নওগাঁয় বিসিজি ও হাম টিকার বাইরে ১০ হাজার শিশু
নিজস্ব প্রতিবেদক, মান্দা : নওগাঁয় বিসিজি (যক্ষ্মা প্রতিরোধকারী) ও হামের টিকা’র চরম সংকট চলছে। গত দুই মাস ধরে এ দুটি টিকা’র সরবরাহ নেই। কবে নাগাদ এর সরবরাহ স্বাভাবিক হবে তাও বলতে পারছে না সংশ্লিষ্ট দপ্তর। এতে করে জেলায় সদ্য জন্ম নেয়া অন্তত ১০ হাজার শিশুকে এ দুটি টিকা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এনিয়ে চরম দুশ্চিতায় পড়েছেন দম্পতিরা।
নওগাঁর মান্দা উপজেলার বনকুড়া গ্রামের আলতাফ-রোজি আক্তার দম্পতির প্রথম সন্তান রেজওয়ান রোজদীদ আদন। বয়স ২৮দিন। বিসিজি টিকা দেয়ার জন্য চকবালু গ্রামের গফুর মন্ডলের বাড়ির টিকাদান কেন্দ্রে কয়েকদিন ধরে ধর্ণা দিয়েও ছেলেকে টিকা দিতে পারেন নি।
গৃহবধূ রেজি আক্তার বলেন, টিকার সরবরাহ নেই বলে বারবার কেন্দ্র থেকে তাকে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। অবশেষে গতকাল মঙ্গলবার ছেলেকে নিয়ে মান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়েছিলেন টিকা দেয়ার জন্য। সেখানেও একই কথা বলে তাকে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, জন্মের পর থেকে বিভিন্ন পর্যায়ে শিশুদের ৬টি রোগের টিকা দেয়া হয়ে থাকে। এগুলো হচ্ছে ডিপথেরিয়া, হুপিংকাশি, ধনুষ্টংকার, পোলিও, হাম ও যক্ষ্মা। এদের মধ্যে যক্ষ্মা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি টিকা। এ রোগের ফলে প্রাপ্ত বয়স্ক ও শিশু উভয়ই বর্ণনাতীত কষ্ট, অক্ষমতাসহ বিভিন্ন কাজে অসমর্থ হয়ে পড়ে।
নওগাঁ জেলা ইপিআই কার্যালয় সুত্রে জানা গেছে, গত দুই মাস ধরে বিসিজি ও হামের টিকা সরবরাহ নেই। এ দুই মাসে জেলায় অন্তত ১০ হাজার শিশু জন্মগ্রহণ করেছে। টিকার সরবরাহ না থাকায় শিশুদের এ দুটি টিকার আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে না। তবে জন্মের পর থেকে দুইবছর পর্যন্ত এ টিকা দেয়া যাবে।
সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, বিসিজি শিশুদের যক্ষ্মা প্রতিরোধের একটি টিকা। দারিদ্রতা, অপুষ্টি, নিম্নমানের জীবনযাপন এ রোগ ছড়ানোর প্রধান কারণ। বর্তমানে বিভিন্নভাবে জাতীয় পর্যায়ে বিসিজি টিকা দেয়া হচ্ছে যক্ষ্মা রোগ প্রতিরোধের জন্য। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মাধ্যমে মূলত ১৯৮৫ সাল থেকে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির অধীনে ব্যাপকভাবে এ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
মান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মুহাম্মদ মশিউর রহমান জানান, ‘মান্দা উপজেলাকে শতভাগ টিকাদান কার্যক্রমের আওতায় আনা হয়েছে। ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে ইপিআই মডেল উপজেলা ঘোষণার যাবতীয় কাজ। এ অবস্থায় বিসিজি টিকার সরবরাহ না থাকায় একটু বেকাদায় পড়তে হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিসিজি শিশুদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি টিকা। বিসিজি ও হাম ছাড়া এ উপজেলায় শিশুদের অন্যান্য সব টিকা দেয়া হচ্ছে। টিকার বইয়ে শুধু বিসিজি ও হামের ঘর ফাঁকা থাকছে। সরবরাহ স্বাভাবিক হলেই ওইসকল শিশুদের দ্রুততার সঙ্গে এ দুটি টিকার আওতায় আনা হবে।’
জেলা সিভিল সার্জন ডা. মুমিনুল হক বলেন, ‘বিসিজি টিকা বাইরের দেশ থেকে আমদানি করা হয়ে থাকে। এরপর ইপিআই ভবন থেকে সরবরাহ হয় সারা দেশে। ইপিআই ভবনে দফায় দফায় চাহিদা দেয়া হলেও সরবরাহ মিলছে না। সরবরাহ পাওয়া মাত্রই জেলার সকল উপজেলায় সেগুলো সরবরাহ করা হবে।’