা চালিয়ে সামরিক-বেসামরিক ইসরায়েলি ও বিদেশি নাগরিকসহ ১ হাজার ২০০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করে গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধারা। সেই সঙ্গে জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে যায় আরও ২৪০ জন ইসরায়েলি এবং অন্যান্য দেশের নাগরিককে।
১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর গত ৭৫ বছরের ইতিহাসে সেদিন প্রথম একদিনে এতজন মানুষের হত্যা দেখেছে ইসরায়েল। অভূতপূর্ব সেই হামলার জবাবে সেদিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী এবং তার এক সপ্তাহ পর বিমান বাহিনীর সঙ্গে যোগ দেয় স্থল বাহিনীও।
অভিযানে এ পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৩১ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি, আহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৭৩ হাজার। নিহত ও আহতদের মধ্যে একটি বড় অংশই নারী, শিশু, কিশোর-কিশোরী এবং বেসামরিক লোকজন।
সোমবারের ব্রিফিংয়ে জ্যাক সুলিভান জানান, মারওয়ানের মতো হামাসের অন্যান্য সামরিক কমান্ডাররাও গাজায় সুড়ঙ্গের নিচে আত্মগোপন করে আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
‘হামাসের যেসব শীর্ষ নেতা আত্মগোপন করে আছেন, (মারওয়ান ইসার মতো) তাদের জন্যও ন্যায়বিচার অপেক্ষা করছে,’ ব্রিফিংয়ে বলেন সুলিভান।
তবে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানে বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের হতাহত হওয়ার উচ্চ হারেও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সুলিভান। সেই সঙ্গে গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় সীমান্ত শহর রাফায় সামরিক অভিযান চালানো থেকে ইসরায়েলি বাহিনীকে বিরত থাকার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।
‘আমাদের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, হামাসের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার অধিকার ইসরায়েলের রয়েছে, তবে অভিযানের নামে (ইসরায়েলি বাহিনীর) এমন কিছু করা উচিত হবে না- যা বেসামরিকদের হতাহতের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি করতে পারে।
‘রাফায় অভিযান চালানো হলে আরও বেশি সংখ্যক বেসাসমরিক হতাহত হবে, ফলে যুদ্ধের জেরে ইতোমধ্যে মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়া গাজার সংকট আরও গভীর হবে। এটা সমর্থনযোগ্য নয়।’