বাগাতিপাড়ায় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনের অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক, নাটোর : নাটোরের বাগাতিপাড়ায় তমালতলা কৃষি ও কারিগরি ডিগ্রী কলেজে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদানে জ্যেষ্ঠতা বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে জোরপূর্বক দায়িত্ব প্রদান করায় কলেজের সকল জ্যেষ্ঠ শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পক্ষ থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব বরাবর অভিযোগ দেয়া হয়েছে।
এছাড়া মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরেও অভিযোগপত্র পাঠানো হয়েছে। চলতি বছরের ৩০ জুন কলেজের জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের পক্ষে ওই লিখিত অভিযোগটি দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাইদুর রহমান।
অভিযোগপত্র সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ১০ জুন অবসর গ্রহণ করেন প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ পরিমল কুমার কুন্ডু। তবে অধ্যক্ষের চাকুরী শেষ হওয়ার আগেই গত ৯ জুন ওই কলেজের গভর্ণিংবডি না থাকায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাইমেনা শারমিন তার অফিস কক্ষে কলেজের জ্যেষ্ঠ ১০ শিক্ষক ও অধ্যক্ষ পরিমল কুমার কুন্ডুসহ মিটিং করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারীতে জারি করা পরিপত্র মোতাবেক ওই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা বিভাগের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক সহকারী অধ্যাপক সাইদুর রহমানকে নিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন এবং অধ্যক্ষ পরিমল কুমারকে ওই জ্যেষ্ঠ শিক্ষককে দায়িত্বভার প্রদানের নির্দেশ দেন।
কিন্তু অধ্যক্ষ পরিমল কুমার কুন্ড ওই শিক্ষককে দায়িত্ব প্রদান না করে কলেজের ১৭ নং কনিষ্ঠ ভূগোল বিষয়ের শিক্ষক অনুপ কুমার রায়কে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র এবং ইউএনওর নির্দেশ অমান্য করে গত ১০ জুন কলেজে বহিরাগত লোকজন নিয়ে এসে জোর পূর্বক দায়িত্ব প্রদান করেন।
এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা বিভাগের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক সহকারী অধ্যাপক সাইদুর রহমান অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, আমি সকল জেষ্ঠ শিক্ষকদের পক্ষ থেকে অভিযোগটি দিয়েছি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এত বড় অনিয়ম মানা যায় না। সদ্য অবসরে যাওয়া অধ্যক্ষ পরিমল কুমার কুন্ডু তার কর্মকালিন সময়ে করা অনিয়ম ঢাকতেই বহিরাগতদের নিয়ে কলেজে এসে জোরপূর্বক একজন কনিষ্ঠ্য শিক্ষককে দায়িত্ব দিয়েছেন। সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষের কাছে দ্রুত এই অনিয়মের সঠিক সমাধানের দাবি করেন তিনি।
এ বিষয়ে ও প্রতিষ্ঠানের ভূগোল বিষয়ের শিক্ষক অনুপ কুমার রায় বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম ডিগ্রী স্তরে যেসকল বিষয় পড়ানো হয় সেই বিষয়ের যে শিক্ষক জেষ্ঠ হয় তিনিই ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন অথবা উপাধ্যক্ষ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করবেন।
তবে আমাদের প্রতিষ্ঠানে উপাধ্যক্ষ না থাকায় বিষয়ের ভিত্তিতে আমি সিনিয়র হওয়ায় আমাকে দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। গভর্ণিং বডি না থাকায় তখন আমাকে নিয়োগ দেইনি। তবে আমি দায়িত্ব গ্রহণের পরে স্থানীয় সংসদ সদস্য আবুল কালামের স্ত্রী উম্মে তৌহিদা আক্তার বানুকে সভাপতি করে এডহক কমিটি গঠন করি এবং এই কমিটি আমাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ প্রদান করেন।
প্রতিষ্ঠানের বাংলা বিষয়ের সহকারী অধ্যাপক জাহাঙ্গির আলম এ বিষয়ে বলেন, শিক্ষক অনুপ কুমার রায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ের ভিত্তিতে জেষ্ঠ্যতা নির্ধারণের যে নিয়ম দেখাচ্ছেন সেখানেও অনুপ রায়ের চেয়ে ডিগ্রী স্তরে পাঠদান করা হয় বা বিষয় অনুমোদন রয়েছে এমন বিষয়ের ৬ থেকে ৭ জন সিনিয়র শিক্ষক রয়েছে এই প্রতিষ্ঠানে। তাহলে তাদের বাদ দিয়ে তাকে কিভাবে দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। এই দায়িত প্রদান সম্পূর্ণই অবৈধ।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাইমেনা শারমিন বলেন, কলেজের পরিচালনা কমিটি ছিলনা বিধায় আমি ইউএনও হিসেবে বেতন বিলে স্বাক্ষর করতাম। অধ্যক্ষ অবসরে যাবে তখন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কাকে করা যায় এ নিয়ে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের এমন প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে আমি ইউএনও হিসেবে আমার অফিসে ডেকে শিক্ষক ও সদ্য অবসরে যাওয়া অধ্যক্ষকে নিয়ে শুনানি করি। পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রের আলোকে জেষ্ঠ শিক্ষক সাইদুর রহমানকে দায়িত্ব প্রদানের সিদ্ধান্ত দেই। তবে সেই সিদ্ধান্ত তারা মানেননি।