ধানের দাম নেই, রবিসশ্যতেই ভরষা কৃষকের

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৮, ২০২০; সময়: ১:৪৬ অপরাহ্ণ |
ধানের দাম নেই, রবিসশ্যতেই ভরষা কৃষকের

আসাদুজ্জামান মিঠু : টানা কয়েক মৌসুম থেকে ধানের ন্যায মূল্য পাচ্ছেনা কৃষকেরা। তাই ধান চাষ করে লাভে মুখ দেখা তো দুরের কথা, উৎপাদন খরচ না তুলতে পারছেনা। যার কারণে কৃষকেরা লোকসানে রয়েছে কয়েক বছর ধরে। আবার অনেক বর্গা চাষীরা পথে বসে গেছে।

প্রতি বছর ধান উঠার আগে সরকারী ভাবে এক হাজার ৪০ টাকা প্রতিমণ দাম নির্ধারণ করে দিলেও সিন্ডিকেটের কারণে বাজারে এর প্রভাব পড়েনা। প্রতিমণ ৬০০ টাকা মধ্যেই লোকসানে ধান বিক্রি করতে হয় কৃষকদের ।

এমন অবস্থায় ধানের লোকসান কাটাতে নতুন নতুন আবাদে ঝুঁকছে কৃষকেরা। তবে বরেন্দ্র অঞ্চলে রবিশস্যতেই ভরষা করছেন কৃষকেরা।

রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলে বেড়েছে রবিশস্যের চাষ। চলতি বছর শুধু রাজশাহী জেলার মাঠেই ২৩ হাজার হেক্টর জমিতে বেড়েছে রবিশস্যের চাষ। এবারে রাজশাহী জেলায় এক লাখ ৬০ হাজার ৪৫৮ হেক্টর জমিতে রবিশস্যের চাষ হয়েছে।

বরেন্দ্র অঞ্চলে এক দশকের বেশি সময় ধরে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর আশঙ্কাজনকভাবে নীচে নেমে যাচ্ছে। এছাড়া ধান চাষ করে ন্যায মূল্য পাচ্ছেনা। একারণে কৃষি আসছে ব্যাপক পরিবর্তন। বরেন্দ্র অঞ্চলে ধানসহ সেচ নির্ভর চাষাবাদ কমেছে। অপরদিকে কম পানি সেচে চাষ করা,খরচ কম,ভাল বেশি এমন সম্ভব গম, ছোলা, আলু, মসুর,সরিষা, পেঁয়াজসহ অন্য রবিশস্যের চাষ বেড়েছে।

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রাসরণের অফিসের তথ্য অনুযায়ি, জেলায় কৃষি আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ এক লাখ ৮৮ হাজার হেক্টর। এর মধ্যে গত বছর রবিশস্য চাষাবাদ হয়েছিল এক লাখ ৩৭ হাজার ৪৫৮ হেক্টর জমিতে। চলতি বছর ২৩ হাজার হেক্টর রবি-শস্য বেড়ে চাষাবাদ হচ্ছে এক লাখ ৬০ হাজার ৪৫৮ হেক্টর জমিতে। এছাড়াও রাজশাহী অঞ্চলে, রাজশাহী, নাটোর, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা বেড়েছে কয়েক গুণ রবিশস্য চাষাবাদ।
তবে গমের আবাদ কমেছে। গত বছর গম ২৯ হাজার ৮০০ হেক্টর চাষাবাদ হলেও চলতি বছর ৫ হাজার হেক্টর কমে ২৪ হাজার ৮৪১ হেক্টর হয়েছে। এর পেছনে অন্যতম কারণ রোগবালাই ও ইঁদুরে অত্যাচার।

রাজশাহীর তানোর উপজেলা পাঁচন্দর মৌজার গভীর নলকূপ অপারেটর মাসুদ রানা জানান গত দুই বছর আগে তার গভীর নলকূপের আওতায় বোরো চাষ হয়েছিল ১৮০ বিঘা, রবি শস্য গম, সরিষা, পিঁয়াজ হয়েছিল ৬০ বিঘা। কিন্তু চলতি বছর তা বেড়ে গম, সরিষা চাষ হয়েছে ১৫০ বিঘা। বোরো চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেনা কৃষকেরা।

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার চান্দালায় গ্রামের এবছর প্রায় ৯০ ভাগ কৃষকেরা রবিসশ্য চাষ করেছেন। এর মধ্যে একজন তসিকুল ইসলাস।
তসিকুল ইসলাম বলেন,গত দুই বছর থেকে ধান চাষ করে দাম পাওয়া যাচ্ছেনা। কৃষকেরা অনেক ক্ষতিগস্থ হয়েছে। অনেক বর্গা চাষী পথে বসে গেছে। তাই গ্রামের বেশি ভাগ কৃষক ধান চাষ ছেড়ে,নানান সবজি ও রবিসশ্যতে ভরষা রাখছে। লাভ ও ভাল হচ্ছে।

শুধু গোদাগাড়ীর চান্দালায় গ্রামের কৃষকেরা নয়,কয়েক মৌসুম থেকে ধানে দাম নিম্নমূখি থাকায় বরেন্দ্র অঞ্চলের হাজার হাজার কৃষক লোকসানে পড়েছে। তাই ধান চাষ ছেড়ে সবজি ও রবিসশ্যতে ঝুঁকছেন বেশি।

তানোর উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শমসের আলী জানান, তানোরসহ বরেন্দ্র অঞ্চলজুড়ে পুরো ভু-গর্ভস্থ পানির স্তর আঙ্কাজনকভাবে নীচে নেমে যাচ্ছে। পানি উত্তোলনে নানা সমস্যায় চাষিরা কম সেচের আবাদে ঝুকছেন। এছাড়া ধানের ন্যায মূল্য পাচ্ছেনা। তাই সবজিসহ রবিশস্যতে একদিকে পানি খরচ কম, অন্য দিকে রবি শস্যতে লাভ বেশি হচ্ছে।

পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে