বাগমারায় টুংটাং শব্দে মুখরিত কামারপট্টি

প্রকাশিত: জুন ১১, ২০২৪; সময়: ১:৩১ অপরাহ্ণ |
বাগমারায় টুংটাং শব্দে মুখরিত কামারপট্টি

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাগমারা : মুসলমানদের দরজায় কড়া নাড়ছে পবিত্র ঈদ-উল-আযহা। আর মাত্র কয়েকদিন পরই কোরবানির ঈদ। এই ঈদের অন্যতম কাজ হচ্ছে পশু জবাই করা। ঈদ-উল আযহাকে সামনে রেখে পশু জবাইয়ের সরঞ্জাম প্রস্তুত করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার কামার শিল্পের কারিগররা।

লোহা পুড়িয়ে তৈরি হচ্ছে দা-বটি ও চাপাতিসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদি। কামার পাড়ায় এখন কারিগরদের যেন দম ফেলারও সময় নেই।

খাওয়া-দাওয়া ভুলে কাজ করছেন তারা। ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে কাজ। সারা বছর তেমন কাজ না থাকলেও কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে কয়েকগুণ ব্যস্ততা বেড়ে যায় তাদের।

কোরবানির পশু জবাই ও মাংস কাটার দা, ছুরি, বটি, চাপাতি, ধামা-দা তৈরিতে ও পুরনো দা, ছুরিতে নতুন করে শান দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন উপজেলার হাট বাজারসহ বিভিন্ন পাড়ার কামার শিল্পীরা। কোরবানির ঈদ এসে পড়ায় পুরোদিন ব্যস্ততার মাঝেও গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করতে হচ্ছে কামার শিল্পীদের।

সারা বছর তেমন কাজ না থাকলেও কোরবানিতে নতুন দা, ছুরি, চাপাতি, বটি, চাকু তৈরির পাশাপাশি উপজেলার প্রতিটি পরিবারের পুরনো দা, ছুরি, বটি, চাপাতি, চাকুতে শান দিতে ভিড় করছে কামার শিল্পীদের কাছে।

আবার কেউ কেউ এসব যন্ত্রপাতি কিনতেও ভিড় করছে। এ সুযোগে তাদের কাজের দামও বেড়ে গেছে দ্বিগুণ। অন্যান্য সময়ের তুলনায় দা, ছুরিতে শান দিতে গুনতে হচ্ছে দ্বিগুণ টাকা।

উপজেলার ভবানীগঞ্জ, মোহনগঞ্জ, মাদারিগঞ্জ, মচমইল, তাহেরপুর, হাট গাঙ্গোপাড়া,দামনাশ, নরদাশ, সিকদারীসহ অভ্যন্তরীন বেশ কয়েকটি বাজারে গিয়ে কামার শিল্পীদের এ ব্যস্ততা দেখা যায়।

হাঁপরের কয়লার চুলায় দগদগে আগুনে গরম লোহার পিটাপিটিতে টুংটাং শব্দে মুখর হয়ে উঠেছে এসব কামারের দোকান। কেউ হাঁপর টানছেন, সেই হাঁপরে পুড়ছেন কয়লা, জ্বলছে লোহা। কেউ কেউ হাতুড়ি পিটিয়ে তৈরি করছেন দা, বটি, ছুরিসহ মাংস কাটার বিভিন্ন সরঞ্জাম।

পবিত্র ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে বেশ আগে থেকেই ব্যস্ততা বেড়েছে বলে জানান, মচমইল বাজারের কামার আব্দুল আলিম। তিনি জানান, রাত-দিন সমান তালে কাজ করতে হচ্ছে। কোরবানির সময় শ্রমিক কর্মচারীদের মজুরি বাড়িয়ে দিতে হয়। তাই অন্যান্য সময়ের চেয়ে কোরবানিতে দা, ছুরিতে সামান্য টাকা বাড়িয়ে নিতে হয় তাদের।

জাহাঙ্গীর আলম নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, কোরবানিতে দা, ছুরিসহ অন্যান্য উপকরণের চাহিদা বেড়ে যায়। আকার ও লোহার প্রকারভেদে নতুন বানানো দা, ছুরি ১০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।

সৈয়দপুর এলাকার কামার মাহাবুর রহমান জানান, অন্যান্য সময়ের চেয়ে কোরবানির ঈদে আমাদের কাজ বেড়ে যায়। তবে বর্তমানে লোহার দাম বৃদ্ধি থাকায় অনেকেই নতুন দা, ছুরি কেনার পরিবর্তে পুরনো দা, ছুরিতে শান দিতেই জোর দিচ্ছেন। পুরনো দা, ছুরিতে শান দেওয়ার চেয়ে তাদের বানানো নতুন দা, ছুরিতে লাভ বেশি হয়।

এদিকে মিজানুর রহমান নামে এক ক্রেতা বলেন, ঈদ উপলক্ষে দা, চাপাতি ও ছুরির দাম বেশি নেওয়া হচ্ছে। ছুরি শান দেওয়ার জন্য ৫০ টাকা থেকে শুরু করে কাজের গুনাগুনের ওপর ভিত্তি করে ১০০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে।

দেশি চাপাতিগুলো কেজি হিসেবে বিক্রি হয়ে থাকে। প্রতি কেজি ওজনের চাপাতির দাম ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায়। ব্যবসায়ীরা জানান, সারাবছর বেচাকেনা কিছুটা কম থাকে। কোনোরকম দিন যায়।

এই সময়ের জন্য সারা বছর অপেক্ষায় থাকি। কোরবানির ঈদের আগে এক সপ্তাহ ভালো বেচাকেনা হয়। ওই সময় দামও ভালো পাওয়া যায়। লোহার তৈরি ছোট ছুরি ১০০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পশু জবাইয়ের ছুরি ২০০-৪০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।

পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে