মোকামে বাড়তি দরেই চালের বাজার

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৪; সময়: ৩:২০ অপরাহ্ণ |
মোকামে বাড়তি দরেই চালের বাজার

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, নওগাঁ : আউসের নতুন ফলন উঠেছে। হাটে ধানের দর কম। অথচ পাইকারী মোকামে চালের দর কমছে না। ভোক্তাকে বাড়তি দরে কিনতে হচ্ছে মোটা, সরু মাঝাড়ি সব ধরনের চাল। ফলে বাজারে স্বস্তি ফিরছে না।

বোরো এবং আমন মৌসুমের মাঝে ধান-চালের বড় একটা যোগান আসে আউস থেকে। চলতি মৌসুমের পাকা ধান কাটা ও মাড়াই প্রায় শেষ। চাষিরা ফলনে খুশি তবে বাজার দর নিয়ে তারা অসন্তোষ। অন্যদিকে নতুন ধান উঠলেও সুফল পাচ্ছেন না ভোক্তা।

বরং ধান-চালের বড় মোকামগুলোতে চলতি মাসের শুরুতে এক লাফে ৫০ কেজির বস্তায় চালের দাম বাড়ানো হয় দেড়শো টাকা থেকে ৩’শ টাকা পর্যন্ত। ভোক্তাদের অভিযোগ বাজারে তদারকির অভাবে মিলার ও ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমত দর বেঁধে দিয়ে ধান কিনছেন এবং চাল বিক্রি করছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে নওগাঁ জেলায় প্রায় ৫২ হাজার হেক্টর জমিতে আউস ধানের আবাদ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২ হাজার হেক্টর বেশী জমিতে চাষাবাদ করেছেন চাষিরা। উৎপাদন হয়েছে প্রায় ২ লাখ মেট্রিক টন। উত্তরের অন্য জেলাগুলোতেও আউসের ফলন ভালো হয়েছে।

দেখা গেছে, আগষ্টের শেষ সপ্তাহ থেকে উত্তরের জেলাগুলোতে আউস ধান কাটা শুরু হয়। ইতোমধ্যে চাষিরা প্রায় সব ফলন মাঠ থেকে ঘরে তুলেছেন। তারা এখন হাটগুলোতে ধান বিক্রি করছেন। কিন্তু অভিযোগ ভালো দর পাচ্ছেন না। নতুন ধান হাটে উঠতেই দর কমিয়েছে ব্যবসায়ীরা।

মহাদেবপুর উপজেলার উত্তরগ্রামের চাষি ফরিদুলল ইসলাম ও কবির হোসেনসহ কয়েক জন চাষি বলেন, আউস চাষাবাদে খরচ বাড়লেও সে তুলনায় ধানের দর উঠছে না।

স্থানীয় চকগৌড়ি, মহাদেবপুর ও মাতাজি হাটে প্রতিমন আউসের নতুন ধান ১ হাজার টাকা থেকে ১ হাজার ২০ টাকা মন দরে বিক্রি হচ্ছে। কমপক্ষে ১ হাজার ২০০ টাকা মন দর থাকলে চাষিরা লাভের মুখ দেখতে পেতেন।

কিন্তু মিলার ও আরতদাররা সিন্ডিকেট করে কম দরে ধান কিনছে অভিযোগ করেন এই চাষিরা। পুরাতন অর্থাৎ বোরো মওসুমের সরু ধান বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪০০ টাকা মন। পুরাতন মোটা ধানের দর ১২শ টাকা।

এ বিষয়ে মহাদেবপুর হাটের আরতদার সামিউল ইসলাম বলেন, নতুন কাঁচা ধান হিসেবে আউসের ভালো দাম পাচ্ছেন চাষিরা। গত বছর এই ধান ৮০০ টাকা মনে বিক্রি হয়েছে। চলতি বছরে চাষিরা ধানের ভালো বাজার দর পেয়েছেন দাবি করেন তিনি।

এদিকে হাটগুলোতে ধানের যোগান বাড়লেও চালের বাজার তার কোন প্রভাব নেই। ভাত খেতে বাড়তি দরেই চাল কিনতে হচ্ছে ভোক্তাকে। নওগাঁর পাইকারী আরত ও মিলগেটে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি মাসের শুরুতেই মোটা ও মাঝাড়ি চালে দেড় থেকে ২ টাকা এবং সরু চালের কেজিতে ৩ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। সেই বাড়তি দরেই এখনও চাল বিক্রি হচ্ছে।

বর্তমান বাজারে ৫০ কেজি প্রতি বস্তা শর্টার সিল্কি সরু জাতের জিড়া ও কাটারী নাজির ৩ হাজার ২০০ টাকা থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিআর আটাশ, ঊনত্রিশ ও ঊনপঞ্চাশসহ মাঝাড়ি চাল ২ হাজার ৯০০ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা।

শ্বর্ণা, গুটিশ্বর্না, খাটোদশসহ মোটা ও হাউব্রীড চাল ২ হাজার ২০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। নতুন ধান উঠেছে তবুও কেন চালের দর কমছে না? এমন প্রশ্নে নানা অযুহাত দিচ্ছেন মিলার ও ব্যবসায়ীরা।

নওগাঁ জেলা ভোক্তা অধিকার আন্দোলনের আহবায়ক জয়নাল আবেদীন মুকুল বলেন, ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের যাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছে সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে খেটে খাওয়া শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষের পক্ষে বেঁচে থাকাটাই কঠিন হয়ে পড়েছে।

তিনি আরও বলেন, নওগাঁ, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, বগুড়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ বড় চালের বড় মোকামগুলোতে পুঁজিপতিরা মজুতদাররা ধান কিনে মজুত করে রেখেছে। মিলারদের গুদামেও হাজার-হাজার টন ধান ও চাল আছে। তবুও দর কমছে না।

হাটগুলোতে আরতদারদের মাধ্যমে কৃষকের কাছ থেকে কম দরে ধান কিনে মিলাররা। সেই ধান থেকেই চাল বের করে অধিক মুনাফা লুটে নেয়া হচ্ছে। সঠিক তদারকি না থাকায় চালের দর নিয়ন্ত্রন ও সামঞ্জস্যে আসছে না বলে মন্তব্য করেন এই সংগঠক।

এ প্রসঙ্গে নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার রাইস মিলার গোলাম মোস্তফা বলেন, সরু ধানের সিংহভাগ মজুত করেছে হাতে গোনা বড় মিলার ও কয়েকটি গ্রুপ কোম্পানি। ফলে সেসব মিলারের মর্জির উপড় নির্ভর করে চালের দর। ক্ষুদ্র ও সাধারন মিলাররা প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছেন না। ফলে নতুন ধান উঠলেও চালের বাজারে প্রভাব পড়ছে না।

নওগাঁ জেলা চালকল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার বলেন, দেশে এই মুহুর্তে ধান-চালের কোন সংকট নেই। বাজার দর স্থিতিশীল আছে। সরকারী গুদামে সরবরাহের কারনে মোটা জাতের চালে টান পড়েছিলো। ফলে সেপ্টেম্বরের শুরুতে বাজার উর্দ্ধমূখী হয়েছিলো। পরবর্তীতে আউসের নতুন ধান উঠার ফলে স্থিতিশীলতায় দাঁড়িয়ে গেছে।

দেশের উত্তর এবং উত্তর পশ্চিম অঞ্চলে মাঝাড়ি ও সরু জাতের ধান চাষ বেশী হয়। হাওরে বেশী হয় মোটা। ভোক্তাদের কাছে সরু ও মাঝাড়ি চালের চাহিদা বেশী। সে কারনে উত্তরে কর্পোরেট ব্যবসায়ী গ্রুপের বেশ কিছু রাইসমিল গড়ে উঠেছে।

ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ওই মিলগুলোর সাথে তাল মিলিয়ে দর বাড়ান-কমান। তাই চালের বাজার নিয়ন্ত্রনে মিল থেকে ভোক্তা পর্যন্ত নিয়মিত তদারকির পরামর্শ দেন ভোক্তা অধিকার আন্দোলনের নেতারা।

 

 

পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে