বদলেছে সরকার, বদলায়নি বাজার সিন্ডিকেট
পদ্মাটাইমস ডেস্ক : মূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি ১৭৯ টাকা ৫৯ পয়সা, সোনালি ২৬০ টাকা ৭৮ পয়সা ও ডিমের ডজন ১৪২ টাকা দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে রাজধানীর খুচরা বাজারে পণ্যগুলো এই দামে মিলছে না। বরং সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি ডজন ডিম ১৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ১৭০ টাকা। আর প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি গত সপ্তাহে ১৬৫-১৭০ টাকায় বিক্রি হলেও সরকার নির্ধারিত দাম মেলাতে ১৫ টাকা বাড়িয়ে ১৮০ টাকা করা হয়েছে। সোনালি মুরগি সপ্তাহের ব্যবধানে ২০ টাকা বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করা হয়েছে। এদিকে খুচরা বাজারেও এমন পরিস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। ফলে এই পণ্যগুলো কিনতে ক্রেতার ভোগান্তি বাড়ছে।
শুক্রবার রাজধানীর খুচরা বাজারে কেজিপ্রতি আমদানি করা পেঁয়াজের মূল্য ৫ টাকা বেড়ে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকলেও সব ধরনের চাল এখনও উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া সাত দিনের ব্যবধানে আটা ও রসুনের দামও বেড়েছে। এদিন একাধিক খুচরা বাজার ঘুরে ক্রেতা ও বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।
এদিকে গত রোববার ফার্মের মুরগির ডিম এবং ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ রেয়াজুল হক স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও পোলট্রি খাতসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের নেতাদের সমন্বয়ে গঠিত জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের মতামতের ভিত্তিতে ২০২৪ সালের জন্য ডিম ও মুরগির এই ‘যৌক্তিক মূল্য’ নির্ধারণ করা হয়েছে।
নতুন দর অনুসারে, খুচরা পর্যায়ে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি ১৭৯ টাকা ৫৯ পয়সা ও সোনালি মুরগি ২৬৯ টাকা ৬৪ পয়সা দরে বিক্রি হবে। এছাড়া খুচরা পর্যায়ে প্রতিটি ডিমের দাম রাখা হবে ১১ টাকা ৮৭ পয়সা করে। তাতে প্রতি ডজন ডিমের দাম পড়বে ১৪২ টাকা ৪৪ পয়সা। কিন্তু খুচরা বাজারে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ১৮০ টাকা। যা সাত দিন আগেও ১৬৫-১৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতিকেজি সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা। যা সাত দিন আগেও ২৮০ টাকা ছিল। আর ডজনপ্রতি ডিম বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ১৭০ টাকা। যা সাত দিন আগেও ১৫৫-১৬০ টাকা ছিল।
একই সঙ্গে প্রতিকেজি আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা। যা আগে ১০৫ টাকা ছিল। প্রতিকেজি খোলা সাদা আটা সর্বনিম্ন ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা সাত দিন আগেও ৩৮ টাকা ছিল। এছাড়া খুচরা বাজারে প্রতিকেজি মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকা। মাঝারি আকারের মধ্যে পাইজাম বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা। আর সরু চালের মধ্যে মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ৮০ টাকা।
নয়াবাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা মো. সালেকিন বলেন, বিগত সরকারের আমলে দেখেছি পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করে দায় সারে। এবারও একই চিত্র দেখা গেল। মূল্য নির্ধারণ হলো। কিন্তু বাজারে সেই দামে পণ্য মিলছে না। বরং সপ্তাহের ব্যবধানে মূল্য বাড়ানো হয়েছে। তদারকি সংস্থাও এই বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এতে আমাদের মতো ক্রেতাদের ভোগান্তি যেন কমছেই না। তিনি জানান, এই সরকারের আমলে ভেবেছিলাম বাজারে সিন্ডিকেট ভাঙবে। ক্রেতার স্বার্থ চিন্তা করে সব পণ্যের দাম সহনীয় অবস্থানে আনা হবে। কিন্তু তা না হয়ে কিছু পণ্যের দাম আরও বাড়ছে।
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রামে সরকার নির্ধারিত দামে মিলছে না ডিম ও মুরগি। অতিরিক্ত দামে বিক্রি হচ্ছে। দাম নির্ধারণ করার এক সপ্তাহ হলেও বাজারে কেউই মানছে না সরকারের বেঁধে দেওয়া দাম। ফলে এই দুই পণ্য নিয়ে সরকারি নির্দেশনা শুধু কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ। ফলে এসব পণ্য কিনতে ক্রেতাদের নাভিশ্বাস উঠছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, বাজারে ডিম বিক্রি হচ্ছে প্রতি ডজন ১৬৫ টাকা থেকে ১৭০ টাকা, যা সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের চেয়েও ২৫ টাকার বেশি। ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ১৮৫ টাকা করে, যা আবার নির্ধারণ করে দেওয়া দামের তুলনায় ৫ টাকার বেশি।
এদিকে চট্টগ্রামে ডিমের শক্তিশালী সিন্ডিকেট রয়েছে। ভারত থেকে আমদানি করা প্রতি পিস ডিমের দাম পড়ছে ৭ টাকার মতো। কিন্তু সিন্ডিকেট দাম কমাচ্ছে না। উলটো আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। ডিমের সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে কোটি কোটি টাকার মুনাফা হাতিয়ে নিচ্ছে। আমদানি খরচের দ্বিগুণ দামে ডিম বিক্রি করছে আমদানিকারকরা। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে অস্থির রয়েছে পেঁয়াজের দাম। সম্প্রতি সরকার পেঁয়াজ রফতানিতে শুল্কহার ৪০ থেকে কমিয়ে ২০ করে। একইসঙ্গে পেঁয়াজের রফতানি মূল্য ৫৫০ ডলার থেকে কমিয়ে ৪০৫ ডলার করা হয়। তারপরও বাজারে পেঁয়াজের দামে তেমন প্রভাব পড়েনি।
পাইকারি বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯৫ টাকা থেকে ৯৮ টাকা। আর খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা থেকে ১১২ টাকায়। পাইকারি বাজারে দেশীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা থেকে ৯২ টাকার বেশি দামে। খুচরা বাজারে দেশীয় পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ১০০-১০৫ টাকার বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। পাকিস্তান থেকে আমদানিকৃত পেঁয়াজ পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা থেকে ৯৫ টাকা। আর খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকার বেশি দামে। আর বড় আকারের চায়না পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা থেকে ৯৫ টাকা দামে। আর খুচরা বাজারে বিক্রি ১০৫ টাকার বেশি দরে। চালের দামও উর্ধ্বমুখী। রসুন ২২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া ইলিশের ভরা মৌসুম চললেও দাম চড়া। চট্টগ্রামের মাছের আড়তগুলো এখন সরগরম। ফিশারি ঘাটগুলো জমজমাট। চট্টগ্রামে নতুন ব্রিজস্থ ফিশারিঘাটে ১২০০-১৩০০ গ্রাম ওজনের মাছ খুচরায় সাধারণত ১৬০০-১৭০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ৮০০-৯০০ গ্রাম ওজনের মাছের বিক্রি হয় ১২৫০-১৩০০ টাকা কেজি। আর যেসব মাছের ওজন ৫০০-৬০০ গ্রাম সেগুলো বিক্রি হয় ৯০০-১০০০ টাকা কেজিতে। তবে মাছের সরবরাহ ও শহরের বিভিন্ন স্থানে মাছের দাম ১০০-১৫০ টাকার কম-বেশি বিক্রি হচ্ছে। তবে সুপারশপগুলোতে এর চেয়ে আরও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে ইলিশ।
বন্যার প্রভাবে সবজির দাম কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী। বেগুন কেজিতে ৩০ টাকা বেড়ে ১২০ টাকা, ৬০ টাকা থেকে বেড়ে ঢেঁড়স ৮০ টাকা, পটোল ১০ টাকা বেড়ে ৮০ টাকা, লাউ ১০ টাকা বেড়ে ৬০ টাকা ও ধনেপাতা ২০০ টাকা থেকে বেড়ে ২৩০ টাকা, গাজর ১০০ টাকা থেকে বেড়ে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।