রাজশাহী আ.লীগ থেকে ‘মীরজাফর-মোস্তাকদের’ বিতাড়িত করার ঘোষণা
নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীর আওয়ামী লীগ থেকে ‘মীরজাফর ও মোস্তাকদের’ বিতাড়িত করার ঘোষণা দিয়েছেন দলটির নেতারা। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার বিকালে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা এই ঘোষণা দেন।
রাজশাহী মহানগরীর গণকপাড়া সংলগ্ন জয় বাংলা চত্বরে এ সভার আয়োজন করা হয়। এ সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অনিল কুমার সরকার সভাপতিত্ব করেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন মহানগরের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল।
এই সভা থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়, গত ৯ মার্চ পল্লি উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী আবদুল ওয়াদুদ দারাকে যে স্থানে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে, সেই স্থানটিকে ‘পবিত্র’ করা হবে। এ জন্য সেখানে ইসলামী জালসার আয়োজন করে দোয়া-কালাম পড়া হবে। গত ৯ মার্চ নগরীর সাহেববাজার বড় মসজিদ প্রাঙ্গনে প্রতিমন্ত্রী হওয়ায় রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনের এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ দারাকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের ব্যানারেই ওই সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়।
ওই অনুষ্ঠানে রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী রাজশাহীর আওয়ামী লীগকে ‘রাহুমুক্ত’ করার ঘোষণা দেন। আর রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের এমপি আবুল কালাম আজাদ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অনিল কুমার সরকারকে অশ্লীল ভাষায় গালি দেন। বৃহস্পতিবারের আলোচনা সভায় এসবের তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘একজন (প্রতিমন্ত্রী দারা) কিছু একটা হয়ে গেছেন, তাঁকে সংবর্ধনা দিতেই পারেন। লোক ভাড়া করে আনা হলো, সাহেববাজার বড় মসজিদ প্রাঙ্গনটিকে কলুষিত করা হলো।’ সংগঠনের নামে আমরা দেখলাম অন্যকে গালাগালি করে ছোট করার অপপ্রয়াস করা হলো।
এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর প্রতি ইঙ্গিত করে লিটন বলেন, ‘দেখলাম, সেই মঞ্চে যার গায়ে ছাত্রদলের গন্ধ, যার গায়ে ফ্রিডম পার্টির গন্ধ, যার পরিবারে এখনও স্বাধীনতার বিপক্ষের মানুষের চলাচল আছে, যার নিজের এলাকায় তাকে গডফাদার বলা হয়, কীসের গডফাদার আমি সেটা বলতে চাই না। তিনি ঘোষণা করলেন- রাজশাহীর আওয়ামী লীগকে জনগণের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হলো। আরে উনি তো নিজেই ছাত্রদল, ফ্রিডম পার্টি করে এসেছেন, উনি আবার আওয়ামী লীগকে রাহুমুক্ত করবেন কীভাবে! আমরা জন্মগতভাবে রক্তের মধ্যে দিয়েই আওয়ামী লীগ করি।’
লিটন বলেন, ‘আমরা মনে করি, বড় মসজিদ প্রাঙ্গন সেটাকে কলুষিত করার জন্য সেখানে মিলাদ দিয়ে পবিত্র করা দরকার। আমরা সেটা করতে চাই। ঈদের পরেই আমরা সেখানে ইসলামী জালসা দিয়ে মওলানাদের ডেকে এনে, দোয়া-কালাম পড়িয়ে পবিত্র করতে চাই। কারণ, কিছু রাজাকার, কিছু বিএনপি, জনগণের ভোটে তারা কতটুকু এগিয়ে আছেন আমি সে প্রশ্নে যাব না। তারা ওখানে বড় বড় কথা বলে আমাকে, আমাদেরকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে।’
সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের এমপি আসাদুজ্জামান আসাদ। তিনি বলেন, ‘কিছুদিন আগে কিছু রাজাকারশাবক রাজশাহীকে অশান্ত করতে এসেছিল। তারা খায়রুজ্জামান লিটনের পায়ের নিচে বসে নেতা হয়েছে। যারা কয়দিন আগে জিন্দাবাদ শ্লোগান দিয়েছে, তারা এখন নোংরা কথা বলবে এটাই স্বাভাবিক। রাজাকারশাবকদের বলব, যদি সাহস থাকে, ক্ষমতা থাকে কোথায় সমাবেশ করবেন জানাবেন। সেখানে গিয়ে ওই মঞ্চে দাঁড়িয়েই আপনাদের মুখোশ উন্মোচন করতে চাই।’
রাজশাহী-২ (সদর) আসনের স্বতন্ত্র এমপি ও মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শফিকুর রহমান বাদশা বলেন, ‘লিটনকে ছোট করে কেউ যদি মনে করেন বড় হবেন, তাহলে তিনি আহাম্মুক। এখন ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। আমরা এই ষড়যন্ত্রকারীদের উৎখাত করব।’ রাজশাহী-৪ আসনের সাবেক এমপি এনামুল হক ও রাজশাহী-৫ আসনের সাবেক এমপি ডা. মনসুর রহমান ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। এনামুল হক বলেন, ‘গাছের থেকে পরগাছা বড় হয়ে গেছে। তারা মূল গাছ সম্পর্কে কটূ কথা বলছেন। তাদের বলব শিষ্টাচার মেনে রাজনীতি করুন নইলে পালাবার জায়গা পাবেন না। তিনি ‘আগাছা’ দূর করে রাজশাহী জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি করার অনুরোধ জানান।
মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী কামাল বলেন, ‘বাংলার মাটিতেই মীরজাফর-মোস্তাকের জন্ম হয়েছে। রাজশাহীতে কেন নতুন করে এদের জন্ম হবে না? জন্ম হয়েছে, আমরা প্রতিহত করব।’ জেলার সভাপতি অনিল কুমার সরকার বলেন, ‘সংবর্ধনার মঞ্চ থেকে কালাম (এমপি আবুল কালাম আজাদ) আমাকে গালি দিয়েছেন। কোন ভদ্র-শিক্ষিত মানুষ এটা করেন না। এর বিচারের ভার আমি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদেরই দিলাম।’
আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বেগম আখতার জাহান, রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ডা. মুনসুর রহমান, রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক, মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ডা. তবিবুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাড. আসলাম সরকার, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আলফোর রহমান, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এ্যাড. শরিফুল ইসলাম শরিফ, পুঠিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার রহিম কনক,বাঘা পৌরসভার মেয়র আক্কাস আলী, জেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজবুল ইসলাম, মতিহার থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আলাউদ্দিন, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আব্দুল মমিন,মহানগর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আকতার আলী, জেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ খান, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান রানা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা হিল গালিব, মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ডা. সিরাজুল মুবিন সবুজ।
সভা পরিচালনা করেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক লায়েব উদ্দিন লাভলু ও মহানগরের যুগ্ম সম্পাদক মোস্তাক হোসেন।
সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, রাজশাহী মহানগরের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নওশের আলী, সৈয়দ শাহাদত হোসেন, উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আরিফুল হক কুমার, মজিবুর রহমান মন্ডল, সাবেক সংসদ সদস্য রায়হানুল হক, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মাঞ্জাল, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি বদরুজ্জামান রবু, আব্দুল মজিদ, মহানগর আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক মাহাবুব-উল-আলম বুলবুল, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক মীর তৌফিক আলী ভাদু, আইন বিষয়ক সম্পাদক এ্যাড. মুসাব্বিরুল ইসলাম, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক জিয়া হাসান আজাদ হিমেল, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক ফিরোজ কবির সেন্টু, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক জাহিদুল ইসরাম জাহিদ, শিল্প ও বানিজ্য বিষয়ক সম্পাদক ওমর শরীফ রাজিব, শ্রম সম্পাদক আব্দুস সোহেল, সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক কামারউল্লাহ সরকার কামাল, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা: ফ ম আ জাহিদ, জেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক মেহবুব হাসান রাসেল, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আখতারুজ্জামান আখতার, মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা এ্যাড. পূর্ণিমা ভট্টাচার্য, মহানগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ হাবিবুল্লাহ ডলার, সদস্য এ্যাড. মোজাফফর হোসেন, মোশফিকুর রহমান হাসনাত, নজরুল ইসলাম তোতা, হাবিবুর রহমান বাবু, শাহাব উদ্দিন, বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. আব্দুল মান্নান, আতিকুর রহমান কালু, হাফিজুর রহমান বাবু, আব্দুস সালাম, বাদশা শেখ, ইউনুস আলী, এ্যাড. রাশেদ-উন-নবী আহসান, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ফারুক হোসেন ডাবলু, প্রভাষক শরিফুল ইসলাম, এস এম তৌহিদ হাসান তুহিন, গোলাম রাব্বানী, থানা আওয়ামী লীগের মধ্যে রাজপাড়া থানার সাধারণ সম্পাদক শেখ আনসারুল হক খিচ্চু, বোয়ালিয়া (পশ্চিম) থানার সাধারণ সম্পাদক শামসুজ্জামান রতন, মতিহার থানার সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন, ভবানীগঞ্জ পৌর মেয়র আব্দুল মালেক, নগর শ্রমিক লীগ সভাপতি আকতার আলী, নগর কৃষক লীগ সভাপতি রহমতউল্লাহ সেলিম, জেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক ওয়াজেদ আলী, নগর মহিলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সালমা রেজা, সাধারণ সম্পাদক কানিজ ফাতেমা মিতু, নগর যুব মহিলা লীগ সভাপতি এ্যাড. ইসমত আরা, সাধারণ সম্পাদক নিলুফার ইয়াসমিন নিলু, নগর ছাত্রলীগ সভাপতি নূর মোহাম্মদ সিয়াম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সভাপতি বাবু, রুয়েট ছাত্রলীগ সভাপতি লতিফ, সাধারণ সম্পাদক সৌমিক সাহা প্রমুখ।