এখন মতপ্রকাশে সব দল স্বাধীন: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
পদ্মাটাইমস ডেস্ক : ক্ষমতার পালাবদলের পর এখন সব রাজনৈতিক দল ‘স্বাধীন’ বলে বিদেশি কূটনীতিকদের কাছে দাবি করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।
সোমবার বিকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় কূটনৈতিক ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক সংলাপ ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে ‘জাতীয় সমন্বয় সাধনের’ ক্ষেত্রে সরকার আন্তরিক উদ্যোগ নেবে। অভাবনীয় পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে এখন সব রাজনৈতিক দল অভিমত ও মতামত প্রকাশে স্বাধীন।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্বগ্রহণ এবং সমসাময়িক প্রেক্ষাপট তুলতে ধরতে এই কূটনৈতিক ব্রিফিংয়ের আয়োজন করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ভারত, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, জাপানসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত-হাইকমিশনারসহ পাঁচ ডজনের বেশি কূটনীতিক ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন।
কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা উল্লেখ না করে তিনি বলেন, যত দ্রুত সম্ভব অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বহুত্ববাদী নির্বাচনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা হস্তান্তরের ওপর এই সরকারের নজর থাকবে।
কূটনীতিকদের সামনে নিজের সূচনা বক্তব্যে তৌহিদ হোসেন বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার আমাদের জনগণ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অকুণ্ঠ সমর্থন পাবে বলে আমরা বিশ্বাসী।
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা। পুলিশ বাহিনী পূর্ণ মাত্রায় কাজ পরিচালনা করতে পারার সহায়ক পরিবেশ তৈরির কাজ আমরা করছি। পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী তাদের দায়িত্ব পালন অব্যাহত রাখবে।
সাবেক এই পররাষ্ট্র সচিব বলেন, জনগণ আর যুব সমাজে আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটানোর জন্য দেশের গণতান্ত্রিক ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের স্বার্থে নীতিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের বিষয়ে এই সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। নিরাপত্তা খাতের সংস্কারের জোরালো দাবির বিষয়েও আমরা অবগত।
তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও মতপ্রকাশসহ বিভিন্ন মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতার প্রসার ও সুরক্ষায় সরকার অঙ্গীকারাবদ্ধ থাকবে। বিচার বিভাগ এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সমুন্নত রাখতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, সাইবারের ক্ষেত্রেও।
দেশীয় নেতৃত্বে স্বাধীন তদন্ত ও বিচারিক ব্যবস্থার মাধ্যমে সব সহিংসতা ও মৃত্যুর বিচার ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করাকে সরকারের ‘অগ্রাধিকার’ হিসাবে বর্ণনা করেন তিনি।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এ প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘসহ সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত হবে সরকার। যাতে এই প্রক্রিয়াকে জোরালো ও অবাধ করার ক্ষেত্রে উপযুক্ত সহযোগিতা পাওয়া যায়।
তিনি বলেন, “আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুনরুদ্ধার করতে এবং স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সরকার ত্বরিৎ ও দৃঢ় পদক্ষেপ নিয়েছে। সব ধর্মীয় ও নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিতে সরকার অঙ্গীকারাবদ্ধ এবং কোনো ধরনের সহিংসতা বা ভীতিপ্রদর্শন আমরা সহ্য করব না।”
কূটনৈতিক এলাকা ও ব্যক্তির নিরাপত্তা ও সুরক্ষাকে ‘অন্যতম প্রধান অগ্রাধিকার’ হিসাবে বর্ণনা করে তৌহিদ হোসেন বলেন, আমাদের দেশে থাকা সব বিদেশি নাগরিকদের সুরক্ষার বিষয়েও আমরা সংবেদনশীল।
তিনি বলেন, নতুনভাবে জাতিগঠনের প্রচেষ্টায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিরবচ্ছিন্ন সমর্থন ও সহযোগিতা আমাদের প্রয়োজন। সরকার গঠনের পর আন্তর্জাতিক অংশীদারদের ইতিবাচক ও গঠনমূলক বক্তব্যকে সাধুবাদ জানাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও বোঝাপড়া এবং অভিন্ন স্বার্থের আলোকে সব দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চর্চা করবে সরকার।
অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় উন্নয়ন সহযোগী ও বহুপক্ষীয় উন্নয়ন ব্যাংকগুলোকে সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ অংশীদারকে বাংলাদেশের প্রতি আস্থা রাখতে, এবং শ্রম খাত, পরিবেশগত মান এবং সরবরাহ খাতে দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তার আহ্বান জানাচ্ছে সরকার।
শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে গত সপ্তাহে বাংলাদেশ ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা’ অর্জন করেছে মন্তব্য করে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “বৈষম্য ও অসাম্য দূর করতে নেমে ছাত্র-জনতার মিলিত শক্তি কর্তৃত্ববাদী ও নিবর্তনকারী শক্তির বিরুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই বিজয় এসেছে অনেক মূল্য দিয়ে।
তিনি বলেন, সরকারি নিয়োগে বৈষম্যমূলক পদ্ধতির বিরুদ্ধে অকুতোভয় শিক্ষার্থীদের আন্দোলন রিণত হয়েছে নিয়মতান্ত্রিক, ন্যায়ানুগ, সুষ্ঠু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য দেশব্যাপী বৈপ্লবিক সংগ্রামে। জনপ্রিয় আন্দোলনকে দমন করতে গিয়ে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করার মাধ্যমে ব্যাপকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। অবশ্য, জনগণের অদম্য শক্তি আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসান ঘটিয়েছে।
তিনি বলেন, “নতুন শুরুর দ্বারপ্রান্তে আছে বাংলাদেশ। আমাদের তরুণ সমাজ এবং বৃহত্তর জনগণ গুণগত পরিবর্তন, কার্যকর সংস্কার ও দীর্ঘমেয়াদি রূপান্তরের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের দায়িত্ব অর্পণ করেছে। আমাদের যুব সমাজের অদম্য শক্তি, সাহস ও দৃঢ়তার দ্বারা গভীরভাবে উজ্জীবিত। আমাদের সরকারের কাজ হবে, যুবসমাজকে তাদের স্বপ্নের আলোকে নতুন বাংলাদেশ তৈরির পথ করে দেওয়া।