ইতিকাফের সময় করণীয় ও বর্জনীয়
পদ্মাটাইমস ডেস্ক : রমজান ইবাদতের মাস। ইবাদতের মাধ্যমে নিজেকে পরিশুদ্ধ করার মাস। এই মাসে বিভিন্ন ইবাদতের মধ্যে ইতিকাফ একটি অন্যতম ইবাদত।
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনেক নফল ইবাদত করতেন আবার কখনো ছেড়ে দিতেন; কিন্তু মদিনায় হিজরতের পর জীবদ্দশায় রমজানের শেষ দশকের ইতিকাফ কখনো ছাড়েননি। (সহিহ বুখারি : ২০২৬)
ইতিকাফ কী?
আরবি ইতিকাফ শব্দের অর্থ অবস্থান করা, আবদ্ধ করা, আবদ্ধ হওয়া বা আবদ্ধ রাখা। সাংসারিক প্রয়োজন, দুনিয়াবি মোহ-মায়া ও ব্যস্ততা থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে, আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় ধ্যান করাকে ইতিকাফ বলে।
শরীয়তের পরিভাষায়, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতসহকারে নিয়মিত আদায় করা হয় এমন মসজিদগুলোতে আল্লাহর ইবাদতের উদ্দেশ্যে নিয়তসহকারে অবস্থান করাকে ইতিকাফ বলে।
ইতিকাফরত বান্দা, আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় দুনিয়াবি সকল চাহিদা থেকে নিজেকে মুক্ত করে নেয়। ইতিকাফের মাধ্যমে আল্লাহর রহমত লাভ করা যায়।
ইতিকাফের বিধান
রমজানের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা কিফায়া। একজন ইতিকাফ করলে পুরো মহল্লাবাসীর পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যাবে। আর যদি কেউ ইতিকাফ না করে তাহলে সবাই গুনাহগার হবে।
কোরআনুল কারিমে বলা হয়েছে, ‘মনে কর সেই সময়কে, যখন আমি কাবা ঘরকে মানুষের মিলনক্ষেত্র ও আশ্রয়স্থল করেছিলাম। আর আমি বলেছিলাম, তোমরা ইব্রাহিমের দাঁড়ানোর জায়গাকেই নামাজের জায়গারূপে গ্রহণ কর।
আর আমি ইব্রাহিম ও ইসমাইলকে আদেশ করি; তোমরা আমার ঘরকে পবিত্র রাখবে, তাদের জন্য যারা এটা প্রদক্ষিণ করবে, এখানে বসে ইতিকাফ করবে এবং এখানে রুকু ও সিজদা করবে।’ (সূরা বাকারা, আয়াত : ১২৫)।
হাদিসে ইতিকাফের ফজিলত
রমজানের শেষ দশকের ইতিকাফের গুরুত্ব অপরিসীম। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইতিকাফ করেছেন, সাহাবিরাও করেছেন। হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বলেন, ইন্তেকাল পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করেছেন, এবং তাঁর স্ত্রীরাও ইতিকাফ করেছেন।’ (বুখারি, হাদিস : ১,৮৬৮; মুসলিম, হাদিস : ২,০০৬)
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমি কদরের রাতের সন্ধানে প্রথম ১০ দিন ইতিকাফ করলাম। এরপর ইতিকাফ করলাম মধ্যবর্তী ১০ দিন। এরপর অহির মাধ্যমে আমাকে জানানো হলো যে তা শেষ ১০ দিনে। সুতরাং তোমাদের যে ইতিকাফ পছন্দ করবে, সে যেন ইতিকাফ করে।’ এরপর মানুষ তাঁর সঙ্গে ইতিকাফে শরিক হয়। (মুসলিম)
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাসের শেষ দশদিন ইতিকাফ করবে, তাকে দুটি হজ ও দুটি ওমরা পালন করার সওয়াব দান করা হবে। (শুয়াবুল ঈমান, হাদিস : ৩৬৮০)
অন্য হাদিসে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য একদিন ইতিকাফ করবে। আল্লাহ তায়ালা ওই ব্যক্তি ও জাহান্নামের মাঝে তিন খন্দক দূরত্ব সৃষ্টি করে দেবেন। যা দৈর্ঘ্যে ও প্রস্থে পূর্ব পশ্চিম দিগন্ত থেকেও বেশি দূরত্ব সম্পন্ন হবে। (শুয়াবুল ঈমান, হাদিস : ৩৬৭৯)
ইতিকাফের সময় করণীয় ও বর্জনীয়
১. ওয়াজিব ও সুন্নত ইবাদতগুলো সময়মতো পালন করা।
২. বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত ও নফল ইবাদত করা।
৩. রাতের যতক্ষণ সময় জেগে থাকবেন ততক্ষণ জিকির, নফল নামাজ পড়া।
৪. অতীতের পাপের জন্য তওবা করা ও সামনের দিনগুলোতে পাপ না করার দৃঢ়প্রতিজ্ঞা করা।
৫. বিজোড় রাতগুলোর পুরো সময় ইবাদতে কাটানোর চেষ্টা করা।
৬. বেশি বেশি ইস্তেগফার ও দরুদপাঠ করা।
৭. কথাবার্তা, আচার-আচরণ ও ওঠাবসায় কাউকে কষ্ট না দেওয়া।
৮. বিশেষ ও দ্বীনি প্রয়োজন ছাড়া কারো সঙ্গে কথা না বলা। কারণ, ইতিকাফের সময় কথা বলা মাকরুহ।
৯. আড্ডার আসর জমানো নাজায়েজ।
১০. ধর্মীয় বই পুস্তক ছাড়া অন্য কোনো বইপুস্তক পড়া যাবে না।
১১. মোবাইল, ইন্টারনেট ও গুনাহের উপকরণ অবশ্যই পরিহার করতে হবে।
১২. আল্লাহর নৈকট্য ও কদরের রাত্রির ফজিলত ও রহমত লাভের চেষ্টা করা।