জয়পুরহাট সদর থানার লুট হওয়া ৭টি অস্ত্র উদ্ধার হয়নি
এস এম শফিকুল ইসলাম, জয়পুরহাট : আজ থেকে এক মাস আগে গত ৫ আগস্ট জয়পুরহাট সদর থানায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। ফলে মামলার আলামত ও নথিপত্র সবই পুড়ে গেছে। অথচ বিচার কার্যক্রমের জন্য এসব আলামত ও নথি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেদিন থানার অস্ত্রাগার থেকে লুট হয়ে যায় ৪৪টি আগ্নেয়াস্ত্র। এর মধ্যে উদ্ধার হয়েছে ৩৭টি অস্ত্র। এখনো ৭টি অস্ত্র উদ্ধার হয়নি। এসব অস্ত্র বাহিরে থাকায় অবৈধ কাজে ব্যবহারের আশঙ্কা রয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন আলামত ও নথি না থাকায় দুর্বল স্বাক্ষ্য প্রমাণে আদালত থেকে ছাড়া পেতে পারে ভয়ংকর অপরাধীরা। একইসাথে আগ্নেয়াস্ত্র লুট হওয়ায় ভবিষ্যতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিরও অবনতি হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
জেলা পুলিশ সূত্রে গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট স্বৈরশাসক হাসিনা সরকার পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান। ওইদিন বিকেলে শুরু হয় ছাত্র-জনতার আনন্দ মিছিল। আনন্দ মিছিলের এক পর্যায়ে সন্ধ্যায় বিক্ষুব্ধ লোকজন জয়পুরহাট সদর থানায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাটের পর অগ্নিসংযোগ করা হয়। আগুনে থানার বিভিন্ন জিনিসপত্র পুড়ে গেছে। থানার হেফাজতে থাকা কিছু মোটরসাইকেলসহ অন্যান্য গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এ সময় লুটপাটও করা হয়। ওইদিন রাতে সেনাবাহিনী এসে থানায় আটকে পড়া পুলিশ সদস্যদের নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে যায়। এসময় গুলিতে মেহেদী নামে এক যুবক গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। এরপর বিক্ষুব্ধ লোকজন থানার অস্ত্রগারের তালা ভেঙে অস্ত্র লুট করে নিয়ে যায়। ওঘটনার পর আনসার সদস্যরা থানা পাহারার দায়িত্বে ছিলেন।
জয়পুরহাট সদর থানা আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার পর থানায় রক্ষিত একটি মামলারও আলামত অক্ষত নাই। থানা ভবনের কোনো কোন কক্ষে বসবার মতো পরিস্থিতি এখনও নেই।
৯ আগস্ট থেকে সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় পুনরায় সংস্কার করে থানার কার্যক্রম চালু করা হয়।
থানায় সেবা নিতে আসা কয়েকজন জানান, গত ৫ আগষ্ট জয়পুরহাট সদর থানায় হামলা, ভাঙচুর অগ্নিসংযোগের ঘটনার পর বেশ কিছুদিন থানার সকল কাজ বন্ধ ছিল। দীর্ঘ সময় পর থানায় কার্যক্রম শুরু হওয়ায় আমরা সেবা নিতে এসেছি। এখন আমরা সেবা পাচ্ছি। এতে আমরা সন্তুষ্ট।
জয়পুরহাট সদর থানার উপ-পরিদর্শক সোলাইমান আলী জানান, জিডি ও মামলা নেওয়া শুরু হলেও থানার সব গাড়ি পুড়ে যাওয়ায় মামলার তদন্ত ও গ্রেপ্তার অভিযান এখনও পুরোদমে শুরু করতে পারেনি পুলিশ।
জয়পুরহাট জজ কোটের আইনজীবী নূর-ই-আলম সিদ্দিক, আলামত ছাড়া অপরাধীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করা দুরূহ। এসব পুড়ে যাওয়ায় আদালতে মামলার সাক্ষ্য দুর্বল হবে। এতে পার পেয়ে যেতে পারে ভয়ংকর অপরাধীরা। একইসাথে বিপুল সংখ্যক আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি সন্ত্রাসীদের হাতে চলে যাওয়ায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।
জয়পুরহাট অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) ফারজানা হোসেন বলেন, গত ৫ আগস্ট জয়পুরহাট সদর থানার অস্ত্রাগার থেকে ৪৪টি অস্ত্র খোয়া যায়। এখন পর্যন্ত ৩৭টিঅস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। ৭টি অস্ত্র এখনো উদ্ধার হয়নি। এরমধ্যে ছয়টি পিস্তল ও একটি রাইফেল রয়েছে।
জয়পুরহাট পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নূরে আলম বলেন, পুড়ে যাওয়া আলামত ও নথি নিয়ে দুশ্চিন্তায় পুলিশও। প্রয়োজনে বিচারকদের শরণাপন্ন হবেন। আর আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারে পুলিশের পাশাপাশি যৌথ বাহিনী , জনপ্রতিনিধি ও সাধারণ মানুষের সাহায্য নিবেন।