সত্যি কি কল রেকর্ডের বার্তা দিচ্ছে *#62# নম্বর? যা বলছেন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা
পদ্মাটাইমস ডেস্ক : সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গেলেই দেখা যাচ্ছে অনেকে চ্ছে মোবাইল ফোন ট্যাপিং বা ট্র্যাকিং প্রসঙ্গে কথা বলছেন। পোসটগুলোতে বলা হচ্ছে আপনার ফোন কেউ ট্র্যাকিং করছে কিনা তা জানতে *#62# ডায়াল করুন। সব ধরণের কল ডাইভার্ট বাতিল করতে বা মুছতে ##002# বা ##21# ডায়াল করুন। *#62# দিয়ে ডায়াল করার পর অনেকের মোবাইলে ভেসে ওঠে একটি অপরিচিত নম্বর। এতে অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। বিষয়টি আসলে কি তা উঠে এসেছে বিবিসি এক প্রতিবেদনে। ডাইভার্ট নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু আছে কিনা বলছেন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা।
ট্যাপিং, ট্র্যাকিং ও ডাইভার্ট: ফোনে কারো কথোপকথন শুনতে গোপনে বিশেষ কোনও ডিভাইস বসানোকে বোঝানো হয় ট্যাপিং। আর ট্র্যাকিং সাধারণত কারও গতিবিধি নজরদারিকে বোঝানো হয়। সিম কার্ড ছাড়াও ডিভাইসের আইএমইআই অথবা সফটওয়্যারের মাধ্যমে নজরদারি করা সম্ভব। যদিও সহজেই যে কেউ আরেকজনের কথায় আড়ি পাততে বা ট্র্যাক করতে পারবেন তেমনও না।
অনেক ক্ষেত্রে মোবাইলে বিভিন্ন অ্যাপ ব্যবহার করতে মাইক্রোফোন, ক্যামেরা, লোকেশন এমন বিভিন্ন অনুমতি দিতে হয়। এজন্য অনেক সময়েই আমাদের গতিবিধি, কথোপকথন, সার্চ বা ক্লিক হিস্ট্রি, আগ্রহের ভিত্তিতে অ্যালগরিদম এমন নানা তথ্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বিজ্ঞাপন আমরা দেখি। তবে ফোন ডাইভার্ট বা ফরোয়ার্ড একটি ভিন্ন ব্যবস্থা। এটি ব্যবহারকারীর নম্বর ব্যস্ত বা বন্ধ থাকলে অন্য নম্বরে ফোন বা মেসেজ যাওয়াকে বোঝানো হয়। এটি সাধারণত ব্যবহারকারী নিজে করতে পারেন।
সত্যি কি ফোন কল রেকর্ড হচ্ছে: বেশ কয়েকজন তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ এ বিষয়ে বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন যে *#62# দিয়ে চেক করে অপরিচিত নম্বার আসলে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। যে নম্বরটি দেখা যাচ্ছে সেটি আসলে মোবাইল ফোন অপারেটরদের নম্বর। তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবি জানান, কল ট্যাপিং এর জন্য কল ফরওয়ার্ডের দরকার হয়না।
তিনি জানান, কল ট্যাপিং এর জন্য এ মুহূর্তে আমাদের সরকারের, বিশেষত এনটিএমসির (ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার) যে সক্ষমতা আছে তাতে তারা আসলে বাংলাদেশের যে কোনও ফোনকল যে কোনও সময় চাইলে ট্যাপ করতে পারে। একটা বড় অংশ স্বয়ংক্রিয়ভাবে রেকর্ড হয়, তারা চাইলে সেটা দেখতে পারেন, টার্গেটেড যারা তাদের কল রেকর্ড তো তারা করেন।
কল ফরওয়ার্ড অপশনে ব্যবহারকারীর নির্ধারিত নাম্বারের বাইরে অপারেটরদের নাম্বার দেখানোর পেছনে একটা কারণ মিসড কল অ্যালার্ট সার্ভিস। কারণ ফোন বন্ধ বা ব্যস্ত থাকলে ও মোবাইলে মিসড কল অ্যালার্ট সার্ভিস চালু থাকলে সেই তথ্য সংবলিত মেসেজ পাঠাতে অপারেটরের সেই নাম্বার ব্যবহার করা হয়।
প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিভিন্ন সাবস্ক্রিপশন সার্ভিস থেকে সেটি সম্ভব। যেমন ভয়েজ মেইল সার্ভিসের ক্ষেত্রেও এমন সম্ভব। আর এমন ফরোয়ার্ড সার্ভিস বন্ধ করার পরও যদি সেই ফরওয়ার্ড সার্ভিস সচল দেখায় সেটা টেকনিক্যাল কারণে হয়। যেমন নির্দিষ্ট কোনও সার্ভিস বা সাবস্ক্রিপশন যেভাবে চালু করা হয়েছে সেটার নির্দিষ্ট মেয়াদে থাকলে তার আগে অকার্যকর নাও হতে পারে – বলছিলেন আরেকজন ইন্টারনেট ও প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ মোবারক হোসেন।
মোবাইল অপারেটরদের কল ডেটা রেকর্ডের প্রক্রিয়া আলাদাভাবে করার সুযোগ রয়েছে। তবে সেটি এই কল ফরোয়ার্ড বা ডাইভার্টের সাথে সম্পর্কিত না বলে উল্লেখ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য ও প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ও পরিচালক ড. বি এম মইনুল হোসেন। তিনি জানান, আমরা অনেক সময় শুনি বাইরের দেশ থেকে বিভিন্ন ধরণের ডিভাইস কেনা হয়েছে, অন্য দেশের সরকার কিনেছে বা কেনে। এটা অপারেটরদের মাধ্যমেও করা সম্ভব। আবার তেমন সংবেদনশীল ডিভাইস যদি থাকে তাহলে অপারেটরদের হেল্প ছাড়াও এটা করা যেতে পারে।