উত্তপ্ত ইরান-যুক্তরাষ্ট্র, ‘প্রভাব’ পড়ল বাংলাদেশেও!

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৫, ২০২০; সময়: ৭:২০ অপরাহ্ণ |
উত্তপ্ত ইরান-যুক্তরাষ্ট্র, ‘প্রভাব’ পড়ল বাংলাদেশেও!

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : মার্কিন হামলায় ইরানের বিপ্লবী গার্ডসের কমান্ডার কাসেম সোলাইমানি নিহত হওয়ার পর থেকে ইরান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মাঝে উত্তেজনা বিরাজ করছে। ইরান ‘প্রতিশোধের’ কথা বললেও যুক্তরাষ্ট্র পাল্টা আক্রমণের কথা বলছে।

এছাড়া এরই মধ্যে ইরানের ৫২ স্থানে কঠোর হামলার হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, ইরান যদি আমেরিকানদের ওপর বা যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সম্পদ লক্ষ্য করে হামলা চালায় তবে তেহরানের গুরত্বপূর্ণ ৫২ স্থানে ভয়াবহ হামলা চালানো হবে।

অপরদিকে শুক্রবার সকালে নিজের টুইটারে দেয়া এক শোকবার্তায় এই হামলার বদলা নেয়ার অঙ্গীকার করে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা খামেনি বলেন, ‘যেসব অপরাধী তাদের নোংরা হাত দিয়ে গতরাতে লে. জেনারেল সোলেইমানির রক্ত ঝরিয়েছে তাদের জন্য ভয়ঙ্কর প্রতিশোধ অপেক্ষা করছে।’

এমতাবস্থায় এ উত্তেজনা ‘প্রভাব’ পড়ল বাংলাদেশে। দেশে স্বর্ণ কিনতে হলে আজ থেকে গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। বাজারে সব ধরণের স্বর্ণেই ভরি প্রতি এক হাজার টাকার বেশি বেড়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতি।

বিবিসি বাংলার খবরে বলা হয়েছে বর্ধিত দামে রোববার থেকে ২২ ক্যারেট স্বর্ণের দাম বেড়ে ৬০ হাজার টাকা ভরি হয়েছে। ২০১৩ সালের পর প্রথমবার স্বর্ণের দাম ৬০ হাজার ছাড়ালো। এর আগে ২০০৩ সালে স্বর্ণের দাম প্রতি ভরি ৭০ হাজার ছাড়িয়েছিল।

বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতির প্রেসিডেন্ট গঙ্গাচরন মালাকার বলেন, ‘তেলের দাম বেড়েছে, ডলার ফল করেছে। আর সেই সাথে স্বর্ণের দামও বেড়েছে।’

স্বর্ণের দাম বেড়েছে কেন?

মালাকার বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের খারাপ অবস্থা এবং চীনের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নবায়ন না হওয়ার কারণে এমনিতেই স্বর্ণের বাজার চড়া ছিল।

তবে নতুন করে বাড়ার পেছনে মার্কিন হামলায় ইরানি জেনারেল কাসেম সোলেয়মানি নিহত হবার কারণে মধ্যপ্রাচ্যে যে অশান্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে সেটি দায়ী বলেও জানান তিনি।

তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে যদি এই অবস্থা আরো খারাপ হয় তাহলে গোল্ডের দাম আরো বেড়ে যেতে পারে।’

মধ্যপ্রাচ্যে রাজনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি হলে স্বর্ণের দাম কমবে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, ডলারের দাম, তেলের দাম, শেয়ার বাজারের উঠানামাসহ নানা কারণে স্বর্ণের দাম বাড়ে। দাম বাড়বে নাকি কমবে, সেটা কেউ বলতে পারবে না।

স্বর্ণের দাম বাড়লে কী হয়?

সাধারণত বাজারে যে কোনো পণ্যের দাম নির্ধারিত হয় সেই পণ্যের চাহিদা এবং যোগানের ভিত্তিতে। তবে কিছু পণ্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে বাড়লে তার প্রভাব দেশের বাজারে পরে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। আর স্বর্ণ এমনি একটি পণ্য।

এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে যেহেতু স্বর্ণের দাম ডলারের বিপরীতে হয়, তাই ডলারের দাম বাড়লে স্বর্ণের দামও বাড়ে।

তবে স্বর্ণের দাম বাড়লে তা একটি দেশের অর্থনীতিতে কী ধরণের প্রভাব ফেলে এমন প্রশ্নে অর্থনীতিবিদ ফাহমিদা খাতুন বলেন, নতুন করে প্রভাব সৃষ্টি করার চেয়ে, স্বর্ণের দাম দিয়ে বোঝা যায় যে সেই অর্থনীতির স্বাস্থ্যটা আসলে কেমন।

তার মতে, স্বর্ণের অতিরিক্ত দাম মূলত দুর্বল অর্থনীতিকে প্রতিফলিত করে। অর্থাৎ সেই অর্থনীতিতে টাকার আধিক্য থাকলেও তার ভিত্তি ততটা মজবুত হয় না।

তিনি বলেন, যখন একটি অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়ে তখন মানুষ অন্য বিনিয়োগের তুলনায় যে বিনিয়োগটা নিরাপদ সেখানে অর্থ রাখতে চায়। এজন্য বেছে নেয় স্বর্ণকে। বাংলাদেশে মানুষ যেভাবেই হোক টাকা অর্জন করেছে আর সেটি তারা নিরাপদ স্থানে বিনিয়োগ করতে চায়।

আর এ কারণে উৎপাদনশীল খাতে ব্যক্তিগত বিনিয়োগ হয় না বলেও মনে করেন তিনি।

যার উদাহরণ হিসেবে অর্থনীতিবিদ ফাহমিদা খাতুন বলেন, এ কারণেই দেশের অর্থনীতিতে ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগ নেই বললেই চলে।

এছাড়া ব্যাংকেও তারল্য সংকট দেখা দিচ্ছে। মানুষ শাসন ব্যবস্থার উপর আস্থা হারাচ্ছে এবং ব্যাংক থেকে যে পরিমাণ রিটার্ন পাওয়ার কথা সেটাও মানুষ পাচ্ছে না বলে উল্লেখ করেন তিনি।

তিনি বলেন, আর এ জন্য একটা স্থিতিশীল জায়গায় মানুষ বিনিয়োগ করতে চাইছে। ব্যক্তিগত বিনিয়োগে আগ্রহ কমে গেলে অর্থনীতিতে উৎপাদন ব্যবস্থা ব্যাহত হয়। আর একারণে সৃষ্টি হয় বেকারত্ব, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিসহ নানা সংকটের।

পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে