সহবাসের পর পেটব্যথার ৬ কারণ

প্রকাশিত: মার্চ ২, ২০২০; সময়: ৫:২৮ অপরাহ্ণ |
সহবাসের পর পেটব্যথার ৬ কারণ

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : আমরা প্রায়শ সহবাসে সুখানুভবের কথা বললেও সহবাস সম্পর্কিত ব্যথার কথা এড়িয়ে চলি। কিন্তু বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার কারণে সহবাসের পর পেটে ব্যথা হতে পারে অথবা পেট মোচড়াতে পারে।

অনেক নারীই এরকম ব্যথার কথা প্রকাশ করেন না বলে এটা গণনা করা কঠিন যে কতজনের সহবাসের পর পেটে ব্যথা হয় অথবা মোচড় দিয়ে ওঠে। সহবাস পরবর্তী পেটব্যথার কারণ সহবাসের সময় অনুভূত ব্যথার কারণ থেকে ভিন্ন হতে পারে, বলেন নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি’স মেডিক্যাল স্কুলের অবস্টেট্রিকস অ্যান্ড গাইনিকোলজির ক্লিনিক্যাল প্রফেসর লরেন স্ট্রেইচার। এখানে সহবাসের পর পেটে ব্যথা অনুভবের ছয়টি কারণ আলোচনা করা হলো।

মাংসপেশির সংকোচন : অর্গাজমের সময় পেলভিক ফ্লোরের মাংসপেশি (যেসব মাংশপেশি পেলভিক অর্গানকে সাপোর্ট দেয়, যেমন- জরায়ু, মূত্রথলি ও বৃহদান্ত্রের শেষাংশ) প্রথমে সংকুচিত হয় ও তারপর শিথিল হয়। মাংসপেশির এই শিথিলতা হচ্ছে অর্গাজমের সুখময় অনুভূতির অংশ, বলেন ডা. স্ট্রেইচার। কিন্তু অন্যান্য মাংসপেশির মতো এই অংশও সংকুচিত হয়ে পুরোপুরি শিথিল নাও হতে পারে, যা সহবাসের পর পেট মোচড় দেয়ার কারণ হতে পারে। জরায়ুও সংকুচিত হতে পারে, যদি এতে ঘনঘন পেনিসের স্পর্শ লাগে, বলেন মাউন্ট সিনাই হেলথ সিস্টেমের সেক্সুয়াল হেলথের পরিচালক সুসান এস. খলিল। তিনি আরো বলেন, ‘প্রায়ক্ষেত্রে সেক্স পজিশনের কারণে এমনটা হতে পারে, কিছু পজিশনে (যেমন- ডগি স্টাইল অথবা পুরুষের ওপর নারী) পেনিস স্বাভাবিকের চেয়ে গভীরে প্রবেশ করে এবং জরায়ুকে আঘাত করে। এতে অস্বস্তিকর অনুভূতি হয় ও মাংসপেশি সংকুচিত হয়ে পড়ে।’

মাসিকের সময় সহবাস : পিরিয়ডের সময় সহবাস করলে সহবাসের পর পেট মোচড় দিতে পারে। ডা. খলিল বলেন, ‘কিছু নারী মাসিক চক্রের বিভিন্ন পয়েন্টে বেশি স্পর্শকাতর হয়ে পড়ে। এসময় তাদের স্পর্শকাতর স্থানে পেনিসের অতিরিক্ত খোঁচা বা ধাক্কা বা চাপে অস্বস্তিকর অনুভূতি হতে পারে।’ আপনার পিরিয়ডের সময় সহবাস করলে এবং এরপর পেটে ব্যথা অনুভূত হলে এর সঙ্গে মাসিক চক্রের যোগসূত্র থাকার সম্ভাবনা বেশি।

অন্ত্রের সমস্যা : ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোম (আইবিএস) অথবা ক্রন’স ডিজিজের মতো আন্ত্রিক সমস্যাও সহবাসের পর পেট মোচড় বা ব্যথার কারণ হতে পারে, বলেন ডা. স্ট্রেইচার। এটা বেশি কমন, কারণ দীর্ঘস্থায়ী আন্ত্রিক সমস্যা পেলভিক ফ্লোরের মাংসপেশির কার্যক্রমকে প্রভাবিত করতে পারে, যেমন- মাংসপেশি সংকোচনের পর পুরোপুরি শিথিল না হওয়া। কিছু নারীর ক্ষেত্রে তীব্র কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সাধারণ সমস্যাও সহবাসের সময় মাংসপেশিকে সংকুচিত করতে পারে, যার ফলে পরবর্তীতে পেটে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। এক্ষেত্রে কোষ্ঠকাঠিন্যের চিকিৎসা করলে এই সমস্যার সমাধান হবে।

পেলভিক ফ্লোর ডিসফাংশন : সহবাসের সময় ও পরে ব্যথা অনুভব করেন এমন ৯০ শতাংশ নারীর এই সমস্যার জন্য দায়ী হচ্ছে পেলভিক ফ্লোর ডিসফাংশন, বলেন ডা. স্ট্রেইচার। পেলভিক ফ্লোরের মাংসপেশি সঠিকভাবে টাইট ও রিলাক্স হতে না পারার অক্ষমতা পেলভিক ফ্লোর ডিসফাংশনের অন্তর্গত। ডা. স্ট্রেইচার আরো বলেন, ‘প্রথমে অন্য কারণে ব্যথা হতে পারে, যা খুব দ্রুত পেলভিক ফ্লোর ডিসফাংশনে রূপ নিতে পারে। অস্বস্তিকর বা যন্ত্রণাময় সহবাসের ক্ষেত্রে আপনাকে যৌনক্রিয়া থেকে বিরত রাখতে ভ্যাজাইনার নিজের ও এর আশপাশের মাংসপেশি প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে টাইট হয়ে পড়ে। সময় পরিক্রমায় এসব মাংসপেশি টাইট থাকতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে এবং যতটুকু রিলাক্স হওয়া উচিত তা হয় না। এককথায়, তারা প্রতিরক্ষা মোডে থাকে। একারণে সহবাস জনিত অস্বস্তি এড়াতে এসব মাংসপেশিকে পুনরায় এই বিষয়ে প্রশিক্ষিত করতে হবে যে ভ্যাজাইনাতে পেনিসের প্রবেশে ব্যথা নয়, সুখের অনুভূতি হবে।’ অনেক কারণে সহবাসের সময় ও পরে ব্যথা হতে পারে, যা শেষপর্যন্ত পেলভিক ফ্লোর ডিসফাংশনের কারণ হতে পারে, যেমন- ভ্যাজাইনার শুষ্কতা ও মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যায় মানসিক চাপ। কি কারণে অস্বস্তি হচ্ছে তা শনাক্তকরণের ওপর ভিত্তি করে পেলভিক ফ্লোর ফিজিক্যাল থেরাপি লাগতে পারে।

ইউটেরাইন ফাইব্রোয়েড ও ওভারিয়ান সিস্ট : জরায়ুতে ক্যানসারমুক্ত টিউমার বা ইউটেরাইন ফাইব্রোয়েড ও ডিম্বাশয়ে তরলপূর্ণ থলে বা ওভারিয়ান সিস্ট থাকলেও সহবাস পরবর্তী পেট ব্যথা হতে পারে, বলেন ডা. খলিল। ফাইব্রোয়েড হচ্ছে জরায়ুর এমন নির্দোষ বৃদ্ধি যা বেশ কমন ও প্রায়শ উপসর্গবিহীন থেকে যায়। অনেক নারী জানেনই না যে তাদের ফাইব্রোয়েড রয়েছে। যদি এই নির্দোষ টিউমার উপসর্গ প্রকাশ করে, তাহলে আপনার পেলভিকে চাপ বা ব্যথা অনুভব করবেন ও কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে, উভয়েই সহবাসের পর পেট মোচড়ানোর কারণ হতে পারে। ওভারিয়ান সিস্ট হচ্ছে ডিম্বাশয়ের পৃষ্ঠে বিকশিত তরলভর্তি থলে। ফাইব্রোয়েডের মতো সিস্টও বেশ কমন এবং প্রায়শ উপসর্গ বা সমস্যা সৃষ্টি করে না, কিন্তু বড় সিস্ট পেলভিকে ব্যথা ও পেটে ভারী অনুভূতি দিতে পারে।

এন্ডোমেট্রিয়োসিস : প্রায়সময় সহবাসের পর ব্যথা হলে এটি মারাত্মক মেডিক্যাল সমস্যার লক্ষণ হতে পারে, যাকে অবহেলা করা যাবে না। এন্ডোমেট্রিয়োসিস হচ্ছে এমন একটি সমস্যা, যেখানে জরায়ুর ভেতরের অনুরূপ টিস্যু পেলভিকের অন্যান্য স্থানে বিকশিত হয়, বলেন ডা. খলিল। তিনি আরো জানান, ‘কখনো কখনো এটি পেলভিস বা ডিম্বাশয়ের স্নায়ু কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করে এবং নড়াচড়া করলে ব্যথা লাগে। কিছু নারীর ক্ষেত্রে এ ব্যথা ভোঁতা প্রকৃতির, আবার কারো কারো তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়। পেলভিক এরিয়ার যেকোনো স্থানে এন্ডোমেট্রিয়োসিস হতে পারে, কিন্তু এটি প্রধানত তলপেটে হয়ে থাকে।’ এমনকি কিছু নারীর কোলন বা মূত্রথলিতেও এই ধরনের টিস্যু বিকশিত হতে পারে। এছাড়া অ্যাডিনোমায়োসিস (যেখানে জরায়ুর মাস্কুলার ওয়াল বা পেশিপ্রাচীরে এন্ডোমেট্রিয়াল টিস্যুর বিকাশ হয়) ও কিছু পেলভিক ইনফেকশনের কারণেও সহবাস পরবর্তী পেট ব্যথা হতে পারে, বলেন ডা. স্ট্রেইচার।

পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে