রাকসু নির্বাচন নিয়ে ‘ধীরে চলো’ নীতিতে রাবি প্রশাসন

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২০; সময়: ৫:১০ অপরাহ্ণ |

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাবি : দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে অচল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু)। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসংগঠনগুলো দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচনের মাধ্যমে রাকসু সচলের দাবি জানিয়ে আসছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের পর রাকসু নির্বাচনের ঘোষণা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। প্রথম দিকে রাকসু নির্বাচন নিয়ে প্রশাসন তোড়জোড় দেখালেও পরে ‘ধীরে চলো’ নীতিতে এগিয়েছে।

নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার পাশাপাশি কবে নাগাদ নির্বাচন হবে এ নিয়ে প্রশাসন কার্যত চুপ থেকেছে। প্রায় এক বছর ধরে চলছে রাকসু সংলাপ। আদৌ নির্বাচন হবে কি-না-এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ছাত্রসংগঠনগুলো ধোঁয়াশার মধ্যে রয়েছে।

রাকসু সংলাপের নামে এক বছর অতিবাহিত হওয়ার পর এখন আর কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। ফলে নির্বাচন নিয়ে যে আশার সঞ্চার হয়েছিল তা সংলাপেই শেষ হয়েছে। দীর্ঘ দিনের সংলাপের পর প্রশাসন বলছে, নির্বাচন দেওয়ার মতো ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু পরিবেশ নেই।

অন্যদিকে, ছাত্র রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর অভিযোগ, বর্তমানে ক্যাম্পাসে স্থিতিশীল পরিবেশ বিরাজ করছে। প্রশাসন রাকসু সংলাপের মাধ্যমে মূলত কালক্ষেপণ করেছে। সত্যিকার অর্থে প্রশাসন রাকসু চায় না। যে প্রক্রিয়ায় প্রশাসন নির্বাচন আয়োজনের কার্যক্রম পরিচালনা করেছে তাতে আদৌ নির্বাচন দেওয়া সম্ভব হতো কিনা তারা সন্দিহান।

জানা যায়, ১৯৫৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর প্রথম রাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৫৬-৫৭ মেয়াদে। ওই সময় এর নাম ছিল রাজশাহী ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (রাসু)। মাঝখানে আইয়ুব খানের শাসনামলে এর কার্যক্রম বন্ধ থাকার পর ১৯৬২ সালে এটি যাত্রা শুরু করে রাকসু নামে। এখন পর্যন্ত ১৪ বার রাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৮৯-৯০ মেয়াদের জন্য। এর মধ্যে ১৯৭০ থেকে ১৯৭২ সাল কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। পরে সামরিক শাসনামলে ১৯৭৫ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত এবং ১৯৮১ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত বন্ধ ছিল রাকসু।

রাকসু সংলাপ কমিটি সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ৭ ফেব্রম্নয়ারি ছাত্র ফেডারেনের সঙ্গে সংলাপের মধ্যদিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় রাকসু সংলাপ। দীর্ঘ ৬ মাস ছাত্র রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, স্বেচ্ছাসেবী-সামাজিক সংগঠনগুলোর সংলাপ শেষে ৪ জুলাই আবাসিক হলের প্রাধ্যক্ষদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গেও সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। সংলাপে ছাত্র সংগঠন ও শিক্ষার্থীরা তাদের বিভিন্ন দাবি সংলাপ কমিটির কাছে তুলে ধরেন।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, রাকসু নির্বাচন নিয়ে কিছুদিন আগেও আমরা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি। এটি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে তারা আমাদের জানিয়েছেন। ক্যাম্পাসে এখন নির্বাচনের জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ রয়েছে। এখনই নির্বাচন দেওয়ার উপযুক্ত সময়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কেন দ্রম্নত কার্যক্রম করছে না তা জানি না। তবে আমরা আবারও প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে দ্রম্নত তফসিল ঘোষণার দাবি জানাব।

রাকসু আন্দোলন মঞ্চের আহ্বায়ক আব্দুল মজিদ অন্তর বলেন, রাকসু কার্যকর না থাকায় শিক্ষার্থীরা তাদের অধিকারের কথা বলতে পারছে না। আমরা দীর্ঘদিন ধরে রাকসু নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করে আসছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সংলাপ আয়োজনের পর ক্যাম্পাসের রাজনৈতিক সহাবস্থান নিশ্চিতের পাশাপাশি দ্রম্নত তফসিল ঘোষণার আশ্বাস দেন। প্রশাসনের আশ্বাসে আমরা আন্দোলন সাময়িক স্থগিত রাখি।

পরে আমরা নির্বাচনের অগ্রগতির ব্যাপারে জানতে চাইলে ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীল পরিবেশ রয়েছে জানিয়ে নানা তালবাহানা শুরু করে। সত্যিকার অর্থে প্রশাসন রাকসু চায় না। কারণ এখন তারা যেভাবে সব সিদ্ধান্ত এককভাবে নিতে পারছে, রাকসু সচল থাকলে তা আর পারবে না। তাই মূলত রাকসু হচ্ছে না। নির্বাচনের দাবিতে আমরা আবারও আন্দোলন শুরু করব।

রাবি শাখা ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মহব্বত হোসেন মিলন বলেন, রাকসু সংলাপ কমিটি গঠনের প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও নির্বাচনের জন্য যথাযথ পদক্ষেপ আমরা দেখতে পাইনি। বিভিন্ন সময় কমিটির কাছে জানতে চাইলেও তারা সংলাপের দীর্ঘসূত্রতার কারণ সম্পর্কে যথার্থ কোনো যুক্তি দেখাতে পারেনি। দ্রম্নত নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের জন্য প্রাণচঞ্চল ও গণতান্ত্রিক ক্যাম্পাস বিনির্মাণ করার দাবি জানাচ্ছি।

রাকসু সংলাপ কমিটির আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, ছাত্র-ছাত্রীদের প্রাণের দাবি রাকসু নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটি সংলাপ কমিটি গঠন করে। আমরা ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেছি, সবাই রাকসু নির্বাচন চায়। আমরা হল প্রাধ্যক্ষদের সঙ্গেও কথা বলেছি।

অধিকাংশ প্রাধ্যক্ষই আবাসিক হলে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নেই বলে মত দিয়েছেন। তাছাড়া ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে সহাবস্থান নেই। আমাদের পরবর্তী পরিকল্পনা ছিল রাকসুর সাবেক ছাত্রনেতাদের সঙ্গে কথা বলা। কিন্তু সমাবর্তন, ভর্তি পরীক্ষার কারণে আমাদের কার্যক্রম সম্পন্ন করতে কিছুটা দেরি হয়েছে। এখন ফের নতুন করে হলগুলোতে সংলাপ শুরু করব।

ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু পরিবেশ নেই; প্রশাসনের এমন দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, বিগত বছরগুলোতে ক্যাম্পাসে মৌলবাদী ছাত্রশিবিরের যেরকম প্রভাব ও অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করেছিল, তা এখন নেই। এখন ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা নির্বিঘ্নে ও নির্ভয়ে চলাফেরা করতে পারে। আর প্রশাসন যদি মনে করে যে ক্যাম্পাসে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নেই তাহলে এটি ঠিক নয়।

পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে