গাজীপুরে ঝুট ব্যবসা দখলে বিএনপি নেতাদের লড়াই
পদ্মাটাইমস ডেস্ক : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তোপের মুখে শেখ হাসিনার দেশ ছেড়ে পালানোর পর আত্মগোপনে চলে যান আওয়ামী লীগের আমলে ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণকারী নেতাকর্মীরা। এ সুযোগে বিএনপি নেতাকর্মীরা ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। হামলা, হুমকি-ধমকির পাশাপাশি চলছে ক্ষমতার প্রদর্শনী। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ বিএনপির দুঃসময়ের ত্যাগী নেতাকর্মী।
জানা যায়, গাজীপুর সদর উপজেলায় ছোট-বড় প্রায় ১৬০টি কারখানা রয়েছে। এসব কারখানার ওয়েস্টিজ (ঝুট) ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে জন্য এলাকাভিত্তিক দলীয় প্রভাব খাটানোর চেষ্টা চলমান রয়েছে। নিজেদের মধ্যেই তৈরি হয়েছে একাধিক পক্ষ। এর মধ্যেই মির্জাপুরের বিডি ফুডস লি., ডগরী এলাকার বিটুবি এক্সিলেন্স লিমিটেড, কালিয়া রিপলেকা লিমিটেড কারখানা, কেডিএস ফ্যাক্টরি, মনিপুরের এনার্জি প্যাক, ইউটা স্পিনিং, খামারবাড়ি রোডের এলিগেন্স লিমিটেড, জেসান এগ্রোভেজ, রাজেন্দ্রপুরের এনএজেড বাংলাদেশ, ভবানীপুরের সিলিকন ইন্ডাস্ট্রি, মোহাম্মদীয়া সোয়েটার, নতুন বাজার এলাকার মেঘনা গ্রুপ, এসএম গ্রুপ, বাংলাবাজার তালহা ফেব্রিক্স লিমিটেড, ভাওয়ালগড় ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডে অবস্থিত জেসন এগ্রোভেট লিমিটেডসহ আরও অনেক কারখানায় দলীয় প্রভাব খাটিয়ে ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে নেতারা।
দখলবাজিতে গাজীপুর সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবু তাহের মুসল্লি, মির্জাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ফজল মুসল্লি, সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম বাদল, জেলা বিএনপির যুগ্ম-সম্পাদক ও ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক আবু বক্কর সিদ্দিক, কোষাধ্যক্ষ ইসলাম উদ্দিন, জেলা যুবদলের সদস্য জাহাঙ্গীর সিকদার, বাশার প্রমুখের নাম এসেছে।
জেলার বড় বড় নেতাদের নাম ভাঙিয়ে ব্যবসা দখলে নিয়েছেন তারা। অভিযোগ রয়েছে এখন যারা ঝুট ব্যবসা দখল নিয়েছে, তারা আগে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তারা সাবেক মুক্তিযোদ্ধামন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ও সংসদ-সদস্য ইকবাল হোসেন সবুজের সঙ্গে চলাফেরা করতেন। কেডিএস কারখানার প্রশাসনিক কর্মকর্তা সরোয়ার হোসাইন বলেন, সাধারণত ঝুটের ব্যবসা রাজনৈতিক নেতারা নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন।
ঝামেলার কারণে আমার গাড়িতেও হামলা হয়েছে। ব্যবসা ঘিরেই হামলা হয়েছে। হামলা যেদিন হয়েছে সেদিন স্থানীয় বাশারের ছেলে সাইফুল আমাকে হুমকি দিয়েছে। কেডিএস এক্সেসরিজ লিমিটেড নামের কারখানা ওয়েস্টেজ মালামালের ব্যবসা করতেন ইদ্রিস চৌধুরী। ৫ আগস্টের পর স্থানীয় বিএনপি নেতা আবু তাহের মুসল্লি ও সাইফুল ইসলাম নামে দুজন তাকে ফোন করে ব্যবসা আর করতে পারবেন না বলে হুমকি দেন।
পরে এই ঘটনায় ইদ্রিস চৌধুরীর ম্যানেজার মাহবুবুর রহমান জয়দেবপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। ম্যানেজার মাহবুবুর রহমান বলেন, আমরা দীর্ঘদিন হলো এই কারখানায় ওয়েস্টেজের মালামালের ব্যবসা করে আসছি। অভিযোগে উল্লিখিত নেতাকর্মীরা আমাদের আর ব্যবসা করতে দিচ্ছে না।
মির্জাপুর ইউনিয়ন যুবদলের সদস্য সচিব শরিফুল বাশার সজল বলেন, দলের কর্মী হিসাবে দলকে ভালোবাসি কিন্তু ফ্যাক্টরি ব্যবসা নিয়ে এখন যা হচ্ছে তা কাম্য নয়। এগুলো সদর উপজেলার শীর্ষস্থানীয় নেতাদের নির্দেশেই হচ্ছে। মির্জাপুর ইউনিয়ন বিএনপি সাবেক সভাপতি মান্নান সিকদার বলেন, আমরা যাদের রাজনীতিতে এনেছি তারা এখন কথা শুনতে চায় না।
গাজীপুর সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবু তাহের মুসল্লি বলেন, আমরা কোনো ঝুট ব্যবসার সঙ্গে জড়িত না। থানায় আমার নামে একটা অভিযোগ হয়েছে আমি শুনেছি এটা তদন্ত করা হোক। জেলা বিএনপির যুগ্ম-সম্পাদক ও ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক আবু বক্কর সিদ্দিককে একাধিকবার ফোন দিলেও পাওয়া যায়নি। জেলা বিএনপির কোষাধক্ষ্য ইসলাম উদ্দিন বলেন-আমি ব্যস্ত আছি ভাই বলে তিনি ফোন কেটে দেন।
জেলা বিএনপির সম্পাদক শাহ রিয়াজুল হান্নান বলেন, দলীয় পরিচয় বহন করে কারখানায় ব্যবসা করার সুযোগ নেই। কারও বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।