নাটোরে জেলা জজের আচরনের প্রতিবাদে আদালত বর্জন আইজীবিদের

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৩, ২০২০; সময়: ৬:১৩ অপরাহ্ণ |
নাটোরে জেলা জজের আচরনের প্রতিবাদে আদালত বর্জন আইজীবিদের

নিজস্ব প্রতিবেদক, নাটোর : নাটোরে জেলা জজ আদালত বর্জন করেছে আইনজীবিরা। তাদের অভিযোগ, এজলাসে বসে জেলা ও দায়রা জজ আবদুর রহমান সরদার আইনজীবী সাইদুর রহমান সৈকতের সাথে অশোভন আচরণ করেছেন। এসময় ওই আইনজীবীকে বেয়াদব বলেছেন জেলা ও দায়রা জজ।

তাৎক্ষণিকভাবে এ ঘটনায় এজলাস কক্ষে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে এজলাস ত্যাগ করেন জেলা ও দায়রা জজ। আর ঘটনার প্রতিবাদে মধ্যাহ্ন বিরতির পর আদালত বর্জন করেন আইনজীবীরা। সোমবার দুপুরে মধ্যাহ্ন বিরতির আগে এই ঘটনা ঘটে।

জেলা আইনজীবি সমিতির সাধারন সম্পাদক প্রসাদ কুমার তালুকদার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন,একজন আইনজীবীর সাথে জেলা জজ অশোভন আচরনের প্রতিবাদে সোমবার তারা আধবেলা এই বর্জন কর্মসুচি পালন করেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, সোমবার দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ আব্দুর রহমান সরদার তার আদালতে একটি মামলায় জামিন শুনানীকালে আইনজীবী সাইদুর রহমান সৈকতের সাথে অশোভন আচরণ করেন। তিনি একপর্যায়ে ওই আইনজীবীকে ‘বেয়াদব’ বলেন। এতে উপস্থিত আইনজীবীরা ক্ষুব্ধ হন।

এ সময় জেলা জজ দুপুর ২টা পর্যন্ত আদালত মূলতবি করে এজলাস থেকে নেমে যান। সঙ্গে সঙ্গে আইনজীবীরাও এজলাস ছেড়ে সমিতির কার্যালয়ে আসেন। পরে সমিতির সভাপতির কক্ষে কার্যকরি পরিষদ জরুরী সভায় মিলিত হন। সভা শেষে সোমবার অর্ধদিবস আদালত বর্জন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

তবে মঙ্গলবার আবার সভা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তাই আইনজীবীরা আর ওই আদালতের বিচার কার্য্যে অংশ নেননি। তবে জেলা জজ দুপুর ২টায় একাই এজলাসে বসেন এবং বিচার কাজ পরিচালনা করেন। তিনি বলেন, ঘটনাটি দুঃখজনক ও অনভিপ্রেত। বিচারক ও আইনজীবী উভয় পক্ষকে সংযত করতেই আমরা এজলাস ত্যাগ করেছি।

আইনজীবী সাইদুর রহমান সৈকত বলেন, সিংড়া থানার একটি অস্ত্র মামলায় এক আসামীর জামিন চাইলে গত ৮ই জানুয়ারী জেলা ও দায়রা জজ জামিন নাকচ করেন। গতকাল ১২ই জানুয়ারী পুনরায় জামিন আবেদন করলে সোমবার শুনানীর কথা বলেন তিনি। জেলা জজ সোমবার শুনানী শেষে কোন আদেশ না দিয়ে রেখে দিয়ে অন্য মামলার কাজ শুরু করেন। ওই মামলা সহ কয়েকটি মামলার জামিন শুনানী করেন এবং আবেদন গ্রহণ করে কয়েকজনকে জামিন দেন।

এসময় তিনি তার আসামীকে জামিন প্রদানের জন্য মাননীয় জেলা জজের দৃষ্টি আকর্ষন করেন। এসময় জেলা জজ তার সাথে অশোভন আচরন করেন এবং বেয়াদব বলেন। আইনজীবি বলেন, আমরা কোর্ট অফিসার। জজ সাহেব কোর্টের প্রিসাইডিং অফিসার। তাই তাঁকে আদালতের ভাষা ব্যবহার করা উচিত। তিনি তা না করে প্রকাশ্য আদালতে আমাকে গালিগালাজ করেছেন,বেয়াদব বলেছেন। আমি মর্মাহত।

আদালতের একটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান,আইনজীবী সাইদুর রহমান একটি মামলার জামিন শুনানী করলে আদালত তা না মঞ্জুর করেন। পরের মামলায় অন্য একজন আইনজীবীর এক আসামিকে আদালত জামিন মঞ্জুর করেন। তখন আইনজীবী সাইদুর রহমান দাঁড়িয়ে তাঁকে জামিন না দেওয়ায় ক্ষোভ করেন। এ নিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরে আদালত কিছু সময়ের জন্য মূলতবি হয়।

এ ঘটনায় আদালত প্রশাসনের বক্তব্য জানতে নাজির সুনীল ঘোষের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।

পরে সোমবার বিকেলে জেলা ও দায়রা জজ আবদুর রহমান সরকার নিজ কক্ষে সমকালকে বলেন, শুনানি শেষে আদেশ পরে দেয়া হবে মর্মে জানিয়ে আমি আরও বেশ কয়েকটি শুনানির কাজে শুরু করি। এসময় ওই আইনজীবী ক্ষিপ্ত হয়ে পূর্বোক্ত মাদক মামলার জামিনের দৃষ্টান্ত টেনে অস্ত্র মামলায় কেন জামিন দেয়া হলো না মর্মে জানতে চান। দুটি মামলার জামিনের প্রেক্ষাপট এক না হওয়ার বিষয়টি তাকে বোঝানো হলেও তিনি এজলাসে হট্টোগোল করেন। এসময় অসুস্থতা অনুভব করায় আমি আদালত মুলতবি ঘোষণা করি। মধ্যাহ্নবিরতির পর সুস্থ হলে এজলাসে গেলেও কোন আইনজীবী আসেননি।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে