স্বস্তি নেই সবজিতে, দামের উত্তাপে ইলিশ ছুঁতেও ভয়
জেষ্ঠ্য প্রতিবেদক, বাঘা : বাড়তি দামের কারণে ব্যয় বাড়ছে নিত্যপণ্যর। আগে রান্নার পদে নিয়মিত পাঙাশ বা তেলাপিয়া-সিলভারকার্প মাছ রাখলেও এখন বাড়তি দামে হিমশিম খাচ্ছেন-কর্মজীবী ও শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন মেসে দুপুরের খাবার সরবরাহকারি আনার আলী। তার ভাষ্য, মেস চালানো এখন অনেক কষ্ট। এতে খাবারের দাম বাড়ালে কাস্টমাররা কিনতেও চায় না। অন্য জায়গায় চলে যায়। আবার খাবারের দাম না বাড়ালেও লাভ থাকে না।
ক্রেতারা বলছেন,দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর অনেক কিছু বদলালেও, উল্টোচিত্র বাজারে। চাঁদাবাজি ও সিন্ডিকেটে হয়েছে কেবল মুখবদল। ফলে নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বমুখী দাম এখনও পকেট কাটছে ভোক্তাদের। আর মাছের বাজার অস্থির আগে থেকেই।
লাগামহীন বাজারে দেশি মাছের পাশাপাশি স্বস্তি নেই পাঙাশ-সিলভারকার্প,তেলাপিয়াতেও। আর রুপালী ইলিশ যেন দেখেই শান্তি। দামের উত্তাপে হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখতেও ভয় সাধারণ ক্রেতার। মাছের এই ঊর্ধ্বমুখী দামে নাজেহাল অবস্থা নিম্নবিত্ত থেকে শুরু করে উচ্চ মধ্যবিত্ত সবারই।
ক্রেতা-বিক্রেতারা জানান, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর দাম কিছুটা সহনীয় থাকলেও বাজারে নিত্যপণ্যের দাম আবার ঊর্ধ্বমুখী। ব্যবসায়ীদের দাবি, বাজার চলে চাহিদা ও যোগানের ভিত্তিতে। কিছুসংখ্যক ব্যবসায়ী হয়তো সিন্ডিকেট করে থাকেন। যার দায় পড়ে গোটা ব্যবসায়ী সমাজের ওপর।
রোববার (২৪নভেম্বর) বাঘা পৌর বাজারে আসা কলেজ শিক্ষক আব্দুল হানিফ জানান, আগে জানতাম ভাতে-মাছে বাঙালি। কিন্তু এখন সাধারণ মানুষের পাতে প্রতিদিন মাছ ওঠাই দুষ্কর। বিশেষ করে ইলিশ কেনা তো দুরূহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। দাম জিজ্ঞেস করা তো দূরের কথা, ইলিশ এখন ছুঁয়ে দেখতেও ভয় লাগে।
সরেজমিন উপজেলার বাঘা বাজার,মনিগ্রাম বাজার,আড়ানি বাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে চড়া প্রায় সব ধরনের মাছের দাম।
বাজারে কেজি ওজনের রুই ৩০০ টাকা, কাতল ২৫০ টাকা, ছোট আকারের দেশি শিং ৩০০ টাকা, ঘেরের চিংড়ি ৭০০ টাকা, চাষের কৈ ২২০ টাকা, পবদা -টেংরা ৪০০ টাকা, চাষের পাঙাশ ১৮০ টাকা ও তেলাপিয়া ১৬০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বোয়াল , আইড় , দেশি শোল-কৈ মাছের দেখাই মিলছেনা বাজারে। পাওয়া গেলেও দাম চড়া।
আর ইলিশ বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামেই। এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২০০০ টাকা দরে। আর ৮০০-৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১৫০০-১৬০০ টাকা,৫০০-৬০০ গ্রামের ইলিশ ১৩০০টাকা ও ২৫০-৩০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের জন্য কেজিতে গুনতে হচ্ছে ৭০০ টাকা পর্যন্ত।
ব্যবসায়ীরা জানান, নদীর মাছের দাম আগে থেকেই চড়া। গত আগষ্ট মাসে অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। সরবরাহ কমায় দাম বাড়ছে মাছের।
বাঘা বাজারের মাছ ব্যবসায়ী মহসিন আলী বলেন, ইলিশ মজুতের প্রবণতা শুরু হওয়ায় বাজারে সরবরাহ কমছে । ফলে দাম বাড়ছে।
মাছ ব্যবসায়ী ইনছার আলী বলেন, দেশি মাছের দাম আগে থেকেই বাড়তি। বর্তমানে নদী শুকিয়ে যাওয়ায় নদীর মাছের সরবরাহ কমে গেছে। এখন তেমন একটা মাছ মিলছে না।
ভোক্তাদের দাবি, বাজারে পর্যাপ্ত মাছ থাকলেও সংকটের কথা বলে কারসাজি করছেন ব্যবসায়ীরা। স্বস্তি নেই সবজির বাজারেও। শিম-করলা ১২০ টাকা কেজি,ফুল কফি-আলু ৮০ টাকা কেজি। তবে ৬০ টাকা হালির ডিম এখন বিক্রি হচ্ছে ৫২ টাকা হালি।
অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুস সামাদ বলেন, বাজারে এসে সেই সিন্ডিকেটের কবলেই পড়তে হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি সমন্বয়ে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপে ভোক্তা প্রতিনিধি না থাকায় হতাশার জন্ম দিয়েছে। অসাধু মজুতদারীদের সিন্ডিকেট না ভাঙতে পারলে দাম বেঁধে দিয়ে কখনোই বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। এর আগেও বেঁধে দেওয়া দামে কোনো পণ্য বাজারে পাওয়া যায়নি।
কৃষিবিদ মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, শুধুমাত্র বাজারে দাম নির্ধারণ করে দিলেই হবে না, সংশ্লিষ্ট রেগুলেটরী প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়মিত বাজার তদারকি ও আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। বাজার তদারকির পাশাপাশি উৎপাদন খরচ কমিয়ে স্থানীয়ভাবে সরবরাহ বাড়াতে উদ্যাগী হতে হবে। বাজার থেকে পর্যাপ্ত তথ্য যাচাই-বাছাই করে দাম নির্ধারন করতে হবে। এতে স্বস্তি ফিরবে বাজারে।
কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) রাজশাহীর সাধারন সম্পাদক গোলাম মোস্তফা মামুন বলেন,ব্যবসায়ীদের একটি অংশ বরাবরই সুযোগ সন্ধানী। তারা এখন খোলস বদলেছেন, পদ্ধতি বদলেছেন। তারা পেছনে থেকে অন্য আরেকজনকে দিয়ে বাজারে সিন্ডিকেট করেন বা অপকর্ম চালান।
উপজেলা নির্বাহি অফিসার শাম্মী আক্তার বলেন, ‘আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বাজার মনিটরিংয়ে রাখার নির্দেশ দিয়েছি। তারা নিয়মিত করছেও তা। এগুলোর প্রভাব এরইমধ্যে বাজারে পড়তে শুরু করেছে।