রাজশাহী নগর ভবনে ধ্বংসযজ্ঞে ক্ষতি শত কোটি টাকা

প্রকাশিত: আগস্ট ১৯, ২০২৪; সময়: ৫:০১ অপরাহ্ণ |
রাজশাহী নগর ভবনে ধ্বংসযজ্ঞে ক্ষতি শত কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক : আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নগর ভবনে ধ্বংসযজ্ঞে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে শত কোটি টাকা। এর মধ্যে বিভিন্ন সরঞ্জাম লুট, ভাঙচুর ও উপকরণ ভস্মীভূত হয়ে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৪০ কোটি টাকা। বাকি ৬০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে অবকাঠামো ধ্বংসে।

গত ৫ আগস্ট বিকাল থেকে পরদিন ৬ আগস্ট দুপুর পর্যন্ত নগর ভবনে চলে ধ্বংসযজ্ঞ। এ সময়ে অরক্ষিত নগর ভবন থেকে মূল্যবান প্রায় সব উপকরণ ও সরঞ্জামাদি অবাধে লুট করা হয়। একেবারে ভস্মীভূত হয় পাঁচটি তলা। ফলে নগর ভবনকে স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনার উপযোগী অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে ছয় মাসের বেশি সময় লাগবে।

রাসিক সূত্রে জানা গেছে, রোববার করপোরেশনের বিভিন্ন বিভাগ থেকে ক্ষয়-ক্ষতির প্রাথমিক প্রতিবেদন জমা হয়েছে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরে। বিভিন্ন বিভাগের ক্ষয়-ক্ষতির মোট পরিমাণ মূল্যায়ন করে কর্তৃপক্ষ আর্থিক ক্ষতির একটি প্রাথমিক প্রতিবেদন তৈরি করেছেন। ক্ষয়-ক্ষতির প্রাথমিক এ প্রতিবেদন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ১০তলা বিশিষ্ট রাজশাহী নগর ভবনে সিটি করপোরেশনের সচিবালয়, প্রকৌশল, পরিচ্ছন্নতা, স্বাস্থ্য, রাজস্ব ও হিসাব বিভাগের অধীন মোট ৫২টি শাখায় কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছিল। গত ৫ আগস্ট দুর্বৃত্তরা নিচ থেকে ১০ম তলা পর্যন্ত প্রতিটি বিভাগেই ভাঙচুর, লুটপাট চালানোর পর অগ্নিসংযোগ করা হয়। প্রতিটি বিভাগেই ছিল মূল্যবান আসবাবপত্র, নথিপত্র, কম্পিউটার ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম।

ক্ষয়-ক্ষতির প্রাথমিক হিসাব মতে, প্রতিটি শাখায় আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৬ লাখ টাকা করে। এই হিসাবে ৫২টি শাখায় ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৩১ কোটি ২০ লাখ টাকা। এ ছাড়া মেয়রের দপ্তর, অতিথিশালা, হলরুম ও সম্মেলন কেন্দ্রের মোট ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯ কোটি টাকা। এই হিসাবে অবকাঠামো বাদে মোট ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪০ কোটি টাকা।

নগর ভবনের প্রতিটি শাখা থেকে কম্পিউটার প্রিন্টার লুট হয়েছে। চেয়ার টেবিল আসবাবপত্র জেনারেটর শোফা কার্পেট থেকে শুরু করে থালা বাসন ও কাপ পিরিচও লুট করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পরিচ্ছন্নতা বিভাগের তিনটি ট্রাক ও বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এদিকে, নিচতলা থেকে ১০তলা পর্যন্ত প্রতিটি তলার অধিকাংশ কক্ষই জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। অতি দাহ্য পদার্থ বা গান পাউডার ব্যবহার করে কক্ষগুলিতে আগুন দেওয়ার ফলে ভবনের ছাদ ও দেয়ালগুলোও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

প্রাথমিক হিসাব মতে, নগর ভবনের ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো সংস্কার ছাড়া ভবনে কার্যক্রম পরিচালনা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। অনেক কক্ষের দেয়াল ভেঙে পুনরায় নির্মাণ করার প্রয়োজন হবে। জানালা দরজা, গ্লাস, বৈদ্যুতিক ওয়্যারিং, পানির লাইন তৈরি, সাব-স্টেশন, লিফট ইত্যাদি খাতে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬০ কোটি টাকা।

সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী নির্বাহী কর্মকর্তা ড. এবিএম শরিফ উদ্দিন জানান, লুট হওয়া কিছু সামগ্রী ফেরত এসেছে যার পরিমাণ ১০ শতাংশের কম। তবে উদ্ধার হওয়া এসব সামগ্রীর অধিকাংশই আর ব্যবহার উপযোগী নেই। এগুলো নতুন করেই সংগ্রহ করতে হবে। সেগুলো হয়তো করপোরেশনের নিজস্ব তহবিল থেকে কেনার ব্যবস্থা করতে হবে; কিন্তু ভবনের ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো সংস্কার করতে হলে নতুন করে প্রকল্প হাতে নিতে হবে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে ইতোমধ্যে তিনটি প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ বরাদ্দ আসলে ভবন সংস্কারের কাজ শুরু করা যাবে।

পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে