এখন দেশ গড়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে: যুগ্ন সচিব রথীন্দ্রনাথ দত্ত

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১, ২০২৪; সময়: ৭:২৩ অপরাহ্ণ |
এখন দেশ গড়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে: যুগ্ন সচিব রথীন্দ্রনাথ দত্ত

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, বাঘা :  গ্রামের বাড়িতে এসে গুলিবিদ্ধ রনি আহমেদের বাসায় তাকে দেখতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের যুগ্ন সচিব রথীন্দ্রনাথ দত্ত বলেন,দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে অনেকেই নানা ভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। অনেকেই প্রাণ হারিয়েছেন, অনেকেই আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করছে। হয়তো পৈশাচিক নির্যাতনের যন্ত্রণা ভূলে যাবার নয়। যে ক্ষতি হয়েছে তাও ফিরিয়ে দেওয়া যাবে না।

এখনো বাতাসে ভেসে আসে স্বজন হারানোর আর্তনাথ। আন্দোলনে যারা নিহত-আহত হয়েছেন, দেশের শান্তি প্রিয় মানুষ তাদের কোন দিন ভূলে যাবে না। ছাত্র জনতার আন্দোলনের ফসল হিসেবে এখন দেশ গড়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।  রনির বাড়িরে আসা যাওয়া আসার  কাঁচা রাস্তাটি পাকা করণের দাবির প্রেক্ষিতে তিনি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে  ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন এবং সেই রাস্তার নাম করণ যেন রনি আহমেদ এর নামে হয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাস্তাটি করে দেওয়ার আশ্বাস দেন। যুগ্ন সচিব রথীন্দ্রনাথ দত্ত রাজশাহীর বাঘা উপজেলার নারায়নপুর গ্রামের বাসিন্দা ও এলাকার শ্রেণী পেশার মানুষের কাছে কৃতি সন্তান হিসেবে পরিচিত।

গুলিবিদ্ধ  রনি আহমেদ রাজশাহীর বাঘা উপজেলার চন্ডিপুর গ্রামের কৃষক এলাহি বক্স ওরফে আফাং মিয়ার দ্বিতীয় সন্তান। এখন রাজশাহীর বাঘায় গ্রমের বাড়িতে বিছানায় শুয়ে দিন কাটছে তাঁর। ঢাকার বনশ্রীতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গিয়ে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে পড়ে  গত ১৯ জুলাই গুলিবিদ্ধ হন রনি আহমেদ।
শনিবার দুপুরে (৩১আগষ্ট) গুলিবিদ্ধ রনি আহমেদকে দেখতে যান মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের যুগ্ন সচিব রথীন্দ্রনাথ দত্ত। এসময় ওই সময়ের পরিস্থিতির বর্ননা শোনেন  এবং চিকিৎসাসহ সার্বিক সহযোগিতার কথা বলেন। এ সময় তার সাথে ছিলেন বাঘা উপজেলা নির্বাহি অফিসার তরিকুল ইসলাম।

উপস্থিত ছিলেন.বিএনপি নেতা অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেন,বাজুবাঘা ইউপি চেয়ারম্যান এ্যাড.ফিরোজ আহমেদ রনজু, বিএনপি নেতা মতিউর রহমান,আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ প্রভাষক জাহাঙ্গীর হোসেন,প্রভাষক আব্দুল হানিফ মিয়া ও রনি আহমেদের স্বজনরা।

রনি জানান, গত ১৯ জুলাই দুপুরে তিনি বাসায় ফেরার সময় দেখেন পুলিশ এসে গুলি করতে করতে চলে যাচ্ছে। নিজেকে স্থির রাখতে না পেরে লোকজনকে  বলেন ‘যখন ঘরে ঢুকে মারবে সেই দিন বুঝবেন।’ এরপর এ ব্লক, জি ব্লকসহ আশপাশের লোকজন একত্র করে রাস্তায় ব্যারিকেড দেন। মাগরিবের আজান হবে–সেই মুহূর্তে ড্রোন এসে দেখে যায় কোন কোন ব্লকে লোকজন আছে। তারা রাস্তা ব্লক করে প্রধান সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে যান। ওপরে হেলিকপ্টার চক্কর দিয়ে গুলি ছুড়ছে। পুলিশ-বিজিবি সোসাইটির মধ্যে ঢুকে অ্যাভিনিউ রোডে গুলি করা শুরু করল। নিরাপদ স্থানে যাওয়ার জন্য দূরে গেলেন রনি। সামনে ৪-৫ জন ছিল, গুলি লেগে তারা পড়ে গেলেন। তাদের লাশ নেওয়ার জন্য গুলি করতে করতে ধাওয়া করল পুলিশ। ‘ বিজিবির ছোড়া গুলি বাঁ পায়ের উরু ভেদ করে বের হয়ে গেল। অনেক রক্তপাত হচ্ছিল। ভাবলাম আর বাঁচব না, কলেমা পড়া শুরু করলাম।

পরে বনশ্রীর এফ ব্লকের ৩ নম্বর রোডে আশ্রয় নেন । সেখান থেকে জি ব্লকের ৩ নম্বর রোডের একটি বাসায় নিয়ে তাৎক্ষণিক প্রাথমিক চিকিৎসা দেন এক চিকিৎসক। পরে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে দেখেন বহু মানুষ গুলিবিদ্ধ। সিট নেই, মেঝেতে চিকিৎসা চলছে। পরে বনশ্রীর ভাড়া বাসায় চলে যান তিনি। সেখান থেকে গোপনে হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু ২৬ জুলাই চিকিৎসক বললেন, ‘এখানে আইসেন না, তুলে নিয়ে যাবে।’

এরপরে ঢাকা থেকে গ্রামে ফিরলেও ভয়ে  বাড়িতে ছিলেন না রনি। পাশের উপজেলায় বোনের বাড়িতে আশ্রয় নেন।  ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়লে নিজ বাড়িতে ফেরেন রনি। ১০ আগস্ট থেকে বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

রনি আহমেদ ২০১৬ সালে ঢাকার ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সেস থেকে ইলেট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পাস করেন তিনি। পরে ঢাকায় জেড থ্রি করপোরেশনে চাকরিজীবন শুরু করেন। বর্তমানে এনারজিসিল্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডে কর্মরত। নির্বিচার গুলি করা দেখে মনের টানেই আন্দোলনে যোগ দেন তিনি। নিজে হাতে ৬/৭ জনের লাশ বের করেছেন তিনি।

রনির গুলিবিদ্ধ পায়ে শক্তি নেই। তাঁর মা নিলুফা বেগম বলেন, ‘ওর এখন যে অবস্থা, তাতে দ্রুত কোনো কাজ করতে পারবে না।  ওকে যেভাবে গুলি করেছে, তাতে ওর ফিরে আসার কথা ছিল না, আল্লাহ ওকে বাঁচিয়ে রেখেছেন।’ বাবা এলাহি বক্স বলেন, দেশে যেন এমন পরিস্থিতি আর দেখতে না হয়। উপজেলা নির্বাহি অফিসার তরিকুল ইসলাম বলেন,বিষয়টি জানার পর চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

আগের দিন শুক্রবার রাত সাড়ে ৮ টায় বাঘা প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকের সাথে মতবিনিময় করেন যুগ্ন সচিব রথীন্দ্রনাথ দত্ত।  ইতোপূর্বে বাঘা প্রেসক্লাবের অবকাঠামো উন্নয়নে সহযোগিতা করেছেন,আগামীতেও উন্নয়নে তার সহযোগিতা থাকবে বলেও জানান। বাঘা প্রেস ক্লাবের পক্ষ থেকে তার অবদানের কথা কৃতজ্ঞতার সাথে স্বরণ করা হয়। উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাওলানা জিন্নাত আলী,সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান  আব্দুল্লাহ আল মামুন,বাঘা বাজার কমিটির সাধারন সম্পাদক কামাল হোসেন,সমাজ সেবক আব্দুর রহমান,হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতা সুজিত কুমার পান্ডে (বাকু) প্রমুখ।

পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে