কোষ্ঠকাঠিন্য দূরসহ ১০ উপকার পালং শাকের
পদ্মাটাইমস ডেস্ক : এখন শীতকাল, শাকসবজির মৌসুম। শাকের মধ্যে পালংশাকের রয়েছে বিশেষ চাহিদা। এতে প্রচুর পুষ্টিগুণ রয়েছে, যা শীতকালে আপনার শরীরকে সুস্থ ও সবল রাখার বড় উপাদন।
পালংশাকে যত রকমের পুষ্টি আছে, তার মধ্যে প্রতি ১০০ গ্রাম পালংশাকে প্রোটিনের পরিমাণ আছে ২.০ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট ২.৮ গ্রাম, আয়রন ১১.২ মি. গ্রাম, ফসফরাস ২০.৩ মি. গ্রাম, নিকোটিনিক অ্যাসিড ০.৫ মি. গ্রাম, অক্সালিক অ্যাসিড ৬৫২ মি. গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৭৩ মি. গ্রাম, পটাশিয়াম ২০৮ মি. গ্রা।
আর এতে আঁশের পরিমাণ ০.৭ গ্রাম। এতে প্রচুর ভিটামিন বিদ্যমান রয়েছে। এতে ভিটামিন-এ আছে ৯৩০০ আইইউ, রিবোফ্লোবিন ০.০৮ মি. গ্রাম, ভিটামিন সি ২৭ মি. গ্রাম ও থায়ামিন ০.০৩ মি. গ্রাম।
তাই নিজেকে সুস্থ রাখতে প্রতিদিন খাদ্যতালিকায় রাখুন পালংশাক। চলুন পালংশাকের ১০ স্বাস্থ্যকর গুণাগুণ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই।
১. রক্তচাপ কমাতে পালংশাক খান। পালংশাকে রয়েছে উচ্চমাত্রার ম্যাগনেসিয়াম। ফলে নিয়মিত পালংশাক খেলে তা আমাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
২. দেহের ওজন কমাতে পালংশাক অপরিহার্য। যদি কম ক্যালোরি যুক্ত খাবার বাছাই করতে চান, সে ক্ষেত্রে আপনি পালংশাককে বেছে নিতে পারেন। কারণ প্রতি ১০০ গ্রাম পালং শাকে ক্যালোরি রয়েছে ৭ কিলোক্যালোরি, যা আপনার শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করে।
৩. পালংশাক কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা রয়েছে, তাদের ভালোভাবে জীবনযাপন করাটা অনেক কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। অনেকে আবার কোষ্ঠকাঠিন্যের ভয়ে বিভিন্ন ধরনের খাবার খেতে ভয় পান। যেহেতু পালংশাকে প্রচুর পরিমাণে আঁশ থাকে, তাই কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে নির্ভয়ে খেতে পারেন পালংশাক।
৪. চোখ ভালো রাখতে পালংশাক খান। বিভিন্ন প্রকার সবুজ শাকসবজিতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ফাইটোকেমিক্যাল থাকে, যা আমাদের দৃষ্টিশক্তির ক্ষতি বাধা দেয়। পালংশাকে রয়েছে উচ্চমাত্রার বিটাক্যারোটিন, যা আমাদের চোখের ছানিপড়ার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
৫. পালংশাক ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। পালংশাকে থাকা ভিটামিন এ ত্বকের বাইরের স্তরের আর্দ্রতা বজায় রাখতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটা বিভিন্ন ধরনের ত্বকের সমস্যা যেমন ব্রণ, বলিরেখা পড়া ইত্যাদির দূরীকরণেও বেশ কার্যকর। এ ছাড়া এটা ত্বকের বয়সের ছাপ পড়ার গতিকে ধীরগতি করে এবং ত্বককে নরম ও স্থিতিস্থাপক অবস্থা ধরে রাখতে সাহায্য করে।
৬. পালংশাক দেহের ক্লান্তিভাব দূর করে। পালংশাকে রয়েছে উচ্চমাত্রার আয়রন, যা দেহে অক্সিজেন উৎপাদনের জন্য খুবই জরুরি। এ ছাড়া এতে রয়েছে প্রয়োজনীয় অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা ভিটামিন সি ও ই-কে ত্বরান্বিত করে আমাদের পুনরুজ্জীবিত করতে সাহায্য করে। এতে আমাদের শরীরের ক্লান্তিভাব দূর হয়। এ ছাড়া এই সবজি আমাদের রক্তের চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে।
৭. প্রদাহজনিত সমস্যা রোধ করতে পালংশাক খান। পালংশাকে রয়েছে নিওজেন্থিন নামক উপাদান, যা প্রদাহ নিরাময়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যাদের জয়েন্টে ব্যথার সমস্যা আছে, তারা অবশ্যই প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় পালংশাক রাখতে পারেন।
৮. পালংশাক হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখে। পালংশাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফলিক এসিনেজা সুস্থ কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমের জন্য খুবই জরুরি। তাই হৃদযন্ত্রকে ভালো রাখতে সাশ্রয়ী ও সহজলভ্য সবজিটি আমাদের খাদ্যতালিকায় নিয়মিতভাবে রাখা দরকার।
৯. পালংশাক দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এই সবজিতে থাকা পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ‘এ’ সহ রোগপ্রতিরোধী রক্তের শ্বেত কণিকার সঠিক মাত্রা বজায় রাখে। ফলে দেহ বিভিন্ন সংক্রমণ ও রোগ থেকে রক্ষা পায়।
১০. পালংশাক ক্যানসারের বিরুদ্ধে কাজ করে। পালংশাকে রয়েছে ১০টিরও বেশি ভিন্ন ধরনের ফ্ল্যাভোনয়েড, যা ভয়ানক রোগের বিরুদ্ধে কাজ করে। এই পলিনিউট্রিয়েন্টসগুলো দেহের ফ্রি রেডিকেলকে নিরপেক্ষ করে। ফলে দেহ থাকে ক্যানসারের আক্রমণ থেকে ঝুঁকিমুক্ত।
আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় বিভিন্ন প্রকার শাকসবজি থাকা এক কথায় বাঞ্ছনীয়। কারণ শাকসবজি ছাড়া সুষম খাবারের শর্তই পূরণ হয় না। আমাদের সবারই উচিত প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় শাকসবজি রাখা। তাই সুষম খাদ্য উপাদান হিসাবে পালংশাক হতে পারে একটি আদর্শ সবজি।