রাজশাহী না খুলনা
পদ্মাটাইমস ডেস্ক : প্রথমবারের মত শিরোপা জিততে আজ শুক্রবার বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) টি-২০ ক্রিকেট টুর্নামেন্টের ফাইনালে মুখোমুখি হচ্ছে রাজশাহী রয়্যালস ও খুলনা টাইগার্স। এর আগের ছয় আসরে কখনো শিরোপা জিতেনি খুলনা বা রাজশাহী। তাই এবারের বিশেষ ‘বঙ্গবন্ধু’ বিপিএলে নতুন চ্যাম্পিয়নদের দেখা যাবে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বিপিএলের সপ্তম আসরটি আয়োজন করা হয়। গেল ১১ ডিসেম্বর শুরু হয়েছিলো বিশেষ ‘বঙ্গবন্ধু’ বিপিএল। শুক্রবার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সন্ধ্যা ৭টায় শুরু হওয়া ফাইনাল দিয়ে পর্দা নামছে বিশেষ ‘বঙ্গবন্ধু’ বিপিএলের।
গেল ছয় আসরের মধ্যে সবচেয়ে বেশী তিনবার শিরোপা জিতে ঢাকা। ঢাকা গ্লাডিয়েটর্স নামে দু’বার ও একবার ঢাকা ডায়নামাইটস নামে। দু’বার শিরোপার স্বাদ নেয় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ও একবার শিরোপা জিতে রংপুর রাইডার্স। কিন্তু সপ্তম আসরে ঢাকা-কুমিল্লা ও রংপুরের কেউ শিরোপা জয়ের সম্ভাবনা নেই।
কারণ বিশেষ ‘বঙ্গবন্ধু’ বিপিএলের ফাইনাল নিশ্চিত করে ফেলেছে খুলনা ও রাজশাহী। তাই বিশেষ ‘বঙ্গবন্ধু’ বিপিএলে নতুন দলের হাতে উঠবে শিরোাপা। খুলনা প্রথমবারের মত হলেও, রাজশাহীর দ্বিতীয়বারের মত ফাইনালে উঠলো। ২০১৬-১৭ মৌসুমে রাজশাহী কিংস নামে ফাইনালে উঠেছিলো দলটি।
এবারের আসরে লিগ পর্বে ধারাবাহিকভাবে দুর্দান্ত পারফরমেন্স করেছে খুলনা ও রাজশাহী। ১২ ম্যাচে ৮ জয় ও ৪ হারে সমান ১৬ পয়েন্ট পায় দু’দল। তবে রান রেটে এগিয়ে টেবিলের শীর্ষ স্থান নিশ্চিত হয় খুলনার। দ্বিতীয় স্থানে থাকে রাজশাহী। ফলে প্রথম কোয়ালিফাইয়ারে দেখা হয় দু’দলের। সেখানে ২৭ রানে জয় পায় খুলনা। ঐ ম্যাচ জিতে সরাসরি ফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করে খুলনা।
খুলনার কাছে হেরে দ্বিতীয় কোয়ালিফাইয়ারের লড়াইয়ে নামে রাজশাহী। সেখানে রাজশাহীর প্রতিপক্ষ ছিলো চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। রাজশাহীর অধিনায়ক ওয়েস্ট ইন্ডিজের আন্দ্রে রাসেলের ২২ বলে অপরাজিত ৫৪ রানের কল্যাণে চট্টগ্রামকে ২ উইকেটে হারায় দলটি। ডাবল লিগ পর্বে দু’বার মুখোমুখি হয়েছিলো খুলনা ও রাজশাহী। প্রথম দেখায় ৫ উইকেটে জয় পায় খুলনা। দ্বিতীয় পর্বে প্রতিশোধ নেয় রাজশাহী। ৭ উইকেটে খুলনাকে হারায় তারা।
ব্যাট-বল হাতে দুর্দান্ত পারফরমেন্স করে চলেছে রাজশাহীর খেলোয়াড়রাও। ব্যাটিং-এ সেরা ফর্মে রয়েছেন পাকিস্তানের শোয়েব মালিক। সর্বোচ্চ রানের দৌঁড়ে তৃতীয়স্থানে রয়েছেন তিনি। ১৪ ইনিংসে ৩টি হাফ-সেঞ্চুরিতে ৪৪৬ রান করেছেন মালিক। এমন পারফরমেন্সের সুবাদে বাংলাদেশের বিপক্ষে আসন্ন টি-২০ সিরিজের দলে আবারো ডাক পেলেন তিনি।
গেল বছরের ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তানের জার্সিতে সর্বশেষ টি-২০ ম্যাচ খেলেছিলেন মালিক। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ঐ লড়াইয়ের পর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তিনটি সিরিজ খেলে পাকিস্তান। ঐ তিন সিরিজের দলে ছিলেন না মালিক। বল হাতে ১২টি উইকেট নিয়ে রাজশাহীর পেস অ্যাটাকে বড় ভরসা পাকিস্তানের মোহাম্মদ ইরফান। তাই দুই পাকিস্তানের সাথে রাসেলের পারফরমেন্সে শিরোপার অন্যতম দাবীদার রাজশাহী।
রাসেল বলেন, ‘এর আগে আমরা আমিরের বিপক্ষে খেলেছি, জানি তিনি কি করতে পারেন। তাই এটি আমাদের নজরে রয়েছে। এছাড়া বোলিংএ আমাদের ভালো করতে হবে, আগের ম্যাচে আমরা ভালো করতে পারিনি।’
এই প্রথমবারের মত ফাইনাল খেলার স্বাদ নিবেন বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। শুধুমাত্র প্রথমবারের মত ফাইনালই নয়, বিপিএল ইতিহাসে এই প্রথমবার দলের সবগুলো ম্যাচে নেতৃত্ব দিতে যাচ্ছেন তিনি। আগের আসরগুলোতে অধিনায়ক হিসেবে টুর্নামেন্ট শুরু করলেও, কোন কারণে মাঝপথে ও শেষের দিকে অধিনায়কের দায়িত্ব থেকে সড়ে দাঁড়ান মুশফিক।
খুলনার টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন বলেন, ‘বিপিএলের টুর্নামেন্টে এটিই তার প্রথম ফাইনাল। মাঠের ভেতর ও বাইরে দারুণভাবে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন মুশফিক। সে জানে, ট্রফি জয়ের এটিই তার সেরা সুযোগ এবং শিরোপা জয়ে মরিয়া হয়ে আছেন।’
চলতি আসরে ব্যাটসম্যানদের তালিকায় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক মুশফিক। ১৩ ম্যাচে চারটি হাফ-সেঞ্চুরিতে ৪৭০ রান করছেন তিনি। এরমধ্যে দু’টি ৯০ রানের ইনিংসও রয়েছে তার। মুশফিকের সতীর্থ দক্ষিণ আফ্রিকার রাইলি রুশো রান সংগ্রহের তালিকায় আছেন দ্বিতীয় স্থানে। তার রান ৪৫৮।
পুরো টুর্নামেন্টে নিষ্প্রভ থাকলেও সর্বশেষ দু’ম্যাচে ব্যাট হাতে জ্বলে উঠেছেন খুলনার ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্ত। দু’ইনিংসে যথাক্রমে ১১৫ ও ৭৮ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন তিনি। এবারের আসরে প্রথম ও এখন পর্যন্ত একমাত্র বাংলাদেশী হিসেবে সেঞ্চুরিয়ান হিসেবে নাম উঠেছে শান্তর। এছাড়া ওপেনিং-এ শান্তর সঙ্গী মেহেদি হাসান মিরাজও ব্যাট হাতে দলের জন্য সেরাটাই দিচ্ছেন। খুলনাকে দুর্দান্ত শুরু এনে দিতে পারদর্শীতা দেখাচ্ছেন শান্ত ও মিরাজ।
বোলিং বিভাগেও খুলনার বোলাররা দুর্দান্ত করছেন। ১৩ ইনিংসে ১৯ উইকেট নিয়ে বোলারদের তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার রবি ফ্রাইলিঙ্ক। ফাইনালে ২টি উইকেট নিতে পারলেই আসরের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী হবেন তিনি। সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী হবার দৌঁড়ে আছেন খুলনার আরও দু’খেলোয়াড় পাকিস্তানের মোহাম্মদ আমির ও শহিদুল ইসলাম। আমির ও শহিদুল উভয়েরই শিকার ১৮ উইকেট। প্রথম কোয়ালিফাইয়ারে বল হাতে আগুন ঝড়িয়েছেন আমির। ৪ ওভারে ১৭ রানে ৬ উইকেট নিয়েছেন আমির। যা বিপিএলের ইতিহাসে সেরা বোলিং ফিগার।