তিন বছর ধরে সেই কলেজছাত্রের পরিবারকে হয়রানি করছে পুলিশ
নিজস্ব প্রতিবেদক: গত তিন বছর ধরে কলেজছাত্র ইসমাইল হোসেনের পরিবারকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করে আসছেন গোদাগাড়ী থানার সেই এসআই আতিকুর রহমান। সর্বশেষ গত রোববার রাতে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে একটি মাদক মামলায় ইসমাইলকে কারাগারে পাঠান তিনি। ওই মামলার গ্রেপ্তারী পরোয়ানার আসামীর সঙ্গে নামের মিল থাকায় সুযোগ নেন এসআই আতিকুর।
এদিকে নামের মিল থাকায় মাদক মামলায় কলেজছাত্রকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় গোদাগাড়ী থানার ওসি আব্দুল মতিন ও এসআই আতিকুর রহমানের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে ভূক্তভোগী কলেজছাত্র ইসমাইল হোসেনের ভাই আব্দুল হাকিম রুবেল। বুধবার (১৫ মে) দুপুরে রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি ও রাজশাহী পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন তিনি।
আব্দুল হাকিম রুবেল অভিযোগ করেন, ২০২১ সাল থেকে এসআই আতিকুর রহমান তাদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করে আসছেন। সর্বশেষ আমার কলেজ পড়ুয়া ছোটভাই ইসমাইল হোসেনকে ধরে নিয়ে গিয়ে কারাগারে পাঠিয়ে পরিবারের মানক্ষুন্ন করেন।
এর আগে গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগে আমার পিতা আব্দুল করিমকে ধরে নিয়ে গিয়ে নাশকতার মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠায়। এসব ঘটনা তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার দাবি জানান তিনি।
আব্দুল হাকিম রুবেল জানান, ২০২১ সালে জমি নিয়ে আমার চাচা গোলাম মোস্তফার সঙ্গে দ্বন্দ্ব হলে তিনি আমাদের বিরুদ্ধ থানায় অভিযোগ দেন। ২০২১ সালের ২০ ও ২২ জানুয়ারি দুইদিন ওই অভিযোগের তদন্তে যান গোদাগাড়ী থানার এসআই আতিকুর রহমান। তদন্তে গিয়ে তিনি আমার বৃদ্ধ পিতা-মাতার সঙ্গে অশালীন আচরণ ও তাদের অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন।
এসময় তিনি আমাদের উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকিও দেন। এ ঘটানার প্রতিকার চেয়ে ২৬ জানুয়ারি এসআই আতিকুর রহমানের বিরুদ্ধে রাজশাহী জেলা পুলিশ সুপার বরাবর অভিযোগ দেন আমার পিতা। এরপর আমাদের উপর আরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন এসআই আতিকুর। এরপর থেকে তিনি আমাদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করে আসছেন।
এসব বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে গোদাগাড়ী মডেল থানার এসআই আতিকুর রহমান বলেন, জমি নিয়ে ঝামেলা তদন্তে একবার তাদের বাড়িতে গিয়েছিলাম। সেসময় আমার সঙ্গে তৎকালিন ওসি কামরুল ইসলাম ছিলেন। সেদিন আমি নিজে কিছু বলিনি যা বলার ওসি স্যারই বলেছেন। সেদিন আমার মোবাইল ডিউটি থাকায় সেখানে গিয়েছিলাম।
রাজশাহী জেলা পুলিশ সুপার সাইফুর রহমান বলেন, নামের মিল থাকায় কলেজছাত্র ইসমাইল হোসেনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানোর বিষয়ে ভূক্তভোগীর পরিবারের পক্ষ থেকে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। আমরা সেটি তদন্ত করে দেখব। অভিযোগ সত্য হলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
গত সোমবার নামের মিল থাকায় কলেজছাত্র ইসমাইল হোসেনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায় এসআই আতিকুর রহমান। কলেজছাত্রের পরিবারের আপত্তি না মানলেও পরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে পুনঃতদন্ত শেষে ‘ভুল করে’ তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে আদালতে প্রতিবেদন দেয় পুলিশ। এর পর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ইসমাইল কারাগার থেকে মুক্তিপান।
ভুক্তভোগী ইসমাইল হোসেন (২১) গোদাগাড়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের একাদশ শ্রেণির মানবিক বিভাগের ছাত্র। তিনি গোদাগাড়ী পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ফাজিলপুর গ্রামের আব্দুল করিমের ছেলে। তার মায়ের নাম মোসা. মনোয়ারা বেগম।
অপরদিকে, ৫০ গ্রাম হেরোইন রাখার মাদক মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আসামির নাম ইসমাইল হোসেন (২০)। তিনি একই ওয়ার্ডের লালবাগ হেলিপ্যাড গ্রামের আব্দুল করিমের ছেলে। তার মায়ের নাম মোসা. বেলিয়ারা।
ওই মামলার বিবরণে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ২৯ আগস্ট রাত পৌনে ১১টার দিকে গোদাগাড়ীর মাদারপুর জামে মসজিদ মার্কেটের সামনে থেকে ইসমাইল হোসেনকে ৫০ গ্রাম হেরোইনসহ গ্রেপ্তার করে রাজশাহী জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
রাতেই তার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য আইনে গোদাগাড়ী মডেল থানায় মামলা করেন ডিবির এসআই ইনামুল ইসলাম। এর পরের দিন তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। এক মাস পর ৩০ সেপ্টেম্বর মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ইসমাইল হোসেন জামিনে মুক্তি পান। এরপর তিনি ভারতের চেন্নাই চলে যান। সেখানে গিয়ে তিনি তার বাবার সঙ্গে কাঠমিস্ত্রির কাজ করছেন। তার বাবা আব্দুল করিম ছয় বছর ধরে চেন্নাই আছেন।