মেয়র লিটনের নেতৃত্বে রাজশাহীর রাজপথ আ.লীগের দখলে
আব্দুল বাতেন: কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নামে ডাকে সরকার পতনের এক দফা দাবিতে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন চরমে পৌছেছে তখন রাজশাহীর রাজপথ পুরো দখলে রেখেছে আওয়ামী লীগ। কোটা সংস্কার আন্দোলনের শুরু থেকেই একই চিত্র দেখা গেছে রাজশাহীতে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা যখন আন্দোলন শুরু করে এবং দাবি দাওয়া মেনে নেওয়ার জন্য বিভিন্ন হলে হামলা ও অগ্নীসংযোগ করে। তখন ছাত্রলীগ শিক্ষার্থীদের সাথে বিবাদে জড়াতে দেখা যায়নি। তবে পুরো ক্যাম্পাস শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণে থাকে।
এদিকে আওয়ামী লীগে যখন বুঝতে পারে কোটা সংস্কার আন্দোলন সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাথায় ভর করে বিএনপি, জামায়াত-শিবির পুরোটায় নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে তখন থেকেই রাজশাহী মহাগরীর পুরো রাজপথ নিয়ন্ত্রণে রাখে আওয়ামী লীগসহ সকল সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। আর এসব নেতাকর্মীদের সুসংগঠিত করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। বিভেদ ভুলে সবাইকে এককাতারে নিয়ে রাজপথে নামিয়েছেন তিনি।
রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা যায়, চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন যখন শুরু হয়। তখন রাজশাহীর আন্দোলনের চিত্র পর্যবেক্ষণে রাখে আওয়ামী লীগ। আস্তে আস্তে এই ছাত্র আন্দোলনে যারা সমন্বকারী ছিলেন তাদের হাত থেকে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে বিএনপি, জামায়াত-শিবিরের হাতে চলে যায়। ঠিক সেই মূহুর্তে আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন রাজশাহীর রাজপথ পুরো নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য নেতাকর্মীদের নিয়ে করণীয় ঠিক করে।
এর পর থেকেই আওয়ামী লীগের মধ্যে থাকা সকল দূরত্ব ও ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারকে সঙ্গে নিয়ে কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তার পর প্রতিটি দিন নেতাকর্মীরা মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে সমবেত হয়। সেখান থেকে মিছিল বের করে সাহেব বাজারের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে জিরোপয়েন্ট বড় মসজিদের কাছে অবস্থান নিয়ে সমাবেশ শুরু করে।
অপর দিকে, কোটা সংস্কার আন্দোলনের ব্যানারে থাকা শিক্ষার্থীদের অন্তরালে বিএনপি, জামায়াত-শিবির নেতাদের নির্দেশনায় সরকারের পদত্যাগের দাবিতে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা অংশ নিয়ে সাহেব বাজার অভিমুখে বিক্ষোভের ডাক দেয়।
ওই বিক্ষোভে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে মিশে গিয়ে বিএনপি,জামায়াত-শিবিরের ক্যাডার দেখা গেছে। তাদের এই আন্দোলনকে রুখে দিতে সাহেব বাজার জিরোপয়েন্টে নেতাকর্মীদের নিয়ে স্বশরীরে অবস্থান নেন খায়রুজ্জামান লিটন। গত ১৮ জুলাই সাহেব বাজার জিরোপয়েন্টে আন্দোলনর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মিশে গিয়ে শিবিরের নেতাকর্মীরা মানববন্ধন করতে চাইলে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ধাওয়ায় পালিয়ে যায় তারা। সেদিন সারাদিন মাঠে অবস্থান করেন নেতাকর্মীরা।
ঢাকা, রংপুরসহ বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলাকালে গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় কেন্দ্র করে রাজশাহী মহানগর বিএনপিসহ সকল সহযোগী সংগঠন কর্মসূচি ঘোষণা করে মাঠ দখলের চেষ্টা করে বিএনপির নেতাকর্মীরা।
গত ১৭ জুলাই বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা এই আন্দোলনের সাথে একাত্বতা ঘোষণা করে বিকেলে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজ থেকে তারা মিছিল বের করে মালোপাড়া পুলিশ ফাঁড়ি, সোনাদিঘি মোড় হয়ে ভূবন মোহন পার্ক সংলগ্ন দলীয় অফিসের সামনে গিয়ে সমাবেশ করার চেষ্টা করেন। সেদিনও মেয়র খায়রুজ্জামান লিটনের নেতৃত্বে সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টসহ বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে অবস্থান নেন নেতাকর্মীরা। বিএনপির নেতাকর্মীরা দলীয় অফিসের সামনে সমবেত হয়ে বক্তব্য শুরু করলে ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতার্কীদের ধাওয়ায় মুহুর্তের মধ্যেই পালিয়ে যায়।
এর পর কারফিও জারি হলে মহানগরী ফাঁকা হতে থাকে। তবে খায়রুজ্জামান লিটনের নির্দেশায় নেতাকর্মীরা সুসংগঠিত হয়েই থাকে। গত ৩ আগস্ট শিক্ষার্থীরা গণমিছিলের ডাক দেয়। এতে করে তারা রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্বাবিদ্যালয়ের (রুয়েট) গেটে সমবেত হয়ে সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টের দিকে আসার পরিকল্পণা করে।
রাজশাহী মহানগর আওয়ামী আন্দোলনের নামে ধ্বংসাত্নক কর্মসূচি রুখে দিতে বড় মসজিদের সামনে অবস্থান নেন। তবে আন্দোলন কারীরা এদিকে না এসে ভদ্রা মোড় হয়ে নগর ভবনের দিকে মুড নেয়। তাদের পরিকল্পণা ছিলো নগর ভবনে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করে শান্ত রাজশাহীকে অচল করে দেওয়া দেওয়া। তাদের মুভমেন্ট বুঝতে পেরে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ সকল নেতাকর্মীরা নগর ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে তাদের আন্দোলন রুখে দেবার ঘোষণা দেয়।
ওদিকে আন্দোলনকারিরা তাদের বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে রেলগেট শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান চত্ত্বরে এসে অবস্থান নেন। তাদের কর্মসূচিতে পুলিশ কোন রকম বাঁধা না দিলেও রুয়েট গেটে থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে আসার পথে তালাইমারী পুলিশ ফাঁড়ি, ভদ্রা পুলিশ ফাঁড়ি ও রেলগেট পুলিশ ফাঁড়িতে অগ্নি সংযোগ করে পুড়িয়ে দেয়। পুড়িয়ে দেওয়া হয় আওয়ামী লীগের অফিস।
এছাড়াও কোন রকম উস্কানী ছাড়াই নগর গোয়েন্দা শাখার সদস্য সাইফুল ইসলামকে মাথায় কুপিয়ে গুরুতর জখম করে পালিয়ে যায়। সে এখন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। রাসিক মেয়র লিটন এই পুলিশ সদস্যকে দেখতে হাসপাতলে ছুটে যান।
৪ আগস্ট রোববার আন্দোলন কারীরা অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়ে আবারও নগরভবনকে টার্গেট করে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। রাসিক মেয়র খায়রুজ্জামানের নির্দেশনায় প্রতিদিনের মতই সেদিও তাদের আন্দোলন রুখে দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে বড় মসজিদের সামেন অবস্থান নেন নেতাকর্মীরা।
এদিন জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে সমবেত হতে থাকে। এতে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অনিল কুমার সরকার ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও রাজশাহী-৩ পবা-মোহনপুর আসনের সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান আসাদ বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী নিয়ে সমাবেশে যোগ দেয়। বিক্ষোভ কারীরা ৪ আগস্ট রোববার মেয়র লিটনের নেতৃত্বে শক্তিশালী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উপস্থিতি বুঝতে পেরে তাদের কর্মসূচি সমাপ্ত করে চলে যায়।
জানা গেছে রাজশাহী মহানগরীকে বিএনপি-জামায়তের নৈরাজ্যে হতে বাঁচাতে মেয়র লিটন বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সাথে কথা বলে আন্দোলনে সক্রিয় হওয়ার নির্দেশনা দিচ্ছেন। তারই ফলশ্রুতিতে ৪ আগস্ট রোববার মহানগরীতে অন্যান দিনের তুলনায় বহুগুন নেতাকর্মীদের উপস্থিতি দেখা গেছে।
গোদাগাড়ী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বেলাল উদ্দীন সোহেল বলেন, মেয়র খায়রুজ্জামান লিটনের ডাকে আজকে নেতাকর্মীদের নিয়ে আমি উপস্থিত হয়েছি। আমরা বিএনপি জামায়তের যে কোন ষড়যন্ত্র রুখে দিতে প্রস্তুত আছি। আমাদের অভিভাবক লিটন ভাই যে ভাবে নির্দেশনা দিবেন আমরা তা পালন করার জন্য প্রস্তুত আছি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, বাংলাদেশ আবারো রাজাকার-আলবদরদের হাতে যাবে, সেটি আমরা মেনে নিতে পারি না। আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, আমাদের শরীরে বীরের রক্ত, আমরা তাদের কাছে পরাজিত হতে পারি না।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ আন্দোলন-সংগ্রামের দল। আমাদের নেতাকর্মীরা দীর্ঘদিন রাজপথে থেকে আন্দোলন-সংগ্রাম করতে পারেন। অতীতেও আমরা এর প্রমাণ দিয়েছি। জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথে থাকবো।