কুষ্টিয়ার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী বিক্ষোভ, তিন বাড়িতে ভাঙচুর লুটপাট
নিজস্ব প্রতিবেদক, কুষ্টিয়া : কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে ১৭ দফা দাবিতে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কুষ্টিয়া – প্রাগপুর সড়ক অবরোধ ও টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে। এ সময় আন্দোলনে যোগ দেওয়া কিছু ও ছাত্র যুবক বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষকের বাড়ি সহ তিনটি বাড়িতে ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাট চালায়।
বুধবার বেলা সাড়ে এগারোটার দিকে উপজেলার হোসেনাবাদ আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয় এ ঘটনা ঘটে।
তবে বিদ্যালয়ের দুই সহকারী শিক্ষক নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য সাধারণ শিক্ষার্থীদের উস্কানি দিয়ে এই অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করে বলে বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী ও বিদ্যালয় এর প্রধান শিক্ষক দাবি করেন।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, তিন দিন আগে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের বিগত ১০ বছরের আয় ব্যয়ের হিসাব প্রদান, প্রধান সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগ, বেতন সহ বিভিন্ন ফিস কমানো, বিদ্যালয় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা সহ ১৭ দফা দাবি জানান প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিমের কাছে। প্রধান শিক্ষক পর্যায়ক্রমে এসব দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা বাড়ি ফিরে যান।
বুধবার সকাল সাড়ে এগারোটার দিকে শিক্ষার্থীরা আবারও সংঘটিত হয়ে বিদ্যালয় আসেন। এ সময় তারা তাৎক্ষণিক তাদের দাবি পূরণের জন্য চাপ দেন। পাশাপাশি তারা প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগও দাবি করেন। পরে শিক্ষার্থীরা হোসেনাবাদ বাজারে কুষ্টিয়া প্রাণপুর সড়ক অবরোধ ও টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। এ সময় বহিরাগতরা শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালায় বলে তাদের অভিযোগ। হামলায় বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয় বলে তারা জানায়।
একপর্যায়ে প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিম তার দ্বিতীয় স্ত্রী হিসনা পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লায়লা আরজুমান বানু ও স্থানীয় মাংস ব্যবসায়ী হাসেম আলীর বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালায় কিছু শিক্ষার্থী ও স্থানীয় জনতা। বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্রী উম্মে সুরাইয়া উষ্ণ জানায়, বিদ্যালয় এর বড় ভাইয়েরা ১৭ দফা দাবি বাস্তবায়নে হেড স্যারকে তিন দিনের সময় দিয়েছিল। হেডস্যার দাবি পূরণ না করায় তারা আন্দোলন করে। তবে সে স্বীকার করে যে তিন দিনে এসব দাবি পূরণ করা সম্ভব না। তার দাবি বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মেহেদী হাসান সেন্টু ও আবু হাসান দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়ে প্রাইভেট পড়ান। হেড স্যার তাদের বিদ্যালয়ের প্রাইভেট পড়াতে তাদের নিষেধ করেছিলেন। এ কারণে রাগান্বিত হয়ে ওই দুই শিক্ষক তাদের বিদ্যালয়ের বড় ভাইদের উস্কানি দিয়ে আন্দোলনে নামায় বলে দাবি করে এ শিক্ষার্থী।
তবে এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ওই শিক্ষকদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তাদের ফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি।
এদিকে বাড়িঘরে হামলা ও লুটপাটে শিক্ষার্থীদের সাথে স্থানীয় বিএনপি ও আওয়ামীলীগ উভয় দলের কর্মীরা অংশ নেয় বলে স্থানীয়দের দাবি।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিম জানান, ‘আমি শিক্ষার্থীদের দাবির সাথে একমত পোষণ করে সব মেনে নিয়েছিলাম। তবে তারা যেসব দাবী করেছে তা তাৎক্ষণিকভাবে মিটানো সম্ভব নয়। তার জন্য সময় প্রয়োজন। তার দাবি উদ্ভূত পরিস্থিতির পিছনে বিদ্যালয়ের দুজন সহকারী শিক্ষকের হাত রয়েছে। ওই দুই শিক্ষককে বিদ্যালয়ে প্রাইভেট পড়ানো থেকে বিরত থাকতে বলায় তারা আমার উপর প্রতিশোধ নিতে ছাত্রদের খেপিয়ে তোলে। আমার বাড়িঘরে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে আমার স্ত্রীর বাড়িতেও একই অবস্থা এরপর থেকে আমি চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’
এদিকে বিকাল চারটার দিকে দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ ঘটনা স্থলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে তাদের নিবৃত্ত করে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান আজ বৃহস্পতিবার বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পরিচালনা পরিষদের সদস্য সহ সব পক্ষের সাথে বসে বিষয়টি মীমাংসা করা হবে।