গার্মেন্ট শ্রমিকদের ১০ কোটি টাকা নিয়ে উধাও লালপুরের সেলিনা বেগম

প্রকাশিত: নভেম্বর ১, ২০২৪; সময়: ৬:০৭ অপরাহ্ণ |
গার্মেন্ট শ্রমিকদের ১০ কোটি টাকা নিয়ে উধাও লালপুরের সেলিনা বেগম

নিজস্ব প্রতিবেদক, লালপুর (নাটোর) : সাশ্রয়ী দরে পণ্য বিক্রির ফাঁদ পেতে গাজীপুরের এক গ্রার্মেন্টস কারখানার ৪ শতাধিক শ্রমিক ও ব্যবসায়ীর প্রায় ১০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও লালপুরের মেয়ে সেলিনা বেগম (৪৩)। গাজীপুর বাসন থানা এলাকার কলম্বিয়া গার্মেন্টস লি: এর শতাধিক শ্রমিক ও ওই এলাকার কয়েক জন ব্যবসায়ী শুক্রবার দুপুরে লালপুরে এসে বিক্ষোভ করেন।

এ সময় তারা লালপুর থানা ও সেনাবাহিনী ক্যাম্পে সেলিনা বেগমের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। এর আগে তারা বাসন থানাতেও তার নামে লিখিত অভিযোগ করেছেন। সেলিনা বেগম কলম্বিয়া গার্মেন্টস লি: এর সাবেক নিরাপত্তা কর্মী (চেকার) এবং লালপুর উপজেলার দুয়ারিয়া ইউনিয়নের হোসেনপুর গ্রামের মজিরুদ্দিন সরকারের স্ত্রী ও একই গ্রামের আব্দুস সালামের মেয়ে।

ভুক্তভোগী গার্মেন্ট শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা জানান, সেলিনা খাতুন বাজার দরের চেয়ে ১৫০/২০০ টাকা কমদরে ৫ কেজি সোয়াবিন তেল, ২ হাজার টাকা কম দরে প্রতি বস্তা চিনি এবং ৫শ/৭শ টাকা কম দরে প্রতি বস্তা মসুর ডাল শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের মাঝে বিক্রি করতেন। শর্ত হিসেবে ১ মাস আগে পণ্যের দাম নগদ নিয়ে নিতেন। নিরাপত্তা হিসেবে নিজের জাতীয় পরিচয় পত্রের পেছনে গৃহত টাকার পরিমান ও তার বিনিময়ে প্রাপ্য পণ্য দেওয়ার তারিখ লিখে স্বাক্ষর করে দিতেন। গার্মেন্টস শ্রমিকরা কম দামে তেল, চিনি, ডাল কিনে সামান্য লাভে অন্য শ্রমিকদের মাঝে বিক্রি করতেন। আর ওই পণ্য ক্রয় করে ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফা পেতেন।

তারা জানান, একপর্যায়ে সেলিনা বেগম চাকুরী ছেড়ে কলম্বিয়া গার্মেন্টস কারখানার পাশের সামসুদ্দিন মার্কেটে দোকান ভাড়া নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। প্রায় তিন বছর ধরে কলম্বিয়া গার্মেন্টস কারখানার শ্রমিক ও ওই কারখানা এলাকার মুদি ব্যবসায়ীদের সাথে সেলিনা বেগম কম দরে পণ্য দেওয়ার ব্যবসা করে প্রায় ১০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। মাস খানেক আগে সেলিনা বেগম তার দোকান বন্ধ করে উধাও হয়ে যান।

গার্মেন্ট শ্রমিক আলেয়া আক্তার বলেন ‘আমার স্বামীর চিকিৎসার জন্য ৬৫ হাজার টাকা রেখে ছিলাম। সেলিনা আমাকে কম দামে তেল, চিনি, ডাল দেওয়ার লোভ দেখিয়ে সে টাকা নিয়ে পালিয়েছে। এখন আমার সংসার ভাঙ্গার উপক্রম হয়েছে।’
গার্মেন্টন ঝাড়ুদার রেজিয়া জানান, কম দামে তেল, চিনি ও ডাল দেওয়ার নাম করে সেলিনা তার কাছ থেকে দেড় মাসে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা নিয়েছে।

মুদিদোকানী আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘সেলিনা বেগমের কাছ থেকে আমি প্রায় দেড় কোটি টাকা পাবো। এর মধ্যে ৫২ লক্ষ ৮৮ হাজার ২শত টাকার হিসাব স্ট্যাম্পে লিখা আছে।’ তিনি জানান, আত্মীয় স্বজনদের কাছ থেকে ধার করেও তাকে টাকা দিয়েছেন। এনিয়ে বিপদে আছেন।

মুদি ব্যবসায়ী আব্দুর রহিম জানান, তিনি সেলিনা বেগমের সাথে প্রায় ৩ বছর ধরে তেল, চিনি, মসুর ডাল ক্রয় করছেন। গত তিন মাসে ৬২ লক্ষ নিয়ে আর কোন পণ্য সে দেয়নি।

এছাড়া সাইফুল ইসলামের নিকট থেকে ২০ লাখ টাকা, হেলেনা খাতুনের ২ লাখ ৭৩ হাজার টাকা, রিপন তালুকদারের ১৪ লাখ ৩৫ হাজার টাকা, জয়নবের তিন লাখ ৯৭ হাকার টাকা, জাকির হোসেনের ২ লাখ টাকা, নাজমা ফারিহার ৬ লাখ ৭০ হাজার টাকা, মনোয়ারা খাতুনের ৬০ হাজার টাকা, শারমিনের ১ লাখ ১৮ হাজার ৫শ টাকা সহ প্রায় ৪শ শ্রমিক ও ব্যবসায়ীর টাকা নিয়েছেন সেলিনা বেগম।

গার্মেন্টস কর্মীরা জানান অথ্যধিক কমদামে পণ্য কিনে অধিক লাভের আশায় নিজের টাকা ছাড়াও আত্মীয় স্বজনদের নিকট থেকে ধারে টাকা নিয়ে সেলিনা বেগমকে দিয়েছিলেন।

লালপুর থানার ওসি নুরুজ্জামান জানান, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট গাজীপুরের বাসন থানায় মামলা দায়ের এর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

 

 

 

পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে