আজানের সময় উচ্চস্বরে গান বাজানোয় দোকান মালিককে মারধর

প্রকাশিত: মার্চ ১৯, ২০২৪; সময়: ৩:৩৫ অপরাহ্ণ |
আজানের সময় উচ্চস্বরে গান বাজানোয় দোকান মালিককে মারধর

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : আজানের সময় উচ্চস্বরে গান বাজানোয় দোকান মালিককে মারধর করেছে একদল লোক। মূলত মাগরিবের আজানের সময় লাউডস্পিকারে গান বাজাচ্ছিলেন তিনি। এই ঘটনায় তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ।

চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কর্নাটকের বেঙ্গালুরুতে। সোমবার (১৮ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেঙ্গালুরুতে নিজের দোকানে লাউডস্পিকারে ভজন বাজানোর অভিযোগে একদল লোকের ওই দোকানিকে মারধর করেছেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। এছাড়া হামলার সাথে জড়িত অন্যদের আটক করতে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ।

টাইমস অব ইন্ডিয়া বলছে, ঘটনাটি ঘটেছে উলসোরগেটের নাগার্টপেটে। মারধরেরর শিকার মুকেশের দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ হত্যাচেষ্টার অভিযোগে তিন যুবককে গ্রেপ্তার করেছে। বর্তমানে হেফাজতে থাকা ওই অভিযুক্তদের পরিচয় অবশ্য জানা যায়নি।

তদন্তে জানা গেছে, মুকেশ সন্ধ্যায় লাউডস্পিকারে করে ভজন বাজানো শুরু করলে কয়েকজন ব্যক্তি তাতে আপত্তি জানান। তারা জানান, লাউডস্পিকারে এই গান তাদের সন্ধ্যার (মাগরিবের) নামাজে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। তুমুল তর্ক-বিতর্কের পর তারা মুকেশের ওপর হামলা চালায় এবং পরে তারা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।

এদিকে মঙ্গলবার পৃথক প্রতিবেদনে আরেক ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, আজানের সময় উচ্চস্বরে গান বাজানোর অভিযোগে বেঙ্গালুরুর এক দোকানদারকে লাঞ্ছিত করা নিয়ে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ছড়িয়ে পড়েছে। দোকানদার দাবি করেছেন, হামলার সময় তিনি মধ্য বেঙ্গালুরুতে তার দোকানে হনুমান চালিসা বাজাচ্ছিলেন।

পুলিশ বলেছে, তারা এই অভিযোগের সমর্থনে কোনও যথেষ্ট প্রমাণ পায়নি এবং অভিযোগে এটি উল্লেখও করা হয়নি। পুলিশ আরও স্পষ্ট করেছে, মারামারির ঘটনাটি সাম্প্রদায়িক কোনও বিষয় ছিল না।

একজন সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ‘অভিযোগে হনুমান চালিসার কোনও উল্লেখ নেই। যেসব ব্যক্তি দোকানদারকে লাঞ্ছিত করেছেন তাদের মধ্যে হিন্দু ও মুসলিম উভয়ই অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন।’

এফআইআর অনুসারে, গত রোববার সন্ধ্যায় সিদ্দনাগল্লিতে উচ্চস্বরে গান বাজানো নিয়ে দোকানদার মুকেশ এবং কলোনির কিছু লোকের মধ্যে লড়াই শুরু হয়।

সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, জোরে জোরে ভজন বাজানো নিয়ে একদল লোক দোকানদারের মুখোমুখি হয়। একপর্যায়ে একজন ব্যক্তি মুকেশের কলার চেপে ধরলে তর্ক শিগগিরই হিংসাত্মক রূপ নেয়।

পরে ক্ষুব্ধ লোকেরা তাকে দোকান থেকে টেনেহিঁচড়ে বাইরে নিয়ে মারধর করে। হামলার পর লোকেরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় এবং দোকানদার রক্তাক্ত মুখ নিয়ে দোকানে ফিরে আসেন।

ভারতীয় বার্তাসংস্থা এএনআইকে মুকেশ বলেন, ‘আমি হনুমান ভজন বাজাচ্ছিলাম। চার থেকে পাঁচজন লোক এসে বললো আজানের সময় হয়ে গেছে এবং গান বাজালে আমাকে মারধর করার হুমকি দেয়। তারা আমাকে মারধর করে এবং আবারও হুমকি দেয়, তারা আমাকে ছুরি দিয়ে আঘাত করবে।’

হামলার দায়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং পুলিশ জানিয়েছে, তদন্ত এখনও চলছে। তিন অভিযুক্তের মধ্যে দুজন মুসলিম এবং অন্যজন হিন্দু বলেও জানিয়েছে পুলিশ।

এদিকে কর্ণাটক বিজেপি সভাপতি বিওয়াই বিজয়েন্দ্র রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সিদ্দারামাইয়া নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস সরকারকে আক্রমণ করেছেন এবং পুলিশকে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

হিন্দু ও হিন্দুদের প্রতিষ্ঠানের ওপর হামলার জন্য মুখ্যমন্ত্রী এবং তার সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, সিদ্দারামাইয়ার ‘তুষ্টির রাজনীতি’ বর্বরদেরকে রাজ্যে তাণ্ডব চালাতে উৎসাহিত করেছে।

এছাড়া বিজেপির লোকসভা প্রার্থী তেজস্বী সূর্য আগামীকাল (বুধবার) দুপুরে মুকেশের দোকানে বিশাল কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন এবং সেসময় তিনি সেখানে লাউডস্পিকারে হনুমান চালিসা বাজানোর পরিকল্পনা করেছেন।

এই নেতা ‘হনুমান চালিসা’ যেন পুরো এলাকায় প্রতিধ্বনিত হয় তা নিশ্চিত করতে বিজেপি কর্মীদের বলেছেন। যদিও বিজেপির এই কর্মসূচির অনুমতি দিতে পুলিশ অস্বীকার করেছে বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।

পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে