প্রাণ সংশয়ে নারী অধ্যক্ষের পরিবার, দাবি ছেলের

প্রকাশিত: আগস্ট ১৪, ২০২৪; সময়: ৯:১৮ অপরাহ্ণ |
প্রাণ সংশয়ে নারী অধ্যক্ষের পরিবার, দাবি ছেলের

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিএনপি ও ছাত্রদল নেতাকর্মীদের হুমকির মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন রাজশাহী সিটি কলেজের অধ্যক্ষ আমেনা আবেদিন। এর পরও থেমে নেই হুমকি। একাধিকবার অপরিচিত নাম্বার থেকে কল করে হুমকি দেওয়া হয়। ফলে পুরো পরিবার প্রাণ সংশয়ে ভুগছে।

বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের হল রুমে সংবাদ সম্মেলন করে এ সব তথ্য জানান অধ্যক্ষ আমেনা আবেদিনের ছেলে সামিউল অর্ক। তিনি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা ছিলেন এবং পুলিশের হাতে আটও হয়েছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে তার পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

সামিউল অর্ক বলেন, মঙ্গলবার সকালে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে কলেজে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করে আদেশ জারি করেন আমার মা। এর পর দুপুর ১২টার দিকে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা গিয়ে ২ দুই ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়ে আমার মাকে অবরুদ্ধে করে রাখে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পদত্যাগ না করলে পরিনতি খারাপ হবে বলেও হুমকি দেয়। এর পর খবর পেয়ে আমি সেখানে যায়। তাদের আচরণের প্রতিবাদ করলে তারা আমার গায়ে হাত তুলে লাঞ্ছিত করে। এ সময় আমার মা এগিয়ে আসলেও তাকেই লাঞ্ছিত করা হয়। এক পর্যায়ে তারা একটি পদত্যাগ পত্র প্রিন্ট করে নিয়ে এসে তাতে জোরপূর্বক স্বাক্ষর করতে বাধ্য করে।

সামিউল অর্ক আরও বলেন, আমার মা পদত্যাগ করার পরও থেমে নেই তাদের হুমকি ধামকি। মোবাইল ফোনে একাধিকবার অপরিচিত নাম্বার থেকে কল করে আমাদের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। ফলে আমি ও আমার পরিবার এখন প্রান সংশয়ে ভুগছি।

তিনি আরও বলেন, আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন সক্রিয় সদস্য। আমি অন্যদের সাথে আটকও হয়েছিলাম মতিহার থানায়। বিষয়টি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের জানানো হয়েছে। এছাড়াও বিষয়টি সেনাবাহিনীর বোয়ালিয়া থানা ক্যাম্পের কমান্ডারকে জানানো হয়েছে।

মঙ্গলবার কলেজে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার কারণে রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজের অধ্যক্ষ আমিনা আবেদীনকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। কলেজ ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা তাকে লাঞ্ছিত করেন বলে অভিযোগ তুলে তার নিজের ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন তিনি। অভিযোগ করেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতারা তাকে পদত্যাগ করতে বাধা করে। যদিও ছাত্রদল এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

তবে একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি কলেজ ছাত্রদলের সদস্য সচিব এমদাদুল হক লিমন ও মহানগর বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহবায়ক নজরুল হুদা অধ্যক্ষের কার্যালয়ে অবস্থান করছেন। অধ্যক্ষকে পদত্যাগ করার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে। পরে একটি পদত্যাগপত্র প্রিন্ট করে আনা হলে অধ্যক্ষ স্বাক্ষর করেন।

এ বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে আমিনা অবেদীনকে ফোন করা হলে তিনি ধরেননি। তবে আমিনা আবেদীন মঙ্গলবার ফেসবুকে তিনটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। একটিতে তিনি লেখেন, ‘আমাকে মারার হুমকি দিচ্ছে।’ আরেকটিতে লেখা হয়, ‘আমাকে ও আমার ছেলেকে শারীরিকভাবে হামলা করেছে ছাত্রদল।’ অন্য স্ট্যাটাসে অধ্যক্ষ লেখেন, ‘ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করাতে আমার জীবন হুমকির মুখে।’

এদিকে, আমিনা আবেদীনের ছেলে নিজেও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছিলেন। তার মাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করার সমালোচনা করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক সেলিম রেজা নিউটন।

তিনি লিখেছেন, ‘আজকে রাজশাহীর প্রধান একটা কলেজের অধ্যক্ষের গায়ে হাত তুলেছে ছাত্রদলের সন্ত্রাসীরা। জোর করে তাকে দিয়ে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করিয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কলেজে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করায় রাজশাহী সিটি কলেজের অধ্যক্ষ আমেনা আবেদীন এবং তার সন্তান অর্কর গায়ে হাত তুলেছে ছাত্রদল। এই অর্ককে পুলিশের হাত থেকে ছাড়িয়ে আনতেই আমরা মতিহার থানায় ১০ ঘণ্টা বসেছিলাম (আন্দোলনের সময় আটক হন)।’

তিনি লেখেন, ‘ছাত্রদল কি পুরোনো জামানার খাসলত থেকে বের হবে না? ছাত্রলীগের জুলুমের পথেই চলবে তারা? আর বাংলাদেশ তা মেনে নেবে? আশা করি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা, জেলা প্রশাসন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং জেলা বিএনপি নেতাদের একটা বিহিত করবেন।’

অধ্যক্ষকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ অস্বীকার সরকারি সিটি কলেজ ছাত্রদলের সদস্য সচিব এমদাদুল হক লিমন বলেন, আমি পরে গিয়েছিলাম। সাধারণ শিক্ষার্থীরাই অধ্যক্ষকে পদত্যাগের জন্য চাপ দেন। এ নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অধ্যক্ষের ঝামেলা হচ্ছিল। সেখানে অধ্যক্ষের ছেলে আসেন। এটা নিয়েই ঝামেলাটা হয়।

পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে