কুবি শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ
পদ্মাটাইমস ডেস্ক : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও প্রমাণ লোপাটের লিখিত অভিযোগ করেছেন সান্ধ্য কোর্সের এক নারী শিক্ষার্থী। অভিযুক্ত শিক্ষক সহযোগী অধ্যাপক ড. আলী রেজওয়ান তালুকদার বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগে বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত আছেন।
তবে অভিযোগের ব্যাপারটিকে মিথ্যা, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং ওই ছাত্রীকে মানসিক অপ্রকৃতস্থ বলে দাবি করেছেন অভিযুক্ত শিক্ষক।
জানা যায়, গত ১৫ জানুয়ারি (বুধবার) অভিযোগকারী শিক্ষার্থী ইংরেজী বিভাগের অধীনে সন্ধ্যাকালীন স্নাতকোত্তর (ইএমএ) কোর্সের প্রোগ্রাম ডিরেক্টর এবং ওই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার এবং যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ সেলের নিকট এই অভিযোগ জমা দেন।
অভিযোগপত্র অনুযায়ী, গত ১৩ জানুয়ারি ওই প্রথম ট্রাইমিস্টারের ‘ফ্রম সেন্টেন্স টু প্যারাগ্রাফ, কোড- ০০১’ এর পরিক্ষা ছিল। পরীক্ষা শুরুর আগে তিনি তাঁর মোবাইল ফোন সামনে রেখে নিজের আসনে এসে বসে পরীক্ষা দেন। পরীক্ষাটি বিকাল সাড়ে ৫ টা থেকে সাড়ে ৮ টা পর্যন্ত চলেছিল। পরীক্ষা শেষে হল থেকে বের হয়ে তিনি দেখতে পান তার মোবাইলের সিম ও মেমোরি কার্ড অদল-বদল করা হয়েছে। আর এই অদল-বদলের অভিযোগ তিনি এনেছেন ওই বিভাগের প্রধানের বিরুদ্ধে।
অভিযোগকারী অভিযোগপত্রে লিখেছেন, তিনি এই ঘটনা পর সাথে সাথে বিভাগীয় প্রধান আলী রেজওয়ান তালুকদারকে ফোন করেন এবং জানতে চান এটি কি করে হলো। শিক্ষককে ফোন করার কারণ হিসেবে অভিযোগকারী উল্লেখ করেন, কোর্সের ক্লাস শুরুর সময় অভিযুক্ত শিক্ষক তাঁকে সিআর বানিয়েছিলেন এবং তাঁর ফোন নম্বর নিয়েছিলেন। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যোগাযোগও স্থাপন করেছিলেন। ওই শিক্ষক শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন সময়ে নানা কারণে তাঁকে উনার রুমে ডাকতেন, নম্বর বাড়িয়ে দেয়ার প্রস্তাবে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন এবং কুমিল্লা শহরে নিজের বাসায় যাওয়ারও প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এসব বিষয়ের সব প্রমাণ তাঁর ওই মোবাইলের খোয়া যাওয়া মেমোরিতে ছিলো।
ওই শিক্ষার্থী অভিযোগপত্রে লিখেন, ‘তিনি আমাকে সরাসরি অনৈতিক প্রস্তাব করেছিলেন এবং আশ্বস্ত করেছিলেন আমার ইএমএ কোর্স নিয়ে কোনো চিন্তা করতে হবেনা। আমি তাঁর প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তিনি ভয়ে কিংবা প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে এই কাজটি করেছেন। উল্লেখ্য, তিনি পরীক্ষা চলাকালীন ৩০/৩৫ মিনিটের জন্য বাইরে ছিলেন। আমার মোবাইলটি পুরো নষ্ট করে ফেলা হয়েছে যাতে করে এতে আর কোনো তথ্য না পাওয়া যায়। ’
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে ওই ছাত্রী জানান, ‘আমি আমার অভিযোগপত্রে যা লিখেছি এর বাইরে বেশিকিছু বলার নেই। আমার কোর্সের পড়াশোনা চালানোর সুবিধার্থে প্রথম প্রথম স্যারের কথায় কমবেশি সাড়া দিয়েছি। কিন্তু পরবর্তীতে যখন তিনি আমাকে কু-প্রস্তাব দেওয়া শুরু করেন তখন থেকে আমি যোগাযোগ বন্ধ করে দিই। আমার মোবাইলে যেসব প্রমাণ ছিলো সেগুলো নষ্ট করার জন্য তিনিই আমার মোবাইলের মেমোরি সরিয়েছেন। সেখানে আমার ব্যক্তিগত-পারিবারিক ছবিও ছিলো। সেজন্য আমি এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’
এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক আলী রেজওয়ান তালুকদার এর কক্ষে গেলে তিনি অভিযোগকারী শিক্ষার্থীকে মানসিকভাবে অপ্রকৃতিস্থ দাবি করে বলেন, ‘ওই শিক্ষার্থী বিভিন্ন সময় আমার কাছ থেকে নানান ব্যক্তিগত পর্যায়ের অনৈতিক সুবিধা চেয়ে এসেছে। আমার তাঁকে স্বাভাবিক মনে হয়নি। আমি তার এসব ব্যাপারে কখনো সাড়া দেইনি, প্রশ্রয়ও দেইনি। তাই সে তাঁর উদ্দেশ্য পূরণ না করতে পেরে আমার নামে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এসব ছড়াচ্ছে। আমি এই ঘটনায় অত্যন্ত বিব্রত।’
ইএমএ প্রোগ্রাম পরিচালক ড. হাবিবুর রহমান জানান, ‘ঐ ছাত্রী আমার কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। সেদিন পরীক্ষার হলে আমিও পরিদর্শক হিসেবে ছিলাম। পরীক্ষার হল থেকে তার মোবাইলের এমনটা হওয়ার কথা না। তবে আমরা শিক্ষকরা এই বিষয়টি নিয়ে বসে করণীয় ঠিক করবো।’
অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. মো: আবু তাহের বলেন, ‘আমরা অভিযোগ পেয়ে বিষয়টি আমলে নিয়েছি। উপাচার্য মহোদয় এটি ফাইলে অন্তর্ভুক্ত করতে নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করবো। তদন্ত কমিটি বিষয়টি গুরুত্বের সাথে খতিয়ে দেখবে। কোনো শিক্ষকের যদি এমন নৈতিক স্খলন ঘটে থাকে তবে অবশ্যই তদন্তসাপেক্ষে প্রক্রিয়াগতভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’