বাগমারায় অধ্যক্ষের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন
নিজস্ব প্রতিবেদক, বাগমারা : রাজশাহীর বাগমারায় উপজেলার বড় বিহানালী গার্লস হাইস্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ কাজী সাফিউল আলমের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার প্রতিষ্ঠানের হলরুমে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন একই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারী, শিক্ষার্থীসহ এলাকার জনসাধারণ।
সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৯৯৫ সালে তৎকালীন চেয়ারম্যান মরহুম রফিকুল ইসলামসহ বড় বিহানালী ইউনিয়নবাসী এলাকার নারী শিক্ষার প্রসারে বড় বিহানালী গার্লস হাইস্কুল স্থাপন করে। পরবর্তীতে ১৯৯৭ ইং সালে অত্র প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন কাজী সাফিউল আলম।
যোগদানের পর থেকে অদ্যবধি নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে জড়িত, নিয়োগ বানিজ্য, প্রতিষ্ঠানের সরকারী বই বিক্রি, গাছ বিক্রি, এসএসসির সার্টিফিকেট বিতরণের নামে ছাত্রীদের কাছ থেকে জোর পূর্বক অর্থ গ্রহণ, কথায় কথায় শিক্ষকদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে শিক্ষকদের বাকরুদ্ধ করে রেখেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়, ০৬ (ছয়) শতাংশ জমির মালিক হলেও সে এখন এলাকায় ও এলাকার বাহিরে অগাধ জমি ও কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। একজন শিক্ষক এই সময়ের মধ্যে কি করে এতো সম্পদ ও কোটি টাকার মালিক হতে পারে তা নিয়ে এলাকার জন সাধারণের মধ্যে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠান সংলগ্ন রয়েছে তার একটি আলিশান তিনতলা ভবন।
এছাড়াও প্রতিষ্ঠানের সাথে সংশ্লিষ্ট কারো সাথে কোনো পরামর্শ ছাড়াই বিভিন্ন সময় তার পছন্দের লোক দিয়ে কমিটি গঠন করে বিভিন্ন অপকর্ম করে আসছেন। তিনি মন্ত্রনালয়ের এবং জেলা পরিষদের দালাল নামে পরিচিত। এমন কি বিভিন্ন জাল সনদ সংগ্রহ করেন। তার কাছে বিভিন্ন উপজেলা-জেলা হতে শিক্ষক-কর্মচারী বেতন বা বিভিন্ন তদবির করার জন্য আসতেন।
প্রতিষ্ঠানে তিনি নিয়োগ প্রাপ্তির পর হতে কোন প্রকার পাঠদান করান না অথচ তিনি পাবলিক পরীক্ষার রাজশাহী বোর্ডের ইংরেজী বিষয়ের খাতা মূল্যায়ন করেন। এমন কি কমিটি গঠনের ০৬(ছয়) মাস পরেও আমরা শিক্ষক কর্মচারীরা কমিটির সদস্য কারা হয়েছে তা জানতে পারিনা। এভাবেই তিনি একনায়ক তন্ত্র ও স্বৈরাচারী আচরণ প্রতিষ্ঠা করেছেন।
এছাড়া তিনি জেলা পরিষদের অনুদান নিয়ে ২০০৫-২০০৬ অর্থ বছরে ০২(দুই) টি শ্রেণি কক্ষ নির্মান করেন। কিন্তু অতি সম্প্রতি তিনি আবারও জেলা পরিষদের ২০,০০,০০০/- (বিশ) লক্ষ টাকা বরাদ্দ এনে পূর্বের শ্রেণি কক্ষ ভেঙ্গে একই স্থানে আবারও একটা ভবন নির্মানে একক ভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছেন। এতে অত্র প্রতিষ্ঠানের আনুমানিক ১০,০০,০০০/- (দশ) লক্ষ টাকার ও বেশী ক্ষতি হয়েছে।
এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারীর সাথে কোনো প্রকার আলোচনায় করেননি। প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন জিনিস পত্র পৈত্রিক সম্পত্তির মতো নিজের ইচ্ছা মতো বিক্রয় ও ব্যবহার করেছেন। এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারীদের সাথে কোন প্রকার আলোচনা করেননি।
প্রতিষ্ঠানের মসজিদ তিনি নিজ অর্থায়নে নির্মান করার কথা বলেন। অথচ প্রতিষ্ঠানের আসা-যাওয়ার পথের রাস্তার ইট তুলে সেগুলো ও জেলা পরিষদ থেকে বরাদ্দ এনে মসজিদ নির্মান করেন এবং তা প্রতিষ্ঠানের খরচ হিসাবে দেখান।
এছাড়াও তিনি বিগত বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের পর থেকে প্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিত আছেন। এভাবে দীর্ঘ দিন কোন প্রকার কারন ছাড়া প্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিত থাকা চাকুরীবিধির চরম পরিপন্থি। পরবর্তীতে তিনি সংযুক্ত কারিগরি কলেজ যুক্ত করেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উল্লেখ করা হয় বড় বিহানালী গার্লস হাইস্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ কাজী সাফিউল আলম বিভিন্ন সময় সভাপতি সেকেন্দার আলীর সাথে যোগসাজসে শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে মোটা অংকের টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
যার একটি টাকাও প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে ব্যয় করা হয়নি। শিক্ষক-কর্মচারী ও প্রতিষ্ঠানের নাম ভাঙ্গিয়ে হাতিয়েছেন অনেক টাকা। প্রতিষ্ঠানের এমন অনিয়ম ও দুর্নীতি করে যেন অধ্যক্ষ কাজী সাফিউল আলম পার না পান সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে সংবাদ সম্মেলন থেকে।
এ ব্যাপারে বিহানালী গার্লস হাইস্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ কাজী সাফিউল আলমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি তার বিরুদ্ধে অনিয়মের কথা স্বীকার করেন। তিনি আরো বলেন, শিক্ষক নিয়োগের টাকা বিভিন্ন স্থানে দিতে হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষকদের মধ্যে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বড় বিহানালী গার্লস হাইস্কুল এন্ড কলেজের সহকারী প্রধান শিক্ষক এ.এস.এম শহিদুল আলম। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে প্রতিষ্ঠান প্রধানের অনিয়ম তুলে ধরে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ১০ম শ্রেণীর ছাত্রী শাকিলা আক্তার।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, বড় বিহানালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহমুদুর রহমান মিলন, বড় বিহানালী গার্লস হাইস্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক রবিউল ইসলাম, চয়েন উদ্দীন, আব্দুল আজিজ, আব্দুর রশিদ, শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছিলেন, মনিরা আক্তার, আসমানী আক্তারসহ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারী, শিক্ষার্থী ও এলাকার সচেতন জনসাধারণ।