স্মৃতিশক্তি নষ্ট করে সিগারেট

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৯, ২০২০; সময়: ১:৪৫ অপরাহ্ণ |
স্মৃতিশক্তি নষ্ট করে সিগারেট

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : তামাক এমন এক জিনিস যার একবিন্দু গুণ নেই। যা আছে সবই অত্যন্ত ক্ষতিকর আর বিষাক্ত। তা পাতা খাওয়া হোক বা টেনে ধোঁয়া উড়ানো হোক। এর সবটাই বিষ! তামাকে যে আসক্ত তার বিপদ তো হয়ই, এর সঙ্গে সঙ্গে আশপাশের অন্যরাও এর বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হন। সিগারেটের ধোঁয়ার প্রভাবে অন্যান্য অসুখবিসুখের সঙ্গে সঙ্গে স্মৃতিশক্তি কমে যেতে শুরু করে।

অনেকে বলে থাকেন, ‘সিদ্ধি খেলে বুদ্ধি বাড়ে’। আসলে তা কিন্তু নয়। সিগারেটের ধোঁয়ার রাসায়নিকের প্রভাবে মস্তিষ্কের বাইরের দিকের স্তর কর্টেক্স (এরই আরেক নাম গ্রে ম্যাটার) ক্রমশ ক্ষয়ে যেতে শুরু করে। এডিনবার্গ ইউনিভার্সিটি ও ম্যাকগিল ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক প্রমাণ পেয়েছেন, অধূমপায়ীদের তুলনায় ধূমাপায়ীদের গ্রে ম্যাটারের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য ভাবে কম। আর এই মস্তিষ্কের বাইরের স্তর মস্তিষ্কের মোট পরিমাণের দুই তৃতীয়াংশ। যা সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

গবেষক দলের নেতৃত্বে থাকা প্রফেসর ইয়ান ডিয়ারি বলেছেন, কর্টেক্স বা গ্রে ম্যাটার ব্রেনের সব থেকে উন্নত অংশ। এই অংশই আমাদের বুদ্ধিবৃত্তি, ভাবনাচিন্তার শক্তি, কথা বলা ও বোঝা, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাসহ বিভিন্ন মানসিক বিকাশের নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র। তাই এই অংশের ক্ষয় হলে সামগ্রিকভাবে বুদ্ধিশুদ্ধি কমে যায়। আর এই কাজটিই করে সিগারেট। একই সঙ্গে গন্ধবোধ চলে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ায় সিগারেট।

তিনি আরও বলেছেন, এমনিতেই বেশি বয়সে মস্তিষ্কের গ্রে সেলের কার্যক্ষমতা অনেকটাই কমে যায়। এর মধ্যে যদি সিগারেটের নেশা থাকে তবে তাদের অবস্থা আরও কাহিল হয়ে পড়ে।

সিগারেট আর যেসব বিপদ ডেকে আনে….

* ধূমপায়ী পুরুষদের স্পার্ম কাউন্ট কমে যায়। স্পার্মের ডিফর্মিটির ঝুঁকি বাড়ে। একই সঙ্গে পুরুষত্বহীনতা ডেকে আনতে পারে। পুরুষের বন্ধ্যাত্বে অন্যতম কারণ ধূমপান।

* মেয়েদের ঊর্বরতা কমায় ধূমপান, মেন্সট্রুয়াল সাইকল এলোমেলো হয়ে যেতে পারে। মেনোপজ এগিয়ে আসে। সার্ভিক্স-সহ অন্যান্য ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে।

* শ্বাসনালী আর ফুসফুসের সব থেকে ক্ষতি করে সিগারেটের ধোঁয়া। শ্বাসনালীর উপরের আবরণী ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সর্দি, হাঁচি, কাশির পাশাপাশি বারংবার শ্বাসনালীর সংক্রমণ হয়। ফুসফুসের কাজ করার ক্ষমতা অনেকটাই কমে যায়।

* কার্বন মনোক্সাইড, হাইড্রোজেন সায়ানাইড, আলকাতরা, আর্সেনিক, ক্যাডমিয়াম, লেড সমেত অজস্র ধাতব এবং বিভিন্ন তেজষ্ক্রিয় পদার্থ থাকে সিগারেট বিড়ির ধোঁয়ায়। এদের মধ্যে ৭০টি রাসায়ানিকই ক্যান্সার উদ্দীপক।

* তামাক আর ক্যান্সার প্রায় সমার্থক। নাক, কান, গলা, মুখ ও জিভের ক্যান্সারের সঙ্গে সঙ্গে গলা, স্বরযন্ত্র, ফুসফুস ইত্যাদি বিভিন্ন অঙ্গের ক্যান্সারের অন্যতম কারণ চিবানো ও ধোঁয়া ওড়ানোর তামাক।

* গন্ধ বোধ নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।

* ব্লাড প্রেসার ও হার্ট রেট বাড়িয়ে থাকে সিগারেট।

* রক্তনালীর কন্সট্রিকশন বেড়ে যাওয়ায় শরীরের তাপমাত্রা কমে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।

* রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যায় একই সঙ্গে রক্ত স্টিকি হয়ে যাওয়ায় রক্তের জমাট বাঁধার প্রবণতা বাড়ে। এর নিট ফল হার্ট ও ব্রেন অ্যাটাক।

* ধূমপান নিউমোনিয়া ও ইনফ্লুয়েঞ্জার ঝুঁকিও বাড়িয়ে দেয়।

* ত্বকে বয়সের ছাপ পড়ে নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই।

* চোখের নানা সমস্যা-সহ অন্ধত্বের আশঙ্কা বাড়ে।

* মাড়ি ও দাঁতের অসুখের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।

এগুলো জানার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া একান্তই আপনার নিজস্ব ব্যাপার। সিগারেট পানে নিজে ও অন্যকে বিপদে ফেলবেন, নাকি সিগারেট ছেড়ে নিজে ও আপনজনদের বিপদমুক্ত করবেন। ভেবে দেখুন।

পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে