বহিষ্কার হওয়ার পর যা বললেন রাবির সেই ৪ ছাত্রলীগ নেতা
নিজস্ব প্রতিবেদক, রাবি : শৃঙ্খলা ও মর্যাদা পরিপন্থী কার্যকলাপে লিপ্ত হওয়ার অভিযোগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের ৪ ছাত্রনেতাকে বহিষ্কার করেছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ।
তবে ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্টতা নেই দাবি একাধিক ছাত্রনেতার। এমনকি ঘটনা দ্বিপাক্ষিক হলেও একপাক্ষিকভাবে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে দাবি এই বহিস্কৃত ছাত্রনেতাদের।
বহিস্কৃত ছাত্রনেতারা বলছেন, ঘটনার সাথে তাদের সংশ্লিষ্টতা নেই। হলের সিসিটিভি ফুটেজ দেখার দাবি তাদের। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের এমন সিদ্ধান্ত একপাক্ষিক হয়েছে বলে দাবি তাদের। ঘটনায় পত্রিকা বা গণমাধ্যমে নাম না উঠলেও বিনা কারণে বহিস্কৃত হয়েছেন। তবে ঢাকায় গিয়ে সরাসরি কথা বলবেন জানান এই ছাত্রনেতারা।
বহিষ্কৃত ছাত্রনেতা ও শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি শাহিনুল সরকার ডন বলেন, কি থেকে কি হয়েছে আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ থেকে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা চারজনের মধ্যে আমার নাম উল্লেখ থাকলেও প্রকৃতপক্ষে ঘটনার সাথে আমার কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতা নেই।
ঘটনায় হলের সিসিটিভি ফুটেজ চেক করলে আমাকে পাওয়া যাবে না। এমন সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ আমার বিরুদ্ধে গিয়েছে। সাতদিন সময় দেওয়া হয়েছে কেন্দ্র থেকে। ঘটনার সাথে আমার সংশ্লিষ্টতা নেই এবং আমি নির্দোষ এ বিষয়টি ঢাকায় গিয়ে সরাসরি কথা বলবো।
শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নিয়াজ মোর্শেদ বলেন, ঘটনাগুলো দ্বিপাক্ষিক হলেও শুধু আমাদের বহিষ্কার করা হয়েছে। ওই দলের বিরুদ্ধে (বাবু-গালিব) এখন পর্যন্ত সাংগঠনিকভাবে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখিনি। আমাদের কারণ নির্দেশনার জন্য সাত দিন সময় দেওয়া হয়েছে কিন্তু ঢাকা যাবো কিনা এখনও সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি।
বুধবার (১৫ মে) ছিনতাইয়ের অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে উঠেছে তা সম্পূর্ণ বানোয়াট ও মিথ্যাচার। তা রাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুজনের পূর্ব পরিকল্পিত।
আমি আতিকের (হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা) রুমে যায়ই নি। তাহলে আমি তার রুমে ভাঙচুর কিভাবে করব অথবা টাকা কিভাবে হাতিয়ে নিবো? এগুলা আমার বিরুদ্ধে সাজানো একটা নাটক এবং পূর্বপরিকল্পিত।
আরেক বহিস্কৃত ছাত্রনেতা ও শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান অপু বলেন, খুবই একটি বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছি। এ ঘটনায় পত্রিকা বা গণমাধ্যমে কোথাও আমার নামে অভিযোগ না আসলেও বাংলাদেশ ছাত্রলীগ থেকে আমাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কিসের ভিত্তিতে বহিষ্কার করা হয়েছে এটা আমার জানা নেই।
তবে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ যে সিদ্ধান্ত নিবে আমি তা মাথা পেতে নেব। আমি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের রাজনীতি করি। ক্যাম্পাসের কারও রাজনীতি করিনা। এছাড়া ঢাকায় গিয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাথে কথা বলে বিষয়টা সমাধান করার চেষ্টা করবেন বলে জানান এই ছাত্রনেতা।
বহিষ্কৃত নেতা শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কাবিরুজ্জামান রুহুল বলেন, ঘটনা যাই হোক আমাদের সর্বোচ্চ অভিভাবক বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ থেকে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সে বিষয়ে আমি কোন মন্তব্য করতে রাজি নই। ছাত্রলীগের কর্মী হিসাবে আমরা তাদের সিদ্ধান্ত মানতে বাধ্য।
তবে আমি গণমাধ্যমের মাধ্যমে জানতে পেরেছি পান্থ ভাই নাকি (কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক) বলেছেন আমরা নির্দোষ হলে অবশ্যই আমাদের বহিষ্কারাদেশ বাতিল করা হবে। তাই ঢাকায় গিয়ে আমরা লিখিতভাবে আমাদের অবস্থান ব্যক্ত করবো।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় শাখার তত্বাবধায়ক ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের উপ-শিক্ষা ও পাঠ্যক্রম সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বলেন, ছাত্রলীগের কোন নেতা-কর্মী নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে জড়ালে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ গুরুত্বের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে। ইতোমধ্যে কয়েকজনকে বহিষ্কারও করা হয়েছে। আমরা শীঘ্রই সাংগঠনিক সফরে এসে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করব।
প্রসঙ্গত, এর আগে ১১ মে রাতে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে গেস্ট রুমে বসাকে কেন্দ্র করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের দুপক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে ইটপাটকেল নিক্ষেপ, ককটেল বিষ্ফোরণ ও অস্ত্রের ঝনঝনানিতে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় ক্যাম্পাস।
সোহরাওয়ার্দী হলসহ আশেপাশের হলগুলোতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করে। ঘটনার এক দিন পর ১৩ মে রাতে পুনরায় একই স্থানে অস্ত্রের মহড়া দিতে দেখা যায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের।
এ ঘটনায় গত মঙ্গলবার (১৪ মে) সংগঠনের শৃঙ্খলা ও মর্যাদা পরিপন্থী কার্যকলাপে লিপ্ত হওয়ার অভিযোগে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সংসদ রাবি শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি শাহিনুল সরকার ডন, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নিয়াজ মোর্শেদ, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান অপু এবং সাংগঠনিক সম্পাদক কাব্বিরুজ্জামান রুহুল এই চার নেতাকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করে।
পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে কেন পরবর্তী সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না তার লিখিত জবাব আগামী ৭ দিনের মধ্যে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের দপ্তর সেলে জমা দেয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।